সামাজিক অবস্থানে ভারতীয় মহিলাদের লকডাউন পিছিয়ে দিল কয়েক দশক, মত বিশেষজ্ঞদের

0
126

নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ

কোভিড ১৯ অর্থনৈতিক মন্দা ভারতীয় মহিলাদের সামাজিক অবস্থানকে পিছিয়ে দিতে পারে কয়েক দশক, মত বিশেষজ্ঞদের। দিল্লির মধ্যবিত্ত এলাকা লাজপত নগর, বছর বত্রিশের পুনিতা ধাওয়ান , একটি দর্জির দোকান খোলেন। কয়েকদিন যেতেই আশপাশের মহিলাদের নজরে আসে পুনিতার তৈরি করা পোশাকের অভিনবত্ব। একটা সময় আসে পুনিতা একা সব সামাল দিতে পারছিলেন না, আরও কয়েকজন মহিলাকে কাজে নিয়োগ করেন।

Self employed | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

আরও আশপাশের এলাকা থেকেও অর্ডার আসতে থাকে পুনিতার কাছে। তরুণ ব্যবসায়ী ঠিক করেন এই বছর নিজের বুটিক খুলবেন। পুনিতার সব স্বপ্নভঙ্গের শুরু ২৪ মার্চ ২০২০, যেদিন দেশে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা হল। দোকান বন্ধ, কবে খুলবে কেউ জানেনা। কোন পুরনো খরিদ্দারের আর দেখা নেই, পুনিতার জমানো টাকাও শেষ।

Self dependent | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

মুম্বাইয়ের ববিতা শর্মা, একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন এবং বাবা মা কে সঙ্গে নিয়ে থাকতেন। লকডাউন শুরু হলো, তিনিও কাজ হারালেন। উত্তর প্রদেশের গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হল পরিবারটি। এখন সেখানে চাষ আবাদে দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

Computer centre | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

ববিতা জানান, ” মহিলাদের জন্য জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। নিজের বিয়ে পিছিয়ে দিয়ে বয়স্ক বাবা-মাকে নিয়ে অন্য শহরে থেকে কাজ করছিলাম ভালোভাবে বাঁচতে চাই বলে। এই পরিস্থিতিতে আমার কোনও কাজ নেই, গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছি নিজেদের একটুকরো জমিতে যা সবজি হয় তাই বিক্রি করে দিন চলছে। আমার সব স্বপ্ন শেষ। ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অন্ধকারে।”

আরও পড়ুনঃ এত বছর তাঁবুতে দিন কেটেছে, এখন থেকে মন্দিরে থাকবেন রামলালাঃ মোদী

এই অবস্থা শুধু ববিতা বা পুনিতার নয়। দেশের হাজার হাজার মহিলা এই সমস্যার সম্মুখীন। ভারতবর্ষের মত দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই মহিলাদের অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। এদেশে লিঙ্গ বৈষম্য সবক্ষেত্রে, শিক্ষা, চাকরি, এবং পারিশ্রমিক সর্বত্র। তার মধ্যে এই অতিমারির মধ্যে কাজ হারানো এবং নতুন কাজ পাওয়া এই লড়াইকে আরো কঠিন করে তুলবে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ২০২০-র সারা পৃথিবীর লিঙ্গ বৈষম্য সূচকের হিসাবে ভারতের স্থান ১১২; ১৫৩ টি দেশের মধ্যে। যদিও এক্ষেত্রে কোভিড ১৯ অতিমারির পূর্বের সমস্ত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। আজও ভারতে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য এই দুই ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের হার সবচেয়ে বেশি। কর্মক্ষেত্রেও মহিলারা গড়ে ৩৫ শতাংশ কম টাকা পান একজন পুরুষের থেকে।

আরও পড়ুনঃ গুজরাটের করোনা হাসপাতালে বিধ্বংসী আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু ৮ রোগীর

২০১৬ আদমশুমারির তথ্য থেকে জানা যায় ১৩.৮ শতাংশ মহিলার নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে। যার বেশিরভাগই ক্ষুদ্র শিল্প এবং সেলফ ফাইন্যান্সড। এই ব্যবসাগুলি প্রধানত যেসব ক্ষেত্রে তা হলো শিক্ষা, পর্যটন এবং সৌন্দর্য ( বিউটি)। কোভিড ১৯ মহামারির ফলে এই ক্ষেত্রগুলি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, যা এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

প্রতি ১০ জনে ৪জন মহিলা এই কোভিড ১৯-এর সময়ে কাজ হারিয়েছেন। সারা দেশে সংখ্যার হিসেবে ১৭ লক্ষ মহিলা এই বছর মার্চ এবং এপ্রিলের মধ্যে কাজ হারিয়েছেন, সংগঠিত এবং অসংগঠিত দুটি ক্ষেত্রেই। অল ইন্ডিয়া প্রোগ্রেসিভ উওমেন এসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্রীমতী কবিতা কৃষ্ণান বলছেন, তাঁদের সমীক্ষা অনুযায়ী সব থেকে বেশি সংখ্যক মহিলা কাজ হারিয়েছেন অসংগঠিত ক্ষেত্রে। তাঁদের দীর্ঘ কয়েক বছর সময় লাগবে এই পরিস্থিতি থেকে নিজের স্বাভাবিক জীবন ও জীবিকায় ফিরতে।

মহিলাদের এমনিতেই অনেক সাংসারিক দায়িত্ব সামলে কাজে যেতে হয়, তার ওপর কর্মহীন হয়ে পড়ায় সে দায়িত্ব আরও বেড়েছে, সেখান থেকে স্বাভাবিক ভাবেই পুরনো জীবনে ফেরা অনেকটাই সময় সাপেক্ষ এবং দুরূহ।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here