সুরের জাদুতে ইটাচুনা থেকে বলিউডে চাঁদমনি

0
206

মোহনা বিশ্বাস, হুগলিঃ

কথায় আছে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। তবে যে ধান রোয়ে সে গানও গায় আবার একই সাথে পড়াশোনাও করে। এমন কারোর কথা কি জানা আছে আপনাদের? হ্যাঁ, এমনই এক কন্যা আছে তো আমাদের বাংলায়। নামও শুনেছেন হয়ত। চাঁদমনি হেমব্রম। হুগলি জেলার পান্ডুয়া থানার অন্তর্গত ইটাচুনা গ্রাম পঞ্চায়েতের মুলটি গ্রামের বাসিন্দা। নেহা কক্করের গাওয়া ‘ও হামসাফার’ গানটি নিজের কণ্ঠে গেয়ে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই সাঁওতালি কিশোরী। এবার এই মেয়েই পাড়ি দিল বলিউডে।

Studio | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

দুই বোন আর মাকে নিয়ে অভাবের সংসার চাঁদমনির। দশ বছর আগেই গত হয়েছেন তাঁর বাবা। এরপর সংসারের হাল ধরতে মা মালতি হেমব্রমের সঙ্গে মাঠে ধান রোয়ার কাজ করে চাঁদমনি। পাশাপাশি সমানতালে পড়শোনাও চালিয়ে যায় সে। সারদেশ্বরী কন্যা বিদ্যাপীঠে দশম শ্রেনীতে পড়ে চাঁদমনি। গান শুনে শুনেই গান গায় সে। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি একটা আলাদা টান ছিল তাঁর।

Chandmani Hembram | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

দূর থেকে ভেসে আসা গানই হোক বা পাশের বাড়ির হোম থিয়েটারে চলা গানই হোক, সেইসব গান কানে আসলেই মাটির বাড়িতে মনে মনে গুনগুন করতো চাঁদমনি। রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে বলিউড সং, সবেতেই পারদর্শী এই আদিবাসী কিশোরী। এরপরই একদিন তাঁর জীবনে আসেন দুর্গাপুর ও হুগলির দুই শিক্ষক চিরঞ্জিৎ ধীবর এবং শ্যাম হাঁসদা।

Music Recording | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

মুলটি গ্রামে ত্রাণ বিলি করতে যান শ্যাম হাঁসদা সেখানেই চাঁদমনির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয় তাঁর। চাঁদমনির কণ্ঠে নেহা কক্করের গাওয়া গান শুনে রীতিমতো হতবাক হয়েছিলেন তিনিও। এরপর চাঁদমনির গাওয়া সেই গান ভিডিও করে ফেসসবুকে পোস্ট করেন হুগলির ওই শিক্ষক। সেই ভিডিওটি আবার নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন দুর্গাপুরের শিক্ষক চিরঞ্জিত ধীবর। আর তারপরই মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় চাঁদমনির গাওয়া বেশকিছু গান। এই ভিডিও দেখার পর বলিউডের শিল্পীরা চাঁদমনি হেমব্রমের খোঁজ নিতে চিরঞ্জিত বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

আরও পড়ুনঃ সুন্দরবনের পাশে ‘শের’

recording | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

এরপর চাঁদমনির জীবনের মোড় ঘুরে যায়। পাঞ্জাবের খ্যাতনামা শিল্পী অ্যায়শান আদ্রির পরিচালনায় গান গাওয়ার ডাক পায় হুগলির চাঁদমনি। একটি স্টুডিওতে ‘জুদাইয়া বে’ গানটি রেকর্ডিংও করে চাঁদমনি। আর তাঁর পথ নির্দেশক হয়ে সঙ্গে যান ওই দুই শিক্ষক। লকডাউনের পর পাঞ্জাবে এই গানের ভিডিও শুট ও ফাইনাল অডিও টেক হবে।

আরও পড়ুনঃ দু’মাস পরে ঝাড়গ্রামে খুলছে পর্যটন কেন্দ্রগুলি

জানা যায়, জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘ইন্ডিয়ান আইডল সিজন-১২’-এও অংশগ্রহণ করবে এই আদিবাসী কিশোরী। চাঁদমনির অভাবের সংসার। তাই বলিউডে গান গেয়ে যা উপার্জন করবে সবটাই মাকে দিতে চায় সে। চিরঞ্জিত ধীবর বলেন, চাঁদমনির পাশে এভাবে দাঁড়াতে পেরে তিনি অত্যন্ত খুশি। সে যেন আরও বড়ো হয়। আগামী দিনেও চাঁদমনির পাশে এভাবেই তাঁরা থাকবেন। চাঁদমনি যাতে স্থায়ী ভাবে সংগীত জগতে কাজ করতে পারে তার চেষ্টাও করছেন চিরঞ্জিৎ বাবু ও শ্যাম হাঁসদা। চাঁদমনির জীবনের চাকা ঘোরানোর কারিগর এই দুই শিক্ষককে কুর্নিশ জানাচ্ছেন আপামর জনতা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here