পিয়ালী দাস,বীরভূমঃ
অমিত শাহর সভা থেকে মুখ ফেরালো প্রশাসন, অগত্যা নিজেদের কর্মীর জমিই ভরসা জেলা বিজেপির।সেই জমিই আজ পরিদর্শন করে দেখলেন ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্যের অন্যতম মুখ মুকুল রায়।
আগামী ২৩ শে জানুয়ারি বীরভূমে আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। সেদিন তিনি বীরভূমের সদর শহর সিউড়িতে একটি জনসভা করবেন।সেই মতো সিউড়ি শহর লাগোয়া কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পাইপলাইনের একটি মাঠে জনসভার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে কর্মী-সমর্থকরা। গতকাল সেই মাঠ পরিদর্শন করে গেছেন রাজ্য নেতৃত্বরা।সভায় যেন কোন রকম কোনো খামতি না থাকে সেজন্য আবারও আজ সেই মাঠ পরিদর্শন করে গেলেন মুকুল রায়।
কিন্তু শহর ছেড়ে হঠাৎ পাইপ লাইনের মাঠে কেন জনসভা করতে হবে এই প্রশ্ন বারবার উঠছে সাধারণ মানুষের মনে?
বিজেপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে,গত শুক্রবার অর্থাৎ ১৮ই জানুয়ারি বিজেপি দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে সিউড়ি শহরের জেলা স্কুল ময়দান অথবা চাঁদমারি ময়দানের মধ্যে যে কোন একটিতে জনসভা করার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল কিন্তু প্রশাসন কোন মাঠ দিতে রাজি হয়নি।জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, একটি অনুষ্ঠানের জন্য আগে থেকেই জেলা স্কুল ময়দান বুকিং করা আছে,অন্যদিকে প্রতি বছর ২৬ শে জানুয়ারি চাঁদমারি ময়দানে পুলিশের পক্ষ থেকে প্যারেড হয়।এই কারণে ওই দুটি মাঠ দেওয়া সম্ভব নয়।যদিও প্রশাসনের দাবিকে নিছকই অজুহাত বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্বরা।বিজেপি নেতাদের মতে,তাদের জনসভা বানচাল করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে মাঠের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে বিজেপির বীরভূম জেলার সাধারণ সম্পাদক কালো সোনা মন্ডলের নিজের জমিতে জনসভার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিজেপি জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন,”গত শুক্রবার আমরা মাঠের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমতি চাইতে গেছিলাম। আমরা জেলা স্কুল মাঠ অথবা চাঁদমারি মাঠের মধ্যে যে কোনো একটি দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম কিন্তু জেলা প্রশাসন নানান অজুহাতে অনুমোদন দিতে অস্বীকার করে।তাই বাধ্য হয়ে কালোসোনা মন্ডলের জায়গাতে জনসভার প্রস্তুতি নিচ্ছি।” যদিও বিজেপির মাঠ বিতর্ককে পাত্তা দিতে নারাজ শাসক দল। তৃণমুলের বীরভূম জেলার সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় জানান, “মাঠ কেন দেওয়া হয় নি সেটা প্রশাসনের ব্যাপার।কেউ যদি ব্যক্তিগত ভাবে জায়গা দেয় সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। গতকালের ব্রিগেড সমাবেশ দেখে বিজেপির চক্ষু চড়ক গাছ।তাই অমিত শাহ বীরভূম তো আসতেই চাইছেন না,সভার জন্য মাঠ নেওয়া তো দূরের কথা।”
শুধু মাঠের জন্য নয়, কর্মীদের আসার জন্য প্রয়োজনীয় বাসের ব্যবস্থা করতেও যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিজেপি নেতাদের। বিজেপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে,জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী সমর্থকদের আসার জন্য দরকার বেশ কিছু বাস কিন্তু জেলার অধিকাংশ বাস মালিকরা বিজেপির জনসভার জন্য বাস দিতে নারাজ।তাই বাসের জন্য প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের উপর ভরসা করতে হচ্ছে জেলা বিজেপিকে।বিজেপি জেলা সভাপতি জানান, “আমাদের কোনো বাস মালিক বাস দিতে চাইছে না।সভা বানচালের করার জন্য এটা মূলত তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশল।আমরা বাধ্য হয়ে ঝাড়খণ্ডে আমাদের যে সব বাস মালিক ইউনিয়ন আছে তাদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।” যদিও তৃনমুল বিজেপির এই দাবি মানতে নারাজ। তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবী করা হয়েছে যে তৃণমূল এই রকম নোংড়া রাজনীতি করে না।
রাজনৈতিক সভা করার জন্য মাঠের অনুমোদন না দেওয়ার অভিযোগ বিজেপির দীর্ঘদিনের। পূর্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীরভূমের রামপুরহাটে দিলীপ ঘোষের জনসভার জন্য মাঠের অনুমোদন দেওয়া হয় নি তাই বাধ্য হয়ে কেন্দ্র সরকারের অধীনস্ত রেলের মাঠে জনসভা করতে হয়েছিল।একই নিয়ম বহাল থাকল অমিত শাহের ক্ষেত্রেও।এবার শুধু মাঠ নয় পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বদের।
আজ আবারও মুকুল রায় মাঠ পরিদর্শন করতে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ” ঝড় হোক, জল হোক যাই হোক আগামী ২৩ তারিখ সিউড়িতে অমিত শাহজির সভা হবেই।এই মাঠেই হবে এবং লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ হবে এই মাঠে।পশ্চিমবঙ্গ এমন একটা রাজ্য যে রাজ্যে কোন গণতন্ত্র নেই।সিউড়িতে সভা হবে আর সেখানে একটাও মাঠ পাওয়া যাবে না?এমন ঘটনা তো অন্য কোন রাজ্যে হয় না।আর যে রাজ্যে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই, সেখানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হেসে বলেন ভারতের গণতন্ত্র রক্ষা করবেন।ভারতবর্ষে তো গণতন্ত্র আছে গণতন্ত্র নেই তো পশ্চিম বাংলায়।”
অনুব্রত মণ্ডলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “উন্নয়ন এতটাই হয়েছে যে রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকছে, ঘরে ঢুকছে না।উন্নয়নের মোকাবিলা করবে সাধারণ মানুষ।”এদিকে ২৩শে জানুয়ারী অমিত শাহর সভা বানচালের আশঙ্কায় বিজেপি, পাল্টা অনুব্রত মন্ডল জানান ২৩শে জানুয়ারি যেখানে খুশী সভা করুক বিজেপি তাতে আমার কিছুই হবে না, বিজেপির অভিযোগ এবারও তৃণমূল লাভপুরের সভার মতো এবারেও সিউড়ীতে মাঠে জল ঢেলে সভা বানচাল করার ছক কষেছে,পাল্টা অনুব্রত কটাক্ষ বলেন “অতই যদি ভয় তাহলে আমার বাড়ির ছাদে অমিত শাহ সভা করুক।”
আরও পড়ুনঃ দলীয় মিটিং চলাকালীন বিজেপি কর্মীদের ওপর হামলা
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584