নিজস্ব সংবাদদাতা,ঝাড়গ্রামঃ
করোনা আঁচ এবার হুল দিবসেও। এবার বাধ সাধল গ্রামবাসীরা। তাদের সাফ কথা, নিয়ম মেনে পুজো হোক। কিন্তু ভিড় করে মেলা করতে দেব না। মঙ্গলবার হুল দিবস।প্রতিবছরই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাড়ম্বরে পালিত হয় হুল দিবস। ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কেচন্দা গ্রামের কেচন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হুল দিবসের জন্য তৈরি হয় মঞ্চ।
এবছরও সেই মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। হঠাৎ করেই গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে পুলিশের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তারা জানিয়ে দেয়, এখানে এবছর হুল দিবস করা যাবে না। তারপরেই গ্রামবাসীরা পুলিশের উপস্থিতিতেই মঞ্চ তৈরির জন্য যে সব কাঠের বল্লী এবং বাঁশের খুঁটি পোতা হয়েছিল, তা উপড়ে ফেলে দেয়। এরপরই ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিবছর সরকারিভাবে ঝাড়গ্রাম জেলায় সাড়ম্বরে পালিত হয় হুল দিবস। ৩০ জুন মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হত হুল দিবস। ১ জুলাই পর্যন্ত দুই দিন ধরে চলত এই অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহিদ বেদীতে মাল্যদান , আদিবাসী ও অন্যান্য লোকশিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন , সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস শীর্ষক প্রদর্শনী সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুনঃ আজ থেকে খুলে গেল শিলিগুড়ির রেগুলেটেড মার্কেট
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরবের নেতৃত্বে নিজেদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গোটা সাঁওতাল সমাজ। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ভাগনডিহি গ্রামে সমাবেশ করে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য গঠনের শপথ নিয়েছিলেন তাঁরা। সে দিনই নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে বড়লাটের সঙ্গে দেখা করতে রওনা হয়েছিলেন কলকাতা। পরের দিনগুলিতে বিদ্রোহের আঁচে ঘুম ছুটেছিল ইংরেজ সরকারের।
আরও পড়ুনঃ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন
বিদ্রোহ দমনের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে ইংরেজরা হত্যা করেছিল প্রায় ৩০ হাজার সাঁওতাল যুবককে। ৩০ জুন দিনটির সঙ্গে তাই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের আবেগ জড়িয়ে। প্রতিবছরই দিনটি নিজেদের মতো করে পালন করেন তাঁরা। সরকারি স্তরেও হয় কিছু অনুষ্ঠান। গ্রামবাসীরা হুল দিবসের মঞ্চ তৈরির খুঁটি উপড়ে ফেলায় কার্যত চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে জেলা প্রশাসনকে।
কেচন্দা গ্রামের বাসিন্দা সীতানাথ মাহাতো বলেন, ‘এখানে অনুষ্ঠান হলে বহু জায়গার মানুষ আসবে। বহু মানুষের জমায়েত হবে। আমাদের গ্রামের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে যেমন বৈতায় ৪ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। অনুষ্ঠান হলেই সকলে অনুষ্ঠান দেখার জন্য ভিড় জমাবে। আমরা গ্রামের লোক গ্রামে রয়েছি, ভালো রয়েছি, সুস্থ রয়েছি । এখানে অনুষ্ঠান হলে বাইরের লোক এলেই আমাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা এখানে এবছর অনুষ্ঠানে করতে দেব না।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584