প্রতিমা গড়ে চলেছে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত অর্পণ

0
528

সিমা পুরকাইত,দক্ষিন ২৪ পরগনাঃ

নিজস্ব চিত্র

একুশ বছরের অর্পন সর্দার।ব্লাড ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত।জীবনকে বাজি রেখে প্রতিমা করে চলেছে যুবক অর্পণ সর্দার।তার স্বপ্ন শিল্পী হওয়া ।লক্ষ্য প্রতিমা গড়ে অ্যাওয়ার্ড পাওয়া।ক্যান্সারের মতন মারন রোগে আক্রান্ত অর্পন তবু আজও রয়েছে এই শিল্পীর প্রতিমা গড়ার শক।

অর্পণের বানানো মূর্তি।নিজস্ব চিত্র

দক্ষিণ ২৪ পরগনা বজবজ থানার বুঁইতা দাস পাড়ার বাসিন্দা অর্পণ।বাবা মার দুই সন্তানের মধ্যে বড় অর্পন।তার এক ছোট বোন রয়েছে।বড় বলে বাবা মায়ের কাছে আদরের সে।সালটা ২০১২ খড়িবেড়িয়ার বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেনীতে পড়ত।শরীর রোগজীর্ণ।

খাওয়া দাওয়া ক্ষিন হয়ে পরেছে।ডাক্তার দেখাতে পরীক্ষা করে জানতে পারে তার ব্লাড ক্যান্সার রয়েছে।২ বছর ভর্তি ছিল ঠাকুর ক্যান্সার হাসপাতালে।২৪ টা কেমো চলে এপর্যন্ত।দেড় মাস অন্তর ১ টি করে কেমো চলছে।৬মাস অন্তর রক্ত পরীক্ষা চলছে।আর্থিক সম্বলহীন পরিবার।

নিজস্ব চিত্র

অর্পণের বাবা চন্দ্রনাথ সর্দার ফুল বাগানে মালির কাজ করে।সংসার কোনক্রমে চালাচ্ছেন ।অর্পণ ছোট থেকে ইচ্ছে ছিলো ছবি আঁকার।

মাটি নিয়ে মূর্তি গড়ার দিকে ছিল তার শক। কিন্তু তার বাবা মা তাকে বিভিন্ন রকম ভাবে বাধা দিতে থাকে। বাবা মা চেয়েছিল তাদের ছেলে পড়াশোনা করে চাকরি করার।জীবন যুদ্ধ হারমানিয়ে ছোট থেকে চেয়েছে আর্ট শিল্পী হবে। সে ভাবে এগোচ্ছিল অর্পন।কিন্তু ব্লাড ক্যান্সার তার বাঁক হয়ে দাঁড়াই।

অর্পণ সর্দার,শিল্পী।নিজস্ব চিত্র

আর্ট স্কুলে পড়ার সামর্থ নেই সর্দার পরিবারের।তবুও ইচ্ছা ভক্তি মনের জোরে মূর্তি তৈরি করে চলেছিল অর্পন।আজ সে শিল্পী হতে পেরেছে। কারন প্রতিমা গড়ে সম্মান পেয়েছে অর্পন সর্দার।পুরষ্কৃত হয়েছে সে।তার কাজে হাত লাগাচ্ছে বাবা মা সকলে।চিকিৎসকেরা জানিয়েছে ওকে ওর মতো করে চলতে দাও।

সেই থেকে আরো মনযোগে চলছে প্রতিমা তৈরীর পথচলা।অর্পণ এই বছরে ৬ টি দুর্গা প্রতিমা মূর্তি তৈরি করছে। এই প্রতিমা গুলি সবই যাবে কলকাতায়। টালিগঞ্জে স্টুডিও পাড়ায়,নিউ গড়িয়া,ঠাকুর পুকুর করুণাময়ি কালি মন্দির,বালিগঞ্জ, এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায়।

জয়ন্তী সর্দার,অপর্ণের মা।নিজস্ব চিত্র

তার জীবনের এই প্রথম ৯ ফুটের দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছে।এছাড়া কালি,লক্ষ্মী,সরস্বতী,কার্তিক,জগদ্ধাত্রী বিশ্বকর্মা এছাড়াও বিভিন্ন ঠাকুর তৈরি করে চলেছে। প্রতিমা তৈরি করে তার পড়াশোনা চালাচ্ছে। মাঝে মধ্যে বাবা মার হাতে পয়সা তুলে দেয় অর্পন।

অর্পণ সর্দার তার মতো ক্যান্সার রুগীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেয়।জীবনে কখনো হার মানতে নেই।আমরা কোন পাপ করিনি।সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলতে হবে।জীবনে ঘাত প্রতিঘাত আসবে।তবে সেই সকল কে পিছনে ফেলে অন্যান্য স্বাভাবিক মানুষের মতো এগিয়ে গেলে কিছু কাজ করে যাবে।

আরও পড়ুনঃ শখে গড়া দুর্গা প্রতিমায় পূজিত হন দেবী

অর্পণ ২ বছর ঠাকুর পুকুর ক্যান্সার হসপিটালে ভর্তি থাকা কালিন, ঠাকুর পুকুর ক্যান্সার হসপিটালে পক্ষ থেকে ক্যান্সার রুগীদের নিয়ে ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা করায়।

আর তার মধ্যে অর্পণের ছবি দিল্লিতে ২লক্ষ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।পাশাপাশি বুঁইতার অর্পণ তার স্বপ্ন অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীদের মতো কলকাতা আর্ট কলেজে বসে ছবি আঁকা শিখবে।মনের জোরে রোগ বন্ধকতাকে হার মানিয়ে অর্পণের জীবনে একটাই স্বপ্ন দূর্গা প্রতিমা গড়ে শিল্পীর মান অর্জন করা।

অর্পণের মা বাবা ছেলের এই মূর্তি তৈরি করাকে মেনে নিয়েছেন।পরিবারের সবাই জানেন অর্পন একদিন রোগের কাছে হার মানবে।সেদিন স্মৃতি হয়ে রইবে তার হাতের তৈরী প্রতিমা আর তার প্রাপ্য পুরস্কার ।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here