আওরঙ্গজেবঃ মসজিদ ধ্বংস ও মন্দির নির্মাণ

    0
    688

    ডঃ কনিষ্ক চৌধুরী

    বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক ডঃ কনিষ্ক চৌধুরী

    হিন্দু সাম্প্রদায়িকরা সুকৌশলে আওরঙ্গজেবের মসজিদ ধ্বংসের ও হিন্দু মন্দির মঠে সাহায্যদানের ঘটনাগুলি এড়িয়ে যান।গোলকুণ্ডার মুসলিম নবাব তানা শাহ আওরঙ্গজেবকে দেয় খাজনা না দিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলে তার উপর একটি জামা মসজিদ নির্মাণ করেন।খবর পেয়ে আওরঙ্গজেব সেই মসজিদ গুঁড়িয়ে দেন ও খাজনার অর্থ উদ্ধার করেন।
    আওরঙ্গজেবের শাসনকালেই ভীমসিংহ একাই আহমেদাবাদের বিখ্যাত মসজিদ সহ ৩০০ টি মসজিদ ধ্বংস করেন।কিন্তু পরবর্তীকালে এই ভীম সিংহ পূর্ণ আনুগত্যের সাথে আওরঙ্গজেবের হয়ে মারাঠা দমন করতে যান এবং আওরঙ্গজেব তাঁকে বিনা আপত্তিতে তিন/চার হাজার মসনদ প্রদান করেন ও সমতুল্য ওয়াতন জায়গিরও দেন।শুধু তাই নয়,তিনি প্রয়োজনে মুসলিম ফকিরদেরও হত্যা করতে দ্বিধা করেননি,যেমন আওরঙ্গজেবের আদেশে নগ্ন ফকির শর্মাদকে হত্যা করা হয়।আবার আওরঙ্গজেব যখন কাশ্মীরে প্রাধান্য স্থাপন করতে গিয়েছিলেন তখন সেখানকার শিয়া মুসলমানরা বাধা দিলে তিনি তাদের হত্যা করতে দ্বিধা বোধ করেনি।
    এরই পাশাপাশি বহু মন্দির ও মঠকে সাহায্য করেছিলেন এই বহুকথিত ‘হিন্দুবিদ্বেষী’ আওরঙ্গজেব। চম্পারণের গোঁসাই মঠ, উজ্জয়িনীর মহাবালেশ্বর মন্দির,চিত্রকূটের বালাজী মন্দির,গৌহাটির উমানন্দ মন্দির,শত্রুঞ্জরীর জৈন মন্দির এবং অসংখ্য গুরুদ্বার সহ প্রতিটি বিখ্যাত ধর্মস্থানেই আওরঙ্গজেব অর্থ দান করেছেন কিংবা জায়গির দান করেছেন।কখনও কখনও মন্দিরগুলির দুরবস্থা দূর করার জন্য তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কাশীর বাঙালীটোলায় জঙ্গমবাড়ী মঠে রক্ষিত আওরঙ্গজেবের তিনটি ফরমান থেকে জানা যায় যে তিনি এই মঠের জন্য তিনবার অর্থদান,ভূমিদান ও পূর্বেকার কোন অনুদানকে পুনরায় কার্যকরী করেছেন।১৬৫৯ খ্রীঃ থেকে ১৬৮৫ খ্রীঃ মধ্যে এলাহাবাদের সোমেশ্বরনাথ মহাদেব মন্দির,মহারাষ্ট্রে নানদেড় জেলার মোহনপুরের দত্তাত্রেয় গুরুমন্দিরের জন্য ফরমান জারি করে জায়গির দিয়েছিলেন।উজ্জয়িনীর মহাবালেশ্বর মন্দিরে চব্বিশ ঘন্টা ঘীয়ের প্রদীপ জ্বালানোর জন্য দৈনিক চার সের ঘী বরাদ্দ করেছিলেন।কাশীর জঙ্গমদেবের(শিব)সম্পত্তি নজির বেগ নামে এক মুসলমান জবরদখল করায় শৈব সম্প্রদায় সম্রাটের কাছে নালিশ করলে আওরঙ্গজেব মুসলিমদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ না করে শৈবদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়ে দিয়ে ন্যায় বিচারের পরিচয় দিয়েছিলেন।তাছাড়া মন্দিরের ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের উপর উৎপীড়নের সংবাদ পেয়ে তিনি ১৬৫৯ খ্রীঃ ১০ মার্চ তাঁর বিখ্যাত বেনারস ফরমান জারি করে স্থানীয় শাসকদের জানিয়েছেন যে, ” এই সুস্পষ্ট আদেশ পাওয়ার পরে আপনি দেখবেন যে ঐসব জায়গায় কোনো ব্রাহ্মন অথবা অন্যান্য হিন্দু অধিবাসীর কার্যকলাপে যেন বেআইনীভাবে হস্তক্ষেপ না করা হয়।তারা যেন পূর্বের মতন নিজেদের ধর্মচর্চা চালিয়ে যেতে পারেন।যাতে আল্লাহ প্রদত্ত আমাদের এই সাম্রাজ্যকে চিরস্থায়ী করার জন্য তাঁরা শান্ত চিত্তে প্রার্থনা করতে পারেন।এই আদেশকে আপনি অত্যন্ত জরুরী জ্ঞান করবেন।”
    আওরঙ্গজেব অনেক দুঃস্থ হিন্দুকে ভূমি ও সম্পত্তি দান করে গিয়েছিলেন।তাঁর এই ধরনের আটচল্লিশটি দানপত্র সংগ্রহ করেছেন ডঃ কে.কে দত্ত তাঁর ‘সাম ফরমানস সনসদ অ্যান্ড পরোয়ানাস’ গ্রন্থে।এই অনুদানগুলি সবই ছিল নিঃশর্ত এবং স্থায়ী, গ্রহীতারা ছিলেন হিন্দু সন্ন্যাসী ও অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ সৈনিক ও কানুনগোরা।প্রাপকদের মধ্যে যেমন ছিলেন হতদরিদ্র দুখরন মিশির,তেমনই ছিলেন করমুক্ত ৫৫ বিঘা জমির গ্রহীতা লীলা ব্রাহ্মন,বিনিময়ে এমনকি রাজানুগত্যের শর্তও আওরঙ্গজেব দাবি করেননি।অধ্যাপক গ্রেওয়াল ও গোস্বমী রচিত গ্রন্থ ‘ দি মুঘল অ্যান্ড দি যোগীস অব জাখবর’ এ দেখা যাচ্ছে উত্তর-পশ্চিম পাঞ্জাবের ছোট্ট গ্রাম জাখবরে বসবাসকারী নাম যোগীদের তিনি করমুক্ত জমি দান করেন।

    ইন্টেক্স রেফারেন্সঃ

    *ভদ্র,গৌতম(১৯৯১:১৯২) মুঘল যুগে কৃষি-অর্থনীতি ও কৃষক বিদ্রোহ।
    *সেন,ক্ষিতিমোহন(১৯৬৫:৩১)ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা।*দে,অমলেন্দু(২০০২:১৬)ধর্ম ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা,মৌলবাদ ও পশ্চিমবঙ্গ।
    *ভট্টাচার্য, কুমুদ(১৯৯৩:১৯৩-৪০) হিন্দু পাদ-পাদশাহী।
    *গৌতম,রায়(১৯৯৩:১৯) ইতিহাসের কাঠগড়ায় হিন্দুত্ববাদীরা।

    ফিচার ছবি সংগৃহীত।

    নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
    WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
    আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here