প্রত্যয় চৌধুরী, ওয়েবডেস্কঃ
‘ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে’–প্রচলিত এই বাংলা প্রবাদ বাঙালির সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাঙালির এই সহজাত প্রতিভার স্ফুরণ, জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-এ বহুল ভাবে দেখা গেলেও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দেখা গেল ‘স্বপ্নসাঝি’ নামক ফেসবুক গ্রুপের।
এই গ্রুপের সদস্যরা একদিকে যেমন বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকেন তেমনই বাংলা গল্প সাহিত্যের অবহেলিত একটি ফর্ম ‘অণুগল্প’ নিয়ে চর্চা করতে করতে আস্ত একটি বইপ্রকাশ করে ফেলেছেন। মূলত গ্রুপের সদস্যরাই এই বইয়ের গল্পকার।
আনন্দ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘অণুবীক্ষণ’ নামক গল্প সংকলনে কলম ধরছেন ৮৭ জন গল্প লেখক লেখিকা। বাংলা সাহিত্যে মূলত বনফুলের হাত ধরেই অণুগল্পের প্রসার ঘটে। তাঁকেই বাংলা গল্প সাহিত্যের নবতর এই ফর্মের পথিকৃৎ বলা যায়।
‘অণুগল্প’ একটি শাণিত শরের নাম; যার একমাত্র উদ্দেশ্য লক্ষ্যভেদ। অণুগল্পের প্রতিটি শব্দ-বাক্য এমনকী যতি চিহ্ন পর্যন্ত একেকটি অগ্নিকণার ভূমিকা পালন করে। অণুগল্প অত্যন্ত সুনিয়ন্ত্রিত। এর আকার, অবস্থান, বোধ, ঘনত্ব তথা সার্বিক পরিবেশ বাষ্পীয় মনে হলেও অস্তিত্বমান।
আরও পড়ুনঃ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পেশ
সাহিত্যের অন্যান্য শাখার এক ধরনের সংজ্ঞা পাওয়া গেলেও অণুগল্পকে ঠিক সংজ্ঞায়িত করা যায়নি। এ যেন এক মায়াবী ব্যাপার, কিছুটা কুয়াশাচ্ছন্ন আলো-আঁধারির খেলা। স্বপ্নের মতো ঘোর লেগে যায় অণুগল্প নিয়ে ভাবতে গেলে। মূলত অণুগল্প এক শক্তিশালী বোধ এবং চিরন্তন প্রজ্ঞার সারসংক্ষেপ।
‘অণুবীক্ষণ’ গল্প সংকলনের বেশ কিছু গল্প সেই বোধ এবং চিরন্তন প্রজ্ঞার সারসংক্ষেপ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গল্পগুলি হল অন্তরা বিশ্বাসের ‘ক্ষমাহীন প্রতারণা’, মনিকা বিশ্বাস সরকারের ‘ফেরে’, অনামিকাদের ‘চন্দন কাঠ’, তন্ময় গুপ্তর ‘অমিত পেল লটারি’।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি গল্প সত্যিই সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে হয়ে উঠেছে শানিত শর। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাখি সাহার ‘মেয়েবেলা’, প্রসাদ সিং-র ‘বোবা শিক্ষা’, কল্যাণ রাজের ‘হঠাৎ দেখা’, সুফিয়া নাসরিনের ‘কনকাঞ্জলি’, নন্দিনী রায়ের ‘রাজনীতি’, অমিতাভ করের ‘অন্ধকার যন্ত্রণা’।
আরও পড়ুনঃ সিএএ-কে ‘আভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে দেখে সমালোচনা থেকে মুক্ত হতে চায় ভারত
যে কোনও শিল্প মাধ্যমের বিষয়বস্তুর সঙ্গে আঙ্গিকের সাযুজ্য করা রচয়িতার দায়িত্ব। এই সংকলনের কিছু কিছু গল্পের ক্ষেত্রের সেই সাযুজ্য রক্ষিত হয়নি। সংকলনের গল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই দিকটা মাথায় রাখলে এই সংকলন আরও সমৃদ্ধ হতো বলেই মনে হয়। প্রীতম ঘোষের প্রচ্ছদটি আকর্ষণীয়। তবে প্রুফ সংশোধনে আরও বেশি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন ছিল। গল্প সাহিত্য সংকলনে বানান সচেতনতা খুবই প্রয়োজনীয়।
সামগ্রিকতা থেকে বিচার করে বাংলা গল্পসাহিত্যের এই নবমাধ্যম নিয়ে এতোজন গল্পকার কাজ করেছেন যা সত্যিই অভাবনীয়। বিভিন্ন পেশার এতোজন লেখক-লেখিকা বাংলা গল্প সাহিত্য নিয়ে চর্চা করছেন যা ক্রমক্ষীয়মান গদ্যচর্চার ক্ষেত্রে নবদিগন্তের উন্মোচন বলে উল্লেখ করাই যায়। আগামী দিনে এই চর্চা বাংলা সাহিত্যকে পথ দেখাবে এই আশা করা যায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584