শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
মুখ্যমন্ত্রীর বলা ‘করোনা এক্সপ্রেস‘ শব্দবন্ধটিকে লুফে নিয়ে বুধবারে ভার্চুয়াল সভায় ২০২১ সালের বিধানসভায় মমতার ‘এগজিট এক্সপ্রেস’ বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
আর তার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ৩৬০ ডিগ্রি অবস্থান বদল করে ফের করোনা এক্সপ্রেস নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে দাবি করে এ দিন তিনি নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘আমি করোনা এক্সপ্রেস বলিনি, মানুষ করোনা এক্সপ্রেস বলেছেন ৷’
পাল্টা পরিযায়ীদের নিয়ে কেন্দ্রের অদূরদর্শিতার সমালোচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিক স্পেশালে ইচ্ছে করে গাদা গাদা লোক পাঠানো হচ্ছে ৷ ১২০০ লোক আসার কথা যে ট্রেনে সেখানে ২৫০০ লোক পাঠাচ্ছে ! একসঙ্গে গাদাগাদি লোক পাঠানোয় করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা ৷ তাই মানুষ করোনা একে এক্সপ্রেস বলেছেন ৷’
তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউন ঘোষণার তিনদিন আগেই পরিযায়ীদের শ্রমিক এক্সপ্রেস চালিয়ে নিজেদের রাজ্যে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত ছিল কেন্দ্রের ৷ তাহলে আজ আর এই অবস্থা হত না ৷’ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘বাংলায় এখনও পর্যন্ত ২৫৫ ট্রেনে ১১ লক্ষ পরিযায়ী ফিরে গিয়েছেন ৷ পরিযায়ীদের নিয়ে আরও ২২ ট্রেন আসবে, তাতে ৩০ হাজার পরিযায়ী ফিরবেন ৷’নরেন্দ্র মোদী সরকারকে লকডাউন গভর্মেন্ট বলেও কটাক্ষ করেন।
আরও পড়ুনঃ দ্বাদশ শ্রেণীর বাকি পরীক্ষা পিছানোর দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ বাবা- মায়েরা
মঙ্গলবার মমতার করোনা এক্সপ্রেস মন্তব্যকে হাতিয়ার অমিত শাহ বলেছিলেন, “ওই এক্সপ্রেসই তৃণমূলকে বাংলার এক্সিট গেট দেখাবে! শ্রমিকরা কিন্তু একথা ভুলবে না।”
বুধবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে কার্যত অমিত শাহের অভিযোগ খণ্ডন করতে চান মমতা। এদিন তিনি বলেন, “ আমি বলেছিলাম পাবলিক বলছে।
আপনারা যদি আমার সেদিনের স্টেটমেন্ট বের করেন দেখবেন, আমি বলেছিলাম পাবলিক এটাকে করোনা এক্সপ্রেস বলছে!” আর যা শুনে রাজ্যে বিজেপির নেতারা টিপ্পনি কেটে বলছেন, ডিগবাজির নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! ঠিক যেমন ভাবে এক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিল দলকে দুচ্ছাই করে পাত্তা না দিয়ে আবার ঘূর্ণিঝড়ের পর আরেক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে জামাই আদর দেখিয়েছেন। কারণ আগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল করোনা চলাকালীন রাজ্যের পরিকাঠামোগত ক্রটি দেখতে এসেছিল আর পরের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ঘূর্ণিঝড়ের পর রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দেখতে এসেছিল।
সরকারি কর্মচারীদের দুই শিফটে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই ঘোষণা করতেই এদিনের সাংবাদিক বৈঠক ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই রোগ থেকে বাঁচতে দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন। তাহলে কেন বেশি ট্রেন না চালিয়ে, কম সংখ্যক ট্রেনে গাদাগাদি করে পাঠানো হল শ্রমিকদের? কেন ভাবা হল না তাঁদের কথা?”
আরও পড়ুনঃ রেলে বদল হচ্ছে কর্মপদ্ধতি! একজন কর্মীকে সামলাতে হবে বহুমুখী দায়িত্ব
এদিনের বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী ফের দাবি করেন যে, বাংলা থেকে কোনও শ্রমিক ফিরতে চাইছেন না, কারণ বাংলায় তাঁরা সুরক্ষিত। সেইসঙ্গেই প্রশ্ন তুললেন, বাংলা যখন ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের সমস্ত সুবিধা দিল, তখন বাইরে থাকা বাংলার শ্রমিকরা কেন সেই সুবিধা পেলেন না? বিষয়টিকে কোনওভাবে সামাল দেওয়ার এভাবেই চেষ্টা করেন তিনি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584