পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ
বছর চারেক ধরে রোগ সারছে না সেই কারনে ডাইনি সন্দেহে এক পরিবারকে ঘর ছাড়া করার অভিযোগ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। গুণিন তাদের জানিয়ে দেয় প্রতিবেশী গৃহবধূ ডাইনি।সেই নিদান পেয়েই এক পরিবারকে মারধর করে ঘর ছাড়া করার অভিযোগ উঠল গ্রামের কয়েকজনের বিরুদ্ধে।আতঙ্কে রয়েছেন তাদেরই নিকট আত্মীয় এক বৃদ্ধাও। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের রামপুরহাট থানার শোঁয়াসা গ্রামে। জানা গিয়েছে, রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের কাষ্ঠগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শোঁয়াসা গ্রামের পূর্বপাড়ায় বসবাস করেন সিদ্ধার্থ লেট।
পেশায় ট্রেনের হকার সিদ্ধার্থ বছর আটেক আগে একই থানার কৌড়বেলিয়া গ্রামের নয়নমণি লেটকে বিয়ে করেন। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে ছিল তাদের সুখের সংসার।কিন্তু প্রতিবেশী যুবক সঞ্জয় লেট ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধর করায় ঘর ছেড়ে মামী শাশুড়ির বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাদের।এমনকি গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।ডাইনি অপবাদ দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে গৃহবধূর মামী শাশুড়ি দুর্গাদাসী লেটকেও। সকলে এখন মামী শাশুড়ির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সিদ্ধার্থ বলেন,“দিন কয়েক আগে সঞ্জয়রা গুণিনের কাছে যায়। গুণিন তাদের জানিয়ে দেয় আমার স্ত্রী নয়নমণি লেট ডাইনি। আর আমার মামী দুর্গাদাসী তার গুরু। এরপর বুধবার রাতে ‘ভর’ আসে সঞ্জয়ের। সেই ভরের মধ্যে সঞ্জয় বলে তার শরীরে ‘নয়নি’ (নয়নমণি লেট) ঢুকেছে।তাকে আমার স্ত্রী চুষে চুষে খাচ্ছে।
পরদিন সকালে উঠে সঞ্জয় ও তার বাড়ির লোকজন আমার স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে মারে। আমার মামীকেও মারতে যায়।ভয়ে আমরা ঘর ছেড়ে মামীর ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। রামপুরহাট থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে।কিন্তু এখনো পুলিশ গ্রামে আসেনি”। নয়নমণি লেট বলেন, “দিন কয়েক আগে আমার অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন হয়েছে। নার্সিং হোম থেকে ছাড়া পেয়ে বাপের বাড়িতে ছিলাম। দুদিন রদিপুর গ্রামে মাসির বাড়িতে থেকে দিন পাঁচেক আগে শ্বশুর বাড়িতে এসেছি।তাহলে আমি ওর শরীরে ঢুকলাম কিভাবে?বৃহস্পতিবার সকালে চুলের মুঠি ধরে ওরা আমাকে মেরেছে। হুমকি দিচ্ছে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে দেবে।ভয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে এসেছি”। যদিও এদিন সঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়ে তার দেখা পাওয়া যায়নি।তার স্ত্রী মিনু লেটের দাবি, নয়নমণি লেট ডাইনি। সেই তার স্বামীর শরীরে ঢুকে রোগ ভালো হতে দিচ্ছে না।তিনি
বলেন,“চার বছর ধরে স্বামী অসুস্থ।বহু ডাক্তার দেখিয়ে,ওষুধ খেয়েও কোন লাভ হয়নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে গুণিনের কাছে গিয়েছিলাম।তিনিই জানিয়ে দেন নয়নমণি ডাইনি।তাছাড়া স্বামীর যখন ভর ওঠে তখন বার বার নয়নির নাম করেছে।সেখান থেকেই আমাদের কাছে বিষয় পরিষ্কার।তবে আমরা কেউ মারিনি।আমার স্বামীই ভর গায়ে ওদের বাড়ি গিয়েছিল।ভর ছাড়াতে স্বামীকে ঝাঁটার বারিও মেরেছি।তখনও সেই নয়নির নাম করছে।”গ্রামের একাংশ এই কুসংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন।তবে বিজ্ঞান মঞ্চের বীরভূম জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হিমাদ্রি শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,“ডাইনি, ভূত, প্রেত বলে কিছু হয় না। একশ্রেণির মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে কাউকে কাউকে ডাইনি অপবাদ লাগিয়ে গ্রাম ছাড়া করে,কিংবা পিটিয়ে মারে।আক্রোশ মেটাতে গ্রামবাসীদের লেলিয়ে দেয়।আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি”।
আরও পড়ুনঃ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে চক্ষু পরীক্ষা শিবির শালবনিতে
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584