শরীয়তুল্লাহ সোহন, ওয়েব ডেস্কঃ
ছিলেন রাজ্যের সবচেয়ে তৃণমূল বিরোধী মুখ, ছিলেন রাজ্যে বিজেপির অন্যতম হেভিওয়েট নেতা, ছিলেন আসানসোলের সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার প্রতিমন্ত্রী। বেশ কিছু দিন আগের কথা, রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে কত না কতভাবে আক্রমণ করলেন তৃণমূল দল সহ, দলের একাধিক নেতাকে। কোথাও দিলেন গরম ভাষণ, কোথাও বা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে করলেন নানা প্যাচাল। জোর গলায় ঘোষণা দিলেন, রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা। এখানেই থেমে থাকলেন না লিখলেন, তৃণমূল কে ব্যঙ্গ করে গান। গানটি লিখেছিলেন ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন কে সামনে রেখে।গান ছিল ঠিক এই রকম, “ফুটবে এবার পদ্মফুল…… বাংলা ছাড়ো তৃণমূল।…….এ তৃণমূল আর না……..।” আশা করি, পাঠককুল বুঝতে পেরেছেন কার কথা বলতে চাইছি। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন বিজেপির প্রাক্তন সংসদ ও প্রতিমন্ত্রী, টলিউড ও বলিউডের প্রখ্যাত গায়ক বাবুল সুপ্রিয়।

যিনি মাস খানেক আগে গেরুয়া শিবির ছেড়ে, যে ঘাস ফুল শিবির কে বাংলা ছাড়া করতে চেয়েছিলেন সেই তিনি তৃণমূল শিবিরের একনিষ্ঠ কর্মীতে পরিণত হয়েছেন। যদিও তার দলবদল নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। কারণ তৃণমূল পন্থী ভোটাররা বাবুল সুপ্রিয়ের তৃণমূলে যোগদানের ব্যাপারটি ভালোভাবে নেননি। তার পিছনে কারণ তারই উস্কানিমূলক বক্তব্য রাজ্যে জুড়ে অনেক সাম্প্রদায়িক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে আসানসোলে ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছিল।
তবে যাই হোক সমস্ত অতীত কে দূরে ঠেলে দারুণ ভাবে কাজে মন দিয়েছেন তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে। তারই অংশ হিসেবে ত্রিপুরা পৌর নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থীদের হয়ে ভোট প্রচারে গিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। সেখানেই তিনি এক অস্বস্তিকর ও অপ্রীতিকর সমস্যার মুখে পড়েছিলেন গতকাল। তা হল, তারই গাওয়া গান, বাংলা ছাড়ো তৃণমূল, ডিজের তালে বাজিয়ে দেওয়া তার সভার পাশে। আর একাজ করেছেন একদল বিজেপি সমর্থক। যা নিয়ে চরম আকারের বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন গতকাল তিনি।
সূত্র মারফত জানা গেছে, গতকাল তিনি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় সন্ধ্যার প্রাক্কালে তৃণমূলের যুব সভাপতি সায়নী ঘোষের সাথে একটি সভায় উপস্থিত ছিলেন। ঠিক সময়ই মঞ্চের পাশের রাস্তা দিয়ে একটি ম্যাটাডোর গাড়ি যাচ্ছিল। আর সেই গাড়ির বক্স থেকে ভেসে আসে, বাবুল বাবুর গাওয়া সেই ভাইরাল হওয়া বিখ্যাত গান, ‘এই তৃণমূল আর না।’ সেই সময় মঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন যুব নেত্রী সায়নী ঘোষ।
আরও পড়ুনঃ তবে কি দল ছাড়ছেন তথাগত? টুইট ঘিরে গুঞ্জন বঙ্গ রাজনীতিতে
এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্ধ হয়ে বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে, সায়নী মাইক্রো ফোন তুলে দেন বাবুল সুপ্রিয়ের হাতে। পরিস্থিতি কন্ট্রোলে নেমে, বাবুল সুপ্রিয় বলেন, “ভেবে দেখুন নেতারা কতখানি অহংকারী হলে, নিম্ন মানসিকতার হলে নিচু তলার কর্মীদের দিয়ে এমন কান্ড করায়। আর কতটা দুর্ব্যবহার করলে, যে ছেলেটা দলের জন্য গান লিখেছিল, সেও দলবদলে দিদির হাত ধরে চলে আসে।” এরপর তিনি আরও বলেন, “আমি গানটা শুনছিনা, আমি যখন যেটা করি মন দিয়ে করি। তাই ভবিষ্যতে তৃণমূলের জন্য এর থেকে ভালো গান বানাবো।”
আরও পড়ুনঃ BSF-এর সীমা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ ইস্যুতে ফের প্রকাশ্যে রাজ্য-রাজ্যপাল দ্বৈরথ
বাবুল সুপ্রিয়ের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিজেপি বলেন, “বিজেপি যা খুশি গান বাজাতে পারেন। কিন্তু বাবুল বাবু যে নিজের গান শুনতে চাইছে না, তা হতাশাজনক। তবে আগরতলার পুরভোটে প্রথম বার লড়তে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ফলাফল যাই হোক না কেন, বাবুলের গান যে তৃণমূল শিবিরে অস্বস্তি বাড়িয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584