নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের শেষ প্রান্ত যেখানে, সেখান থেকে থেকে সবং ব্লকের শুরু। আর সেখানেই অবস্থিত নারায়ণগড় ব্লকের চকশৌলা রমনীমোহন প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৪৫ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মাটির তৈরি বিদ্যালয়।
২০১০ নাগাদ বিদ্যালয়ের একটি গ্র্যান্ডের টাকায় একটি কুঠি বিশিষ্ট পাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে পরিকল্পনায় ত্রুটি থাকায় তা বেশিদিন ব্যবহার করা যায়নি।
মাথার উপরে ছাদের অংশ বিপদজনক অবস্থায় ঝুলে রয়েছে। তাছাড়া দেওয়াল ও সিলিং এর কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই ওই বাড়িতে ক্লাস করাতে শিক্ষকদের বারণ করছেন এলাকাবাসী, অভিভাবকেরা।
বর্তমানে সেই ক্লাসঘর গোডাউন-এ পরিণত হয়েছে। মিড ডে মিলের চাল, রান্নার সরঞ্জাম থেকে শুরু করে যাবতীয় স্কুলের ব্যবহার্য জিনিস ওখানেই রাখা হয়।
পাকা বাড়ির তুলনায় হয়ত অপেক্ষাকৃত কম বিপদজনক বলে মনে করে স্বাধীনতার আগে থেকে এখনও এই মাটির বাড়িতেই এখন পঠন-পাঠন চলছে। দীর্ঘ ৭৪ বছরের পুরানো হওয়ায় বর্তমানে বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ কঙ্কালসার অবস্থায় পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ইউনিয়ন রুম খালি করার নোটিশ জেএনইউতে, চলল ফিল্মের ‘প্রোটেস্ট স্ক্রিনিং’
মাথার উপরে যে টিনের আচ্ছাদন দেওয়া ছিল তা মরিচা পড়ে টিন গুলির জায়গায় জায়গায় অজস্র ফুটো তৈরি হয়েছে।বর্ষাকালে কচি-কাঁচা ছাত্র ছাত্রীরা ভিতরে বসতে পারে না।
গায়ে জল পড়ে, বইখাতা ভিজে যায়। সেই সঙ্গে শিক্ষকরাও ঠিক মতন পঠন-পাঠন করাতে পারেন না এমনটাই অভিযোগ করলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
স্কুলের দেওয়াল জুড়ে লাগানো রয়েছে সহপাঠক্রমিক কিছু শিখন উপকরণ যেগুলি জলে ভিজে প্রায় উঠে গিয়েছে। মাটির দেওয়ালে কাঠের ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহৃত হয়।
জল পড়ে কাঠের ব্ল্যাকবোর্ড নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি স্কুল বাড়ির কড়িকাঠে উই পোকা লেগে যায়। অনেক করিকাঠ ক্ষয়ে গিয়ে বিপদজনক অবস্থায় মাথার ওপর ঝুলছে। তারই মধ্যে পঠন-পাঠন চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা। বাড়িটির চতুর্দিকে সিমেন্টের খুঁটিগুলো ক্ষয়ে গিয়েছে। বর্তমানে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য কিছু কাঠের খুঁটি লাগানো হয়েছে।
স্কুলের দেওয়াল মাটির গাথনির হওয়ায় বর্তমানে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে, যার ভেতরে মাঝেমধ্যে সাপ দেখা যায়। এসব বিপদের জন্য অভিভাবকেরা তাদের ছেলেমেয়েদের আর এখানে পাঠাতে চাইছেন না। ফলে দিন দিন ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কমছে।
এলাকার অভিভাবক প্রকাশ পালের বক্তব্য, “স্কুলটি দীর্ঘদিনের পুরানো। বর্তমান স্কুলটির বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে কিন্তু প্রশাসনের নজর নেই। হয়ত এটি নারায়ণগড় এবং সবং বর্ডার এরিয়া হওয়ায় প্রশাসনের নজর পড়ছে না ।”
আর এক এলাকাবাসী অভিভাবক শশীভূষণ ভুঁইয়া জানান, “স্কুলটি বর্তমান যা অবস্থা আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের কে আর এখানে পাঠাতে চাইছি না।
স্কুলে আগে অনেক ছাত্র ছাত্রী ছিল। অভিভাবকেরা তাদের ছেলে মেয়েদের অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছেন। এরকম বিপদজনক অবস্থায় কে পাঠাতে চাইবে এখানে। তাই বর্তমান স্কুলের ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে।”
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুখদেব সিং জানান, “স্কুলটি বহুদিনের পুরানো। তবে আমি ২০১০ সাল নাগাদ এই স্কুলে যুক্ত হই। স্কুলের এই বেহাল অবস্থা সম্পর্কে অঞ্চলের প্লেন এস্টিমেট সহ জমা দিয়েছি।
তবে এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। এছাড়াও আমরা এস আই, ডি এম, বিডিও সহ বিভিন্ন দফতরে জানিয়েছি। এখনও এই অবস্থাতেই রয়েছে। ভীষন অসুবিধার মধ্যে রয়েছি। বর্ষার সময় ছাত্র ছাত্রীদের ভিতরে নিয়ে ঠিকঠাক বসা যায় না। বৃষ্টির জল পড়ায় বেঞ্চ একবার এদিকে একবার ওদিকে সরাতে হয়।”
নারায়ণগড় এর বিডিও বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন -“বিষয়টা আমার জানা নেই। আমার কাছে এ ধরনের কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে নিশ্চয় অভিযোগ জানালে খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584