শীতের জড়তা ভেঙে আজকের দিনে মুর্শিদাবাদের ঘুম ভেঙেছিল কান্নার আর্তনাদে

0
205

মনোদীপ ব্যানার্জী, মুর্শিদাবাদঃ

শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের আলসেমির গালে থাপ্পড় মেরে আর্তনাদের সকাল। ঠিক তিন বছর আগে ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনার স্মৃতি ভেবে আজও আঁতকে ওঠে জেলাবাসী।ভোর ৫ টা ৪৫ করিমপুর থেকে আট জন যাত্রী নিয়ে ছাড়ে সরকারি বাস। গন্তব্য বহরমপুর।

bus rescue | newsfront.co
বাস উদ্ধার ৷ ফাইল চিত্র

জলঙ্গি এবং ডোমকল থেকে ওঠেন আরও জনা পঞ্চাশেক যাত্রী। দিনটি ছিল সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন। যাত্রীদের বেশিরভাগই ছিল সরকারি কর্মচারী। বাড়িতে দুধের শিশুকে রেখে স্কুলে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন শিক্ষিকা যাদের আর পৌঁছানো হয়নি পড়ুয়াদের কাছে ৷ সন্তান আজও মায়ের বাড়ির ফেরার আশায় পথ চেয়ে। বীরভূমের মিত্রপুরের বাসিন্দা শিক্ষক, শুভব্রত মিত্র, মা মীনাক্ষী মিত্রকে নিয়ে মামারবাড়ি থেকে আর বাড়ি ফেরা হয়নি।

chief minister | newsfront.co
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী। ফাইল চিত্র

সকাল ৬টা ৫০ মিনিট বহরমপুর থেকে ১২ কিমি দূরে দৌলতাবাদ থানার অন্তর্গত বালির ঘাট ব্রিজের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডান দিকের রেলিং ভেঙে ৩০ ফুট নীচে পদ্মার শাখা বালি নদীতে পড়ে যায় বাসটি। শীতের জড়তা ভেঙে স্বজন হারানো চিৎকারে সেদিন ঘুম ভেঙেছিল মুর্শিদাবাদের।

accident | newsfront.co
চাঞ্চল্য ৷ ফাইল চিত্র

আড়াই বছরের সুরাইয়ার নিথর দেহর সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছে তার মা। তামান্না! যার দেহ লাশকাটা ঘরে কাটাছেঁড়ার পর দাফন করা হয়েছে কবরে। এক নিমিষে সেদিন শেষ হয়ে গিয়েছিল ৩৬ টি জীবন, যার মধ্যে দুইজন শিশুও ছিল। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী বাসটিতে মোট ৫৬ জন যাত্রী ছিল। ঘটনার ৪০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে সেদিন পৌঁছেছিল পুলিশ।

আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত টাকা আদায়, মারধরের অভিযোগ ফাঁসিদেওয়ায় টোল কর্মীদের বিরুদ্ধে

সে দিনের ভয়াবহ স্মৃতি জেলাবাসীর কাছে আজও টাটকা। স্থানীয়দের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই বিভীষিকাময় মুহূর্ত। খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে আসতে হয়েছিল এই ঘটনা পরিদর্শনে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ সেদিন বধির হয়ে গিয়েছিলো লাশ কাটা ঘরের সামনে স্বজন হারানো মানুষগুলোর কান্না শুনতে শুনতে।

দুর্ঘটনার দেড় বছর আগে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার তরফে এই বাসটিকে চালানোর জন্য বহরমপুর পুরসভাকে দেওয়া হয়। পুরসভা ফের একটি সংস্থাকে এই বাসটি চালানোর জন্য লীজ দেয়। দুর্ঘটনা নিয়ে যে কয়টি কারণ সেদিন অনুমান করা হয়েছিল তা হল- (১) ঘন কুয়াশার জন্য দৃশ্যমানতা কম থাকায় ঘটে এই দুর্ঘটনা। (২) রেষারেষি (৩) দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাস যাত্রীদের দাবি এক হাতে মোবাইল নিয়ে গাড়ি চালচ্ছিল চালক।

আরও পড়ুনঃ কোলাঘাটে মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য

কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল আজও কিন্তু মাতৃহারা শিশু, স্বামী আজও পথ চেয়ে বসে আছে। সরকার ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রচার চলছে কিন্তু সত্যিই কী কমেছে দুর্ঘটনা? আজও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলছে নিত্য যাতায়ত।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here