শ্যামল রায়,বর্ধমানঃ
কালনা ও শান্তিপুর এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কালনা নৃসিংহদেব পুর গঙ্গার উপর একটি সেতু তৈরি হোক। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই দাবি আরো জোরালো হয়েছিল। সেতু তৈরির গুরুত্ব বুঝে অবশেষে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলাকাবাসীর দাবির প্রতি সীলমোহর দিল। নদিয়া জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে বর্ধমান জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার জানিয়ে দিয়েছিলেন সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে যেন জমি সমস্যা না হয়। জোর করে চাষীদের কাছ থেকে জমি নেওয়া যাবেনা। তাতে যদি সেতু নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায় যাক। শেষমেষ সেতু তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হল।
রবিবার স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু জানিয়েছেন যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে কালনা ও শান্তিপুর নৃসিংহদেব ফেরিঘাটে সেতু তৈরি হবে তার জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তাই জমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু হল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ থাকে যে ২০১৬ সালের মে মাসে কালনা শহরে অনুষ্ঠিত ভবা পাগলার উৎসবকে কেন্দ্র করে পুণ্যার্থীরা বাড়ি ফেরার পথে কালনা ফেরিঘাটে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। নৌকাডুবিতে মৃত্যু হয়েছিল কুড়িজন এর। তারপরে এই কালনা ফেরিঘাটে গঙ্গার উপরে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত অনুসারেই এবার শুরু হলো প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে জমি অধিগ্রহণের কাজ।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন জমির মালিকরা যাতে বঞ্চিত না হন সেজন্য জমির অতিরিক্ত মূল্য ধার্য করেছে প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে আরো জানা গিয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কালনাফেরীঘাট থেকে শান্তিপুরের নৃসিংহদেব ঘাট পর্যন্ত সংযোগকারী সেতু নির্মাণ ও তা চালু করতে হলে জমির প্রয়োজন রয়েছে। সেতুর দুই দিকেই সংযোগকারী রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজন তাই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে।
সেতুর দুই পাড়ের সংযোগকারী রাস্তার জন্য জমি অধিগ্রহণের নোটিশ জারি করা হবে খুব শীঘ্রই। বিজ্ঞপ্তি জারির ৩০ দিনের মধ্যে জমির মালিকরা স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার জন্য আবেদন করলে বর্তমান বাজারদরে থেকে দেড় গুণ বেশি দাম দেয়া হবে মালিকদের জানা গিয়েছে ।
জমির দামও প্রায় চূড়ান্ত। জমির দাম অনুযায়ী একরপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম দেয়া হবে চাষীদের। তাতে সবমিলিয়ে ৪৪ কোটি টাকা দরকার। ইতিমধ্যেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর থেকে ৫০ কোটি টাকা চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
আরো জানা গিয়েছে যে সেতু তৈরীর জন্য রাস্তার দু’পাশে জমি অধিগ্রহণ করতে তিনটি মৌজার জমি নেওয়া হবে।
হাঁসপুকুর বারাসত ও শাহাপুর গ্রামের জমি অধিগ্রহণ করা হবে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন যে জমি অধিগ্রহণ করতে জমিদাতাদের কোনরকম সমস্যা তৈরি না হয় সেই জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত গুলোকে তৎপর হতে বলা হয়েছে। জমির মালিকরা যাতে এলাকার স্বার্থে নিজেরাই স্বইচ্ছায় জমি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন সে ব্যাপারেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এককথায় এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এলাকাবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সেতু তৈরি হলে নদিয়া বর্ধমান জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার একটা আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি মানেই ব্যাবসায়ী উন্নয়ন আর ব্যবসায় উন্নতি মানেই এলাকার আর্থসামাজিক এর উন্নতি ঘটা।
একদিকে কালনার সেতু অন্যদিকে নবদ্দীপ রেল ব্রিজ তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে দুটি উন্নয়নমূলক কাজের ফলে উত্তরবঙ্গের সাথে দক্ষিণবঙ্গের ব্যাপক যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে আগামী দিন। ঘটবে ব্যবসায় উন্নতি। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন যে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর দাবি ছিল একটি পাকা সেতুর। এলাকাবাসীর দাবির প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সীলমোহর দিলেন এবং খুব শীঘ্রই জমি অধিগ্রহণ শুরু হলো এবং কাজও শুরু হবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584