মনিরুল হক, কোচবিহারঃ
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রকের উদ্যোগে কোচবিহারে তিনদিনব্যাপী কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনের জন্য কোচবিহার রাজবাড়িকে বেছে নিয়েছে মন্ত্রক। কিন্তু সেখানেই বিপত্তি। কোচবিহার জেলার রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের মনে আঘাত লেগেছে তাতে। ইতিমধ্যেই কোচবিহার জেলা শাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
শেষমেষ শনিবার সকাল থেকে রাজবাড়ির সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসে অনুষ্ঠান রাজবাড়ির ভেতর থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছে ‘দি গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’ এর কয়েক হাজার কর্মী সমর্থক। ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা রাজবাড়ি এলাকায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি তারা। সন্ধ্যেবেলা রাজবাড়িতে আলো এবং বক্স বাজানো শুরু হলে তারা বিক্ষোভ দেখায় এবং বক্স বাজানো বন্ধ করে দেয়।
রাজবংশী সমর্থক এবং গ্রেটার নেতা অমল চন্দ্র দাস বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত রাজবাড়ী থেকে এই সমস্ত আয়োজন সরে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত কর্মী-সমর্থক রাজ বাড়ির সামনে বসে বিক্ষোভ দেখাবেন। কোনমতেই রাজ বাড়ির ভেতরে এই অনুষ্ঠান করতে দেওয়া যাবে না।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রকের ব্যবস্থাপনায় কোচবিহার রাজবাড়িতে হতে চলেছে কেন্দ্রীয় মহোৎসব। আর এই মহোৎসবের ফলে কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম স্থাপত্য কোচবিহার রাজবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিভিন্ন মহল।
আরও পড়ুনঃ দল ছাড়লেন তৃণমূলের জলপাইগুড়ির জেলা সাধারণ সম্পাদক ডালিম রায়
হেরিটেজ আইন অনুসারে, কোনও হেরিটেজ স্থাপত্য ঢাকা পড়ে যায় এইরকম ভাবে উক্ত স্থাপত্যের চারপাশে কোনও কিছু নির্মাণ করা যাবে না। অভিযোগ, এই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আয়োজক সংগঠন নিজের মন মর্জি মতো কাজ করে চলেছে। এইভাবে রাজবাড়ীকে ব্যবহার করলে তা কোচবিহার মহারাজা সহ সমগ্র কোচবিহারবাসীর অপমান।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রলহাদ সিং প্যাটেল, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এই অনুষ্ঠান বন্ধ করার দাবি জানিয়ে কোচবিহার জেলা শাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে দি গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন। এখনও পর্যন্ত প্রশ্নের কোনও সদুত্তর না পাওয়ায় তারা আন্দোলনে নেমেছে।
আরও পড়ুনঃ কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজে বাদ বাংলা, উঠছে প্রশ্ন
গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বংশী বদন বর্মন এই বিষয়ে আলোকপাত করে বলেন, ভারত ভুক্তির চুক্তি অনুসারে ভারত সরকার কোনও অবস্থাতেই কোচবিহারবাসীর ভাবাবেগে আঘাত করতে পারবে না, কোচবিহারে অবস্থিত কোনও প্রতিষ্ঠান বা স্থাপত্য অবমাননা করতে পারবে না। অনুষ্ঠান হলে প্রচুর মানুষ ভেতরে পৌঁছাবে, একই সাথে বেশ কিছু হকাররা থাকবেন, সে ক্ষেত্রে রাজবাড়ির পরিষ্কার পরিছন্নতা গরিমা এবং ঐতিহ্য নষ্ট হতে পারে। এখনও পর্যন্ত রাস্তায় বসে আছেন সংগঠনের সদস্যরা।
এই প্রসঙ্গে সাংসদ নিশিথ প্রামাণিক বলেন, যারা এই বিরোধিতা করছে তারা তৃণমূল কংগ্রেসের টাকায় লালিত পালিত হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতী। এর আগেও ভিক্টোরিয়ার সামনে এরকম একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক বিরোধিতা তৈরি করছে তৃণমূল।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584