জ্যোতিষ বিশ্বাসী ব্যক্তি আত্মকেন্দ্রিক অমানবিক

    0
    344

    পূবালী রাণা

    Astrology বা জ্যোতিষ শাস্ত্র বিষয়ে আমার সেরকম কোনো ধারণা ছিল না।উৎসাহ বোধও করিনি কখনো।কিন্তু বছর তিনেক আগে আমার এক বন্ধুর সাহচার্যে একজন জ্যোতিষীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরিচয়ের প্রথম পর্বেই তার কথা বলার ভঙ্গী আমাকে মুগ্ধ করে এবং ও যখন আমার জন্মবৃত্তান্ত জেনে মুহূর্তের মধ্যে আমার জীবনে কি কি ঘটেছে তার হুবুহুব বর্ণনা দিলেন, আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। এর সত্যতা সম্পর্কে আমার সন্দেহের আর অবকাশই থাকলো না।

    ওর প্রতি বিশ্বাস আমার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে লাগলো।আমি মোহাচ্ছন্নের মতো তাকে অনুসরণ করতে লাগলাম।তিনি যা যা বললেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করলাম।কোনো যুক্তিই আমার কর্ণগোচর হল না।
    কিন্তু আমার অবস্থার কোনো উন্নতি হল না। বরং আমি আরো হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম।শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত আমি একদিন আমার অস্তিত্বহীনতা আবিষ্কার করলাম।

    এই বিষয়ে একটা ঘটনার উল্লেখ করছি। উচ্চশিক্ষিত আধুনিক চেতনা সম্পন্ন একটি ছেলে তার প্রেমাস্পদকে ত্যাগ করতে একটুও দ্বিধাবোধ করল না, যখন দেখল মেয়েটি তার জীবনে আসার পরই সে তার কর্মক্ষেত্রে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল এবং এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে তার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হল যে মেয়েটিই তার জীবনে ‘অপয়া’ বা ওই জাতীয় কিছু।মেয়েটিও তাই ভাবতে শুরু করল। ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক অযৌক্তিকভাবে বিচার করে একটি সুন্দর সম্পর্কের অপমৃত্যু ঘটল।

    এরকম অজস্র উদাহারন আছে যা বলে শেষ করা যাবে না।জ্যোতিষীরাই ঠিক করে দেবে তুমি কি ভাবে তোমার জীবন যাপন করবে,কোন রাশি তোমার পক্ষে শুভ,তুমি সেই রাশির সাথেই সখ্যতা বজায় রাখবে। কোন দিন,কোন সময়, কোন সংখ্যা,কোন রঙ তোমার পক্ষে শুভ। তারাই একমাত্র ধারক ও বাহক।কোনো ক্ষেত্রে মিলে যায় বলেই মানুষের মধ্যে বিশ্বাসের মাত্রা বেড়ে যায়।সে তখন তার যুক্তিবাদী মনটার বিসর্জন দেয়।

    Astrology আর Astronomy এই দুয়ের আকাশ পাতাল ফারাক। Astrologer রা মূলতঃ ‘নামের’ শব্দগত মিলকে কাজে লাগিয়ে জ্যোতিষ শাস্ত্রকে বিজ্ঞান বলে দাবী করেন।তাদের বক্তব্য,জ্যোতিষ্ক সমূহের আপেক্ষিক অবস্থান পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষের জীবনধারায় প্রভাব বিস্তার করে।

    শত্রুদমন,বেকারত্ব, গৃহে অশান্তি, সন্তানের উচ্ছন্নে যাওয়া,বউ পালানো,অসুখ বিসুখ,বিপদ আপদ ইত্যাদি সমস্তপ্রকার সমস্যার সমাধানে এরা সিদ্ধহস্ত।

    অতীত বলতে পারার ক্ষমতা অনেকেরই থাকে।কাউকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলেই তা সম্ভব।কিন্তু ভবিষ্যৎ বলার ক্ষমতা কারোর থাকা অসম্ভব।তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নিই,তবে তাকে কোন যুক্তিতে বিজ্ঞান বলব? possibility আর probability র ওপর বিজ্ঞান নির্ভরশীল নয়।

    মানুষের জীবনধারা তার সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে চালিত হয়।এই যে কলকারখানা,চা বাগান ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কত শত শ্রমিকের রুজিরোজগার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে,তাদের প্রত্যেককে তাবিজ কবজ পরিয়ে কোনও জ্যোতিষী কি পারবে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে?

    বরং জ্যোতিষে বিশ্বাসী মানুষ আরো ব্যক্তিকেন্দ্রিক, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে।অমানবিক হয়ে ওঠে।উল্লিখিত ঘটনাটা তার প্রমান।এই স্বার্থচিন্তার ফল হয়ে ওঠে মারাত্মক। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির বোধটাই সে হারিয়ে ফেলে।

    দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার হই আমরাই। সাধারন মানুষ।সেখানে তাবিজ কবজ কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না

    এটা ভাবা হাস্যকর নয় কি যে লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের কোনো নক্ষত্র পৃথিবীর কোনো ব্যক্তির ভাগ্য নির্ধারণ করছে!

    যারা এতে বিশ্বাসী তাদের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ,তারা যেন রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদীর লেখা’ফলিত জ্যোতিষ ‘প্রবন্ধটি পড়েন,আশা করব সেটি পড়ার পর এর কুফল নিয়ে আপনাদের আর কোনো দ্বিধা থাকবে না।

    নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
    WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
    আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here