নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহুরূপী বলে কটাক্ষ করলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আনন্দপুর এলাকায় এক প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে এমনই কটাক্ষ করেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা।
তিনি আরও বলেন, বিজেপি যেখানে যেখানে মিটিং-মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানে সেখানেই পুলিশের থেকে অনুমতি পাওয়া যায় না। মাইকিং-এর অনুমতিও না পাওয়া গেলে, সেক্ষেত্রে আনন্দপুর এলাকায় এক ক্লাব সংগঠনের পক্ষ থেকে মাঠের অনুমতি দেওয়া হয়।
বক্তব্য রাখার আগে এ দিন ওই ক্লাবের সমস্ত কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানান রাহুল বাবু। এরপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন যে বর্তমানে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকার-সহ রাজ্যের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা হিন্দু মুসলিমের মধ্যে বিভাজন এনে দিতে চাইছে। শুধু তাই নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে উত্তেজিত করে দিতে চাইছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালাকি রাজ্যের সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বুঝে গেছে, তাই তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফাঁদে পা দেয়নি।
তিনি পরিষ্কার করে দেন এই লড়াই হিন্দু-মুসলিমের লড়াই। এই লড়াই স্বদেশি ও বিদেশিদের লড়াই। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে গিয়ে ১৩০ কোটি মানুষের কথা বলেন আর সেই ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ বিরাজমান। সুতরাং সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কথাই প্রধানমন্ত্রী চিন্তাভাবনা করেন।
আরও পড়ুনঃ লালগড় থানা থেকে চুরি যাওয়া আঠারোটি বন্দুকের মধ্যে উদ্ধার একটি
গতকাল প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি পদ্মভূষণ পেল আর সেই পদ্মভূষণের মধ্যে হিন্দুরাও যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনই রয়েছে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যে কোনও তফাৎ নেই সেকথাই রাহুল বাবু স্মরণ করিয়ে দিলেন।
পাশাপাশি তিনি বলেন, এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ভোটব্যাঙ্ক ঠিক রাখার জন্য ‘ইনশাল্লাহ ইনশাল্লাহ’ করতেন, রোজা রাখতেন কিন্তু উনি রোজা সম্বন্ধে কিছুই বোঝেননা বা জানেন না। তিনি হিন্দু হয়েও মুসলমান সাজার নাটক করতেন– এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা।
এরপরেও থেমে যাননি রাহুল বাবু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে তিনি বলেন, মমতা এক একটা মিটিংয়ে ১৮ বার ইনশাল্লাহ ইনশাল্লাহ বলে থাকেন।
আরও পড়ুনঃ ৮৩ যাত্রী নিয়ে মধ্য আফগানিস্থানে ভেঙে পড়া বিমানের পরিচয় ঘিরে বিভ্রান্তি
কিন্তু একুশে জুলাইয়ের পর থেকে তার মুখে একবারও ওই শব্দ শোনা যায়নি। বিজেপি নামক জুজুর ভয়ে তিনি আল্লাহর নাম ভুলে গেছেন। ভোটের লোভে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষকেও ছুঁড়ে ফেলতে পারেন মমতা। তাই ওনাকে বুঝুন ,এই বহুরূপী মানুষকে চিনুন। এই বহুরূপী মানুষ হিন্দু মুসলিমের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়ে আবার ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করবে।
অন্যদিকে, কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে এনপিআর নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে তৃণমূল— সেই বক্তব্যের নিদান দিলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন এরা একটা সংবিধান বিরোধী সরকার, না হলে সিএএ-র বিরুদ্ধে বিধানসভায় এরা প্রস্তাব পাস করে। কেন্দ্রীয় আইনকে বিধানসভায় চ্যালেঞ্জ করা যায় না– এটা সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী কাজ।
আরও পড়ুনঃ কামাখ্যাগুড়িতে দল বদল শ্রমিক ইউনিয়ন সদস্যদের
রাহুল বাবু জানান যে তৃণমূলের এনপিআর আটকানোর কারণ এনপিআর লাগু হয়ে গেলে এ রাজ্যে কত বেকার যুবক রয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে সব প্রকাশ পেয়ে যাবে।
কীভাবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীরা এ রাজ্যে প্রবেশ করে যাচ্ছে, তা বেরিয়ে যাবে। সেই কারণেই এই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তৃণমূল। আমরা ধিক্কার জানাই এই মুখ্যমন্ত্রী কে।
অন্যদিকে সিএএ-র বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও সিপিআইএম নানান কর্মসূচী করছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেজুর হয়েছে সিপিআইএম ও কংগ্রেস। তারা প্রকাশ্যে বলুক এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেবক হিসাবে কাজ করবে। আজকে বিধানসভায় সেটাই বোঝা যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ সংবিধান রক্ষার দায়িত্বে অবস্থান-বিক্ষোভ
পাশাপাশি তিনি এও বলেন, বিধাবসভায় পাস হওয়া উদবাস্তু বিলের পরিপ্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বাস্তু হিন্দুদের এখান থেকে তাড়াতে চায়— আমরা একথা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করব।
এ দিন এই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি রাজ্য সদস্য ধীমান কোলে, বিজেপি মহিলা নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য-সহ অন্যান্য জেলা ও ব্লক বিজেপি নেতৃত্ব।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584