নিয়তির লিখনে সংসারের হাল ধরেছে ‘নিয়তি’

0
79

নিজস্ব সংবাদদাতা,পূর্ব মেদিনীপুরঃ

কথায় আছে “যে রাঁধে,সে চুলও বাঁধে”। লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন স্বামী। এই পরিস্থিতিতে অসহায় পরিবারকে তাই সাহারা দিতে টোটো চালকের ভূমিকায় পথে নেমেছেন স্ত্রী নিয়তি বর্মন। আর পাঁচ জনের থেকে একটু আলাদা জীবনযাপন।এমনই ছবি ধরা দিল নিউজ ফ্রন্টের ক্যামেরায়।

Lady driver | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমার থানার বরগোদার গোদা এলাকার বাসিন্দা নিয়তি দেবী। স্বামী অরুণ কুমার বর্মন পেশায় ভ্যান চালক। তিন মেয়ে ও শাশুড়ি মাকে নিয়ে ছোট্ট এক চিলতে কুঁড়ে বাড়িতেই অভাবের সংসার। তারপর আবার ভ্যানচালক মদ্যপ স্বামীর অত্যাচার কম কিছু ছিল না। স্বভাবতই দিন আনি দিন খাই সংসারে ঝামেলা ঝঞ্ঝাট লেগেই থাকত। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে হত নিয়তিকে। এরপর আবার লকডাউন, যা চরম বিপদ ডেকে আনে নন্দকুমারের এই বর্মন পরিবারে।

Niyati Burman | newsfront.co
নিয়তি বর্মন। নিজস্ব চিত্র

এমনিতেই বড় মেয়ে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। স্থানীয় একটি স্কুলে বাকি দুই মেয়ে ও নবম ও ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। কাজেই সংসারের হাল সামলে তিন মেয়ের পড়াশোনার খরচ সামলানো কম কিছু নয়। এমন অবস্থায় তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে টোটো চালকের কাজ নিয়েছেন নিয়তিদেবী।

আরও পড়ুনঃ মেদিনীপুরে করোনাজয়ীদের মহামারিতে সামিল করার উদ্যোগ

প্রতিদিনই তাই এখন ভোর থেকে উঠে সংসারের কাজ সামলানোর পর সাড়ে ছটায় টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়া। দুপুরে খাবার সময় একটু খেয়ে জিরিয়ে নেওয়া। তারপর আবার সেই টোটো নিয়েই সন্ধ্যা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহণ। ঠেকুয়া – পুরশাঘাট থেকে শুরু করে একেবারে তমলুক – নিমতৌড়ি জেলাশাসকের দফতর। এখন এই রুটিং -এ দাপিয়ে টোটো চালাচ্ছেন নিয়তি দেবী। আর তা থেকেই প্রতিদিন যা আয় হয়, তাতে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেন ও সংসারের খরচ চালান তিনি। সংসারের কথা ভেবে হাসিমুখেই তা মেনে নিয়েছেন নিয়তি বর্মন।

আরও পড়ুনঃ হাইকোর্টে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ, গ্রেফতার ৭

তিনি জানান, “অভাবের সংসার চালাতে অন্যের বাড়িতে কাজ নিয়েছিলাম পরিচারিকার। কিন্তু তাতেও সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বছর দুয়েক আগেই একমাত্র ভাগ্নেকে স্বনির্ভর করে তুলতে ব্যাংকে ঋণ নিয়ে নতুন একটি টোটো কেনা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই ভাগ্নে উত্তরপ্রদেশে নিজের বাড়িতে ফিরে যায় সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। অগত্যা তাই নিজেই ব্যাংকের ঋণ শোধ করার জন্য টোটো চালাতে শুরু করি। তাই আজ রোদ জলে পুড়ে কষ্ট হলেও ব্যাংকের ঋণ শোধ করে সংসার চালিয়ে অনেকটাই খুশিতে আছি।” তমলুকে জেলাশাসকের দফতরের পাশেই সাঁতরা কেবিনের ব্যবসায়ী চন্দন সাঁতরা।

তিনি বলেন, “অত্যন্ত মিশুকে স্বভাবের নিয়তি দেবী। পরনে আটপৌরে শাড়ি পরা ওই গ্রামের বধূকে দেখে প্রথমদিকে খুব আশ্চর্য লাগতো। কারণ এমনিতেই শহরের বুকে মহিলা টোটো চালকের ভূমিকায় তেমন কাউকে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। কিন্তু তারপরেও অনেকটা সাহসের সঙ্গেই এই পেশায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়া এবং জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলা সত্যিই বাহবার বিষয়।”

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here