উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
দলিত ও আদিবাসী ইস্যুতে এখন যুযুধান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও লোকসভার কংগ্রেস পরিষদীয় নেতা অধীর চৌধুরি। এই নিয়ে বিজেপি বনাম কংগ্রেস লড়াই ও বাকযুদ্ধ জমে উঠেছে। এই যুদ্ধে কেউ কাউকে এক চিলতে জমি ছাড়তে নারাজ দু’পক্ষই।
বৃহস্পতিবার জঙ্গলমহলের এক প্রত্যন্ত গ্রামে এক আদিবাসীর বাড়িতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মধ্যাহ্নভোজন করেন। তাই নিয়ে অমিত শাহকে অধীর চৌধুরি কটাক্ষ করতে ছাড়েননি।
পাশাপাশি আদিবাসী ও দলিত ভোজন নিয়ে বৃহস্পতিবার বিধানভবনের সামনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির নেতৃত্বে সত্যাগ্রহ কর্মসূচি পালন করল কংগ্রেস। অধীর চৌধুরি দাবি করেছে, বিজেপির এই দলিত ও আদিবাসী ভোজন সবটাই লোক দেখানো।
আরও পড়ুনঃ প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাশে থাকেনি শাহ! গীতাকে চাকরির নিয়োগপত্র দিল রাজ্য সরকার
বছর ঘুরলেই বিধানসভা ভোট। একুশের বিধানসভা ভোটে বাংলা বিজয়ের লক্ষ্য বিজেপির। আর সেই লক্ষ্য়ে বিজেপির অন্যতম টার্গেট আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক।
আদিবাসী ভোট নিজের ঘরে টানার লক্ষ্যে চেষ্টায় কোনও কসুর করছে না বিজেপি। এর শুরুটা অবশ্য হয়ে গিয়েছিল ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে থেকেই। বিভিন্ন আদিবাসী মহল্লায় যাওয়া, সেখানে আদিবাসী বাড়িতে বসে খাওয়াদাওয়া করা, তাঁদের সঙ্গে অমিত শাহ সহ বিজেপি নেতাদের সময় কাটানোর বিভিন্ন ছবি উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে।
এবারও বিধানসভা ভোটের আগে আদিবাসী জনসংযোগে জোর দিচ্ছে বিজেপি। আজই বাঁকুড়ায় এসেছেন অমিত শাহ। আদিবাসী নেতা বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে মাল্যদান করেন তিনি। দুপুরে জঙ্গলমহলের এক আদিবাসী বাড়িতেই মধ্যাহ্নভোজন করেন তিনি।
এভাবে একদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন বিজেপিকে ‘আদিবাসীদের অভিভাবক’ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন, ঠিক তখনই দলিত উৎপীড়ন ইস্যুতে গেরুয়া শিবিরকে কাঠগড়ায় তুলে অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে পাল্টা আন্দোলনে নেমেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলিত উৎপীড়নকে সামনে রেখে আজ বিধানভবনের সামনে দিনভর টানা ধরনা, অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হবেন কংগ্রেস নেতারা।
আরও পড়ুনঃ সোনার বাংলার স্বপ্ন প্রচার শাহের
অধীর চৌধুরীর নেতৃত্ব এই আন্দোলন-প্রতিবাদ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সত্যাগ্রহ’। কংগ্রেস দাবি করেছে, বিজেপির এই ‘আদিবাসী প্রেম’ সবটাই ভোটের চাল। এর আগে অমিত শাহ এসে যেখানে যেখানে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন, আদৌ তিনি তাঁদের খবর রাখেন কিনা, প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। আদিবাসীদের উন্নয়নে কংগ্রেস কী কী করেছে, রাজ্য় থেকে কেন্দ্রীয় স্তরে এখন সেসব তুলে ধরছেন হাত শিবির।
প্রসঙ্গত, গতকাল কংগ্রেসের জোটসঙ্গী সিপিআইএম-এর বর্ষীয়ান সুজন চক্রবর্তীও আদিবাসীর বাড়িতে অমিত শাহের মধ্যাহ্নভোজকে ‘রাজনৈতিক স্টান্ট’ বলেন।
তাঁর বক্তব্য ছিল, “দলিত-আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য স্টান্টবাজি করলে চলে না। নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখা হয়েছে। তাই দলিতদের বাড়িতে বসে খাওয়াদাওয়া করছেন। কিন্তু এভাবে কী পাশে থাকা হয়? মানুষের কষ্ট, মানুষের কথা ওরা বোঝে না। মানুষের কথা বলে শুধু বাম, কংগ্রেস-ই।”
উল্লেখ্য, আজ কংগ্রেসের ‘সত্যাগ্রহে’ বাম নেতাদেরও দেখা মিলতে পারে। সবমিলিয়ে আদিবাসী ইস্যুতে কেউ কাউকে যে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও নারাজ, তা এককথায় স্পষ্ট।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584