উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
শুক্রবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। তার আগে একেবারে শেষবেলায় বুধবার বিকেলে বিজেপির জ্যাকপট আসন খড়্গপুর সদর আসনে প্রার্থী হলেন অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি সুপারডুপার হিট ছবি জ্যাকপট ছবির নায়ক ও বটে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নামখানায় অমিত শাহের জনসভায় বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন একদা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এই অভিনেতা। প্রথম দু’দফার ৬০ আসনের মধ্যে শুধু ময়নায় রাজনীতির দলের বাইরের লোক হিসেবে প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক দিন্ডার নাম ঘোষণা করেছিল বিজেপি। এ বার সেই তালিকায় নাম ঢুকল হিরণের।
আরও পড়ুনঃ নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
একে একে ৫৮ আসনের প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেলেও বিজেপি নীরব ছিল খড়্গপুর সদর ও বড়জোড়ার প্রার্থীর নাম নিয়ে। তা নিয়ে দলের অন্দরে-বাইরে তৈরি হয় নানা জল্পনা। তবে বেশি আলোচনায় ছিল খড়্গপুর সদর। দলের মধ্যেই জল্পনা তৈরি হয়, খড়্গপুর সদরে প্রাক্তন বিধায়ক তথা দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকেই কি টিকিট দেবেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব! এমনও শোনা যাচ্ছিল যে, ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হতে পারে খড়্গপুর পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর দেবাশিস চৌধুরী ওরফে মুনমুনকে।
যিনি গত শনিবারই জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক পদ ছেড়েছেন। তবে মুনমুন এখনও তৃণমূল ছাড়েননি এবং বিজেপি-তে যোগ দেননি। তবুও তিনি জল্পনার কেন্দ্রে ছিলেন। ওই আসনের প্রার্থী নিয়ে আর কোনও জল্পনা রইল না। ওই আসন নিয়ে নানা জল্পনার মধ্যে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয় বিজেপি কেন দিলীপকে পুরোনো কেন্দ্রে প্রার্থী করল না? দুহাজার ষোল সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই রাজনীতিতে যোগ দেন দিলীপ ঘোষ । পরে বিজেপি-র সভাপতি হন।
আরও পড়ুনঃ মমতার মনোনয়নের আগে নন্দীগ্রামে রোড-শো শুভেন্দুর
আদতে আরএসএসের প্রচারক দিলীপ ঘোষ খড়্গপুর সদর থেকে দলের টিকিটে লড়াই করে আশাতীত জয়ও পান। সেবার ছ’বারের কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহনপালকে হারিয়ে দেওয়া দিলীপ আবার দুহাজার উনিশ সালে মেদিনীপুর থেকে সাংসদ হন। সেই বছরই খড়্গপুর সদরে উপনির্বাচনে পরাজিত হন দিলীপ-ঘনিষ্ঠ প্রেমচন্দ্র ঝা। কিন্তু দলের পক্ষে সেই উপনির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
সেই শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করায়, শেষ মুহূর্তে দিলীপ ঘোষ কেই প্রার্থী করা হবে বলে যাঁরা আশায় ছিলেন সেই দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা হতাশ। দিলীপ অবশ্য আগেই বলেছেন, তিনি কোনও দাবিই জানাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনেও আমি দাঁড়াতে চাইনি। দল বলেছিল, শীর্ষনেতৃত্বকেও লড়াইয়ে থাকতে হবে। সেই কারণেই রাজ্য কমিটির আরও অনেকের মতো আমিও প্রার্থী হয়েছিলাম। আর এ বার আমিও যেমন প্রার্থী হতে চাইনি, তেমনই কেন্দ্রীয় নেতারাও আমার কাছে এই ব্যাপারে কিছু জানতে চাননি।
দল যা ঠিক করবে তাই হবে।’’ তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন দিলীপ প্রার্থী না হওয়ায় দল ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার থাকতে পারবেন না দিলীপ। তবে পরে কোনও আসন থেকে জিতে আসতেই পারেন তিনি। কিন্তু কঠিন আসন নন্দীগ্রাম থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারী জিতে গেলে আবার তাঁর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। তা ছাড়া এখন দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী করা না হওয়ায় তিনি যে মুখ্যমন্ত্রী হলেও হতে পারেন সেই বার্তাও যাবে না।
আরও পড়ুনঃ ভোটের মুখে অপসারিত রাজ্য পুলিশের ডিজি
তবে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য, ‘‘এত কিছু এখন থেকে ভাবার কোনও কারণ নেই। দল সময় নিয়েছে ওই আসন থেকে জেতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি কার, সেটা যাচাই করার জন্য।’’ তিনি এ-ও মানছেন যে, খড়্গপুর সদরের প্রার্থী কে হবে, তা নিয়ে যতগুলি সমীক্ষা হয়েছে তার সব কটি জানিয়েছিল দিলীপ ঘোষ ই এই আসনে শ্রেষ্ঠ।
অন্যদিকে এবার বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীদের হয়ে প্রচারের জন্য চল্লিশ জনের একটি প্যানেল করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই তালিকার ওপরেদিকে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, জেপি নাড্ডা, রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নীতিন গডগড়ি , বাবুল সুপ্রিয়, আদিত্য নাথ, অভিনেতা মিঠুন,হিরণ, অভিনেত্রী শ্রাবন্তী, পায়েল তো থাকছেনই। এই তালিকায় থাকছেন দিলীপ ঘোষ , মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী রয়েছেন বলে খবর।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584