ফিল্ম রিভিউঃ ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি

0
258

নবনীতা দত্তগুপ্ত, কলকাতাঃ

অবাক হলাম ঋতাভরীকে দেখে। সংস্কৃত উচ্চারণ এত স্পষ্ট যে মন দিয়ে শুনতে ইচ্ছা হয়। একইভাবে পুজো করাকালীন চামর আর ঘণ্টা সমতালে নাড়িয়েছেন তিনি। যা বেশ দুরূহ একটি কাজ। ঋতাভরী নিজেই জানিয়েছেন ছবির কাজ শুরু হওয়ার পর একবার কলকাতার বাইরে যাওয়ার সময় একটি চামর তিনি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটাকে ঘোরানো অভ্যাস করবেন বলে।

brahma janen gopon kombonti film review | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

হ্যাঁ শিরোনামে যা লিখলাম সেটা খোলসা করি। ব্রহ্মা জানালেন এক মহিলা পুরোহিতের কথা। তার নাম শবরী। একদিনে অধ্যাপিকা, অন্যদিকে পারফর্মার আবার পুজো করে, বিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনঃ বর্তমান সমাজের মুখে ‘দেবী’র থাপ্পড়

সমাজ আজও ‘মহিলা পুরোহিত’ শব্দদুটির সঙ্গে ঠিকঠাক অভ্যস্ত হতে পারেনি। অভ্যস্ত করতে বাস্তবের মাটিতে পা বাড়িয়েছেন ডঃ নন্দিনী ভৌমিক। মূলত তাঁর অনুপ্রেরণাতেই এই ছবি বানিয়েছেন অরিত্র মুখার্জি। গল্পটা আগেই ভাবা হয়েছিল।

brahma janen gopon kombonti film review | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

পরে ডঃ নন্দিনীর এই মুভমেন্ট খবরের কাগজে পড়ে হাতে চাঁদ পান অরিত্র। ডঃ নন্দিনীকে পুরোহিত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং লোকের বিশ্বাসের উপযুক্ত হয়ে উঠতে যে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাই উঠে এসেছে ছবিতে।

আরও পড়ুনঃ নারী দিবসের প্রাক্কালেই পর্দায় ফাঁস হল শবরীর গোপন কম্ম

ঋতাভরী প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে অনবদ্য। যখন তিনি শবরী হয়ে ভাসুর প্রতাপাদিত্যর ছেলেকে পড়াচ্ছেন তখন এক রকমের মানুষ, আবার যখন পুজো করছেন তখন অন্য অভিব্যক্তিতে ঠাসা একজন মানুষ।

নিজেকে অনেক ভেঙেছেন অনেক গড়েছেন তিনি। ডঃ নন্দিনী ভৌমিকের ছাত্র পোখরাজের কাছে সংস্কৃত শিখেছেন তিনি। ডঃ নন্দিনীর রেকর্ড করা কথা, মন্ত্র এই ছবিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

প্রতাপাদিত্যের চরিত্রে অম্বরীশ ভট্টাচার্য অনবদ্য। শবরীর (ঋতাভরী) সঙ্গে বিয়ে হয় প্রতাপাদিত্যর ভাই বিক্রমাদিত্যর। এই চরিত্রে সোহম মজুমদার বাংলা সিনেমার বহুল পরিচিত মুখ নন।

তবু চেষ্টা করেছেন। আরও একটু সাবলীল হওয়া দরকার ছিল সোহমের। শবরীর শাশুড়িমাতা অমরাবতীর রোলে সোমা চক্রবর্তী অনবদ্য। অমরাবতী আবার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। তাঁর রসবোধ মুগ্ধ করবে দর্শককে। মানসী সিনহা প্রত্যেকবারের মতোই উজ্জ্বল। পুরোহিত মশাইয়ের চরিত্রে শুভাশিস মুখার্জির অভিনয় নতুন করে বলার দরকার পড়ে না। প্রত্যেক চরিত্রেই নিজের আসনটি শক্ত রাখেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ নাচে-গানে জমজমাট ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’র সঙ্গীত সন্ধ্যা

খুব আলাদা করে একজনের নাম না নিলেই নয়। তিনি হলেন সাহেব চট্টোপাধ্যায়। শবরীর বাবার ভূমিকায় দেখা গেল অভিনেতাকে। কন্যা কখনও দান করা যায় না। এই যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিশ্লেষণ গায়ে কাটা দিল। নিজে একজন মেয়ে তাই এক ঝটকায় নিজের প্রতি করুণা হল। রাগও হল বড্ড।

এবার আসি গানের কথায়। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গীতায়োজন এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছেন রুদ্রনীল চৌধুরী। গান গেয়েছেন লগ্নজিতা চক্রবর্তী, সোমলতা আচার্য চৌধুরী, সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়, উজ্জয়িনী মুখার্জি। প্রত্যকটি গানই অনবদ্য হয়ে উঠেছে সঠিক স্থানে তার ব্যবহারে।

পরিচালক অরিত্র মুখার্জি এতকাল শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সহ পরিচালক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এবার তিনি শুধুই পরিচালক। নজির গড়লেন প্রথম ছবিতেই৷ একজন পুরুষ হয়েও নারীজাতিকে নিয়ে তাঁর এহেন পজিটিভ চিন্তাভাবনা প্রশংসার দাবি রাখে।

আরও পড়ুনঃ যাত্রা শুরু বোম্বাগড়ের পথে, হাজির পোস্টার

মেয়েদের খুঁটিনাটি ব্যথা বেদনার দিকগুলি নিয়ে তিনি ভাবেন তা স্পষ্ট। ঋতুমতী হলে মেয়েরা অশুচি, অসুস্থ বলে গণ্য হয়। মেয়েরাই অবশ্য এহেন ট্যাবু তৈরি করেছে। নিজেরাই নিজেদের অসুস্থ বলে মনে করে ওই দিনগুলোতে। অথচ পিরিয়ড মিস করলেই ডাক্তারের কাছে ছোটে। মিস না করলে কিন্তু ছোটে না।

তা হলে অসুস্থ আসলে কখন সে? এই প্রশ্নের উত্তর চোখের দিকে আঙুল তুলে বলে দেয় এই ছবি। বিয়ের সময় পুরোহিতের ভুল মন্ত্র ধরিয়ে দেয় শবরী। ওই সিনে কী ভীষণ ন্যাচরাল ঋতাভরী তা না দেখলে বোঝা কঠিন।
সিনেমাটোগ্রাফিতে বাড়াবাড়ি নজরে পড়েনি। বরং যতটুকু দরকার ততটুকুই রয়েছে। অসম্ভব ভাল একটি চিত্রনাট্যে অনেক বেশি স্মার্ট হয়ে উঠেছে ছবিটি।

সবমিলিয়ে মহিলা পুরোহিত- হিট। অরিত্র মুখার্জি- জিন্দাবাদ। ঋতাভরী- তোমারে সেলাম। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর মিউজিট ইউনিট- যুগ যুগ জিয়ো। সবশেষে উইন্ডোজ-কে অসংখ্য ধন্যবাদ।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here