‘ভদ্র-শিক্ষিত’ সমাজের ভিড়ে বিবেককে প্রশ্ন করে ‘দেহজীবিদের উপাখ্যান’

0
175

জগন্নাথ পাল, কলকাতাঃ

আসুন ক্ষমতা কেন্দ্রের ভাষাকে আমরা বিনির্মাণ করি। সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষের মূল্যায়ন ও মর্যাদায় দাঁড়িয়ে কোনও এক শ্রেণির মানুষের লড়াইয়ের মাপকাঠি নির্ধারিত হয় না। যখন সেই লড়াই মেয়েদের হাত ধরে শুরু, সে বিষয়টির ক্ষেত্র স্বীকার করে নিতেই সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী চরম মুহূর্তে তাদের আঘাত করতে শুরু করে।

controversial book
প্রচ্ছদ নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক উঠেছে সোশাল মিডিয়ায়। ফাইল চিত্র

দেহ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা ভারতবর্ষে নতুন নয়। এটি পোড়া এই দেশে একটি লজ্জার কারণও বটে। অকারণে তাঁদের সেই দেহ বিক্রির লড়াইকে আমরা সভ্য মানুষেরা যেন ছোট করে না দেখি। ‘দেহজীবিদের উপাখ্যান’ এমনই এক প্রতিবাদের ভাষা। তাঁদের লড়াই এই সমাজের প্রতি, এই ভারতবর্ষের প্রতি প্রতিবাদের এবং কলরবের। আমরা আমাদের প্রচারে, তাঁদের এই বেঁচে থাকার সর্বক্ষণের জীবিকাকে যেন উপজীবিকা বলে ব্যখ্যা না করি।

controversial book
লেখক রাধামাধব মন্ডল। নিজস্ব চিত্র

এই জীবিকাকে ‘দেহজীবিকাই’ বলা উচিত। আপনার পৌরুষের প্রামাণ্য হোক একটি নারীর কাছে যাচাই-বাছাই হওয়ার পর। তাই সাধারণ ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে চলুন প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রাপ্তমনস্ক হয়ে উঠতে। পড়ুন ‘দেহজীবীর উপাখ্যান’, অন্তত এমন কথাই বলছেন লেখক রাধামাধব মণ্ডল।

তাঁর জন্ম অখণ্ড বর্ধমানের আউশ গ্রামের গোপালপুর গ্রামের এক কৃষক পরিবারে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি লেখালেখিতে আসেন। প্রথম জীবনে নাটক দিয়ে শুরু করেন চর্চা। পরে হাত দেন কবিতা ও গদ্যে। বর্তমানে তিনি এ বাংলার তরুণ গদ্য লেখকদের মুখ। প্রতিদিনই তিনি নিত্য নতুন বিষয় নিয়ে গবেষণাধর্মী লেখা লিখেছেন প্রবন্ধ আকারে, বাণিজ্য-দৈনিক সংবাদ পত্রের পাতায়। এ যাবৎ বাউল, ফকির, পট ও পটুয়া এবং ডাকাতদের নিয়ে ইতিহাস লিখে পেয়েছেন নানা সম্মান ও পুরস্কার। নিয়মিত লিখছেন বাংলার লোকসংস্কৃতির নানা ধরনের উপাচার নিয়ে। তুলে আনছেন নতুন নতুন লোক শিল্পীদের।

বাজারে এখনও ২২ টির মতো বই বিক্রি হয়েছে তাঁর লেখা। লেখাই তাঁর একমাত্র জীবিকা। তাঁর ২৩ তম বই ‘দেহজীবীর উপাখ্যান’ বর্ধমানের বার্ণিক প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। গত ২ আশ্বিন লেখকের জন্মদিনে, বইয়ের প্রচ্ছদ সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশের পর থেকেই, প্রচ্ছদটি শ্লীল-অশ্লীলের তকমায় ফেলে বিতর্কের ঝড় ওঠে। বইটির প্রচ্ছদ শিল্পী আন্তর্জাতিক কোলাজ সম্রাট তপন সাহা। তিনি এ বিষয়ে বলেন, “ছবির আবার শ্লীল-অশ্লীল হয় নাকি!”

লেখক রাধামাধব মণ্ডল বলেন, “আট বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেছি এই দেহজীবিদের নিয়ে। তাঁদের সঙ্গে বেরিয়ে কাছ থেকে দেখেছি তাঁদের জীবন যাপন ও যন্ত্রণাকে। তাঁরাই অসুর রাজত্বকে থামিয়ে রেখেছে। তা না হলে ধ্বংস হয়ে যেত অনেক কিছুই। এমন ঈশ্বরীদের ছুঁয়ে বড়ো হয়েছেন অনেকেই। অথচ সেটা প্রকাশ্যে স্বীকার করার ক্ষমতা নেই কারও। তাঁদের নিয়ে লিখলে, চর্চা করলে ছিঃ ছিঃ রব ওঠে। আর তাঁদের অন্ধকারে ভোগ করতে, এ সমাজের সিংহভাগ মানুষ আজও ছুটে বেড়ান। তাতে কোনও বিতর্ক হয় না। সত্যি মুখ আর মুখোশ খুলে পরে এই ভয়ে। তবুও আমি আমার চর্চায়, সেই মাটি মায়ের কথাই তুলে এনেছি।”

লেখকের স্পর্ধিত উচ্চারণই বলে দেয়, এতে বিতর্কের ঝড় উঠবে। বইয়ের আলোচনায় উঠে এসেছে দেহচর্চার সেকাল ও একালের ছবি। বার্ণিক প্রকাশন থেকে প্রকাশিত এই বইটির নামাঙ্কন করেছেন অর্পন। প্রচ্ছদ তপন সাহার করা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here