স্মরণে ২৪ জুলাই

0
233

নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ

আজ ২৪ জুলাই। মহানায়কের ৪০ তম প্রয়াণদিবস। ১৯৮০ সালে আজকের দিনে গোটা টলিউড, পরিবার তথা বাঙালিকে কাঁদিয়ে চিরতরে বিদায় নিয়েছিলেন উত্তম কুমার। সময়ের তরণী বেয়ে মানুষের চিন্তাভাবনা, জীবনযাপনে, রুচিতে পরিবর্তন এলেও মহানায়কের প্রতি ভালোবাসায় এতটুকু ঘাটতি হয়নি আপামর বাঙালির। আজকের প্রজন্মের কাছেও তিনি রোম্যান্টিক হিরো।

Uttam Kumar | newsfront.co

মহানায়কের প্রেমিক ইমেজ, রোম্যান্টিক ইমেজ, রসবোধ তাঁকে করে তুলেছিল ভার্সেটাইল। আর তার জোরেই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। খুব সহজে এত সাফল্য আসেনি তাঁর। মহানায়কের আসল নাম অরুণ চট্টোপাধ্যায়। অরুণ থেকে উত্তম হওয়ার জার্নির পথটাও মসৃণ ছিল না এতটুকু। কেরিয়ারের শুরুতে একের পর এক ছবি ফ্লপ হয় উত্তমের। একটা সময়ে তাঁকে স্টুডিও পাড়ায় ডাকা হত ‘ফ্লপ মাস্টার’। তবে, বেশিদিন নয়। চিত্রটা পাল্টে গিয়েছিল কদিনের মধ্যেই।

Uttam Kumar | newsfront.co

মহানায়কের সঙ্গে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন অভিনেতা চিণ্ময় রায়। তাঁর জীবদ্দশায় একবার দেখা করার সুযোগ মিলেছিল। মহানায়ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন- “পর্দায় প্রথম যখন অভিনয় শুরু করি তখন পরিচালক তপন সিনহার সঙ্গেই বেশি কাজ করতাম। মহানায়কের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ তখনও জোটেনি। এরপর দিলীপ কুমার, বৈজয়ন্তীমালা, সায়রা বানু, রবি ঘোষ, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়—একে একে সকলের সঙ্গেই কম বেশি অভিনয় করা হয়ে গিয়েছিল।

Uttam Kumar | newsfront.co

কিন্তু ওই মানুষটার নাগাল আর পাচ্ছিলাম না। মনে মনে ভাবতাম আফশোসও করতাম যে কেউ কি আমায় কোনওদিন ওঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দেবে না? সুযোগ এল অবশেষে। সেটা দিলেন সত্যজিৎ রায়। ছবির নাম ‘চিড়িয়াখানা’। জনপ্রিয় একটি ছবি। ভাবতে পারছিলাম না একদিকে সত্যজিৎ রায়ের মতো এমন একজন পরিচালক, আরেকদিকে আমি, অন্যদিকে জ্বলজ্বল করছেন মহানায়ক উত্তম কুমার! উত্তম কুমার আছে শুনে আনন্দ যেমন পেয়েছিলাম, তেমনই ভয় পেয়েছিলাম- আমার অভিনয় মহানায়কের ভাল লাগবে তো? নাকি প্রথম শট দেখেই বলে দেবেন— “একে কোত্থেকে জোগাড় করলে?” বরাতজোরে উতরে গিয়েছিলাম সেদিন।

আমার প্রথম শট দেখেই উত্তম কুমার বলেছিলেন-“এই রোগা ছেলেটা এদিকে শোন”। এক সেকেণ্ডের জন্য তড়িৎপ্রবাহ ঘটে গিয়েছিল আমার মধ্য দিয়ে। বললেন—“খুব ভাল শট দিয়েছিস। চালিয়ে যা। তোর হবে।” সেই যে রোগা ছেলে বলে ডাকলেন যতদিন বেঁচেছিলেন আর কোনওদিন আমাকে চিনু বা চিণ্ময় বলে ডাকেননি।”

Chinmoy Ray | newsfront.co

চিণ্ময় রায় আরও জানান- “প্রবল খাদ্যরসিক ছিলেন উত্তম’দা। আমাদের মধ্যে যখন যাকে পেতেন তাকে ডেকে নিয়েই খেতেন। একা খেতেন না। একবার বেণু’দি চিংড়ি মাছের মালাইকারি করে এনেছেন। আর আমার পাতে তুলে দিয়েছেন সবথেকে বড়টা। সেটা দেখে দাদা বললেন, আরে ওই বড় সাইজটাই ওকে দিতে হল তোমার। ওটা তো আমি তাক করেছিলাম। এত বড় মাছটা ও পারবে খেতে? ওই তো চেহারা! প্রথমটায় আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম, বেণু দি’ও আমার কাছে লজ্জিত অনুভব করছিলেন। মিনিট দুয়েক পর দাদা হা হা হা করে হেসে ফেললেন।

বললেন-“ তোরা কি ঠাট্টাও বুঝিস না রে? নে খা খা।”… আমরাও বুঝলাম ওটা ঠাট্টা ছিল। নিজে যেমন খেতে ভালবাসতেন তেমনই অন্যকে খাইয়ে আনন্দ পেতেন। অন্যজন খেয়ে মজা পাচ্ছে এটা দেখে বেশি খুশি হতেন। ওঁর সঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়ার সুযোগ আমি একবার নয়, অনেকবার পেয়েছি। শুনেছি ওঁর বাড়িতেও নাকি খাওয়াদাওয়ায় নবাবিয়ানা ছিল। সেটা উপভোগ করার সুযোগ আমার হয়নি। আসলে আমি নিজেও হুটহাট কারোর বাড়িতে গিয়ে পাত পাড়তে পারি না। তার উপরে আবার উত্তমকুমার। একটু তো আপ অ্যান্ড ডাউন ডিসট্যান্স ছিলই। আর আমি সেটা মেনটেন করতাম”।

আরও পড়ুনঃ কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী অমলা শঙ্করের জীবনাবসান

Ratna Ghosal | newsfront.co
রত্না ঘোষাল

অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল জানিয়েছিলেন- ” অত বড় মাপের শিল্পী ফ্লোরে সহ অভিনেতাদের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করতেন মনে হত যেন।কত দিনের চেনা কিংবা আপন কোনও আত্মীয়। একবার তো আমার শাড়িও ঠিক করে দিয়েছিলেন দাদা।”…

এমন মানুষকে ইন্ডাস্ট্রি তো বটেই বাঙালিও ভুলতে পারেনি। তিনি আজও সকলের কাছে সেই চলমান মহানায়ক। আজ তাঁর প্রয়াণদিবসে নিউজ ফ্রন্ট-এর তরফ থেকে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here