শুভময় সেন
মূর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে তখনো চাপ চাপ রক্তের দাগ। ভাণ্ডারদহ বিলে তখনো ডুবুরি ডুব দিয়ে তুলে আনতে পারে নি সব শবদেহ।মুর্শিদাবাদ জেলা সহ গোটা রাজ্য ডুবে আছে শোকে।প্রতি ঘরের টিভিতে খোলা খবরের চ্যানেল। শুধু আপডেট আর আপডেট ।তখনো জিজ্ঞাসা আর কত আর কত? এরমধ্যে ঝটিকা সফরে দুর্ঘটনার দিন সোমবার ঘটনাস্থল ঘুরে মঙ্গলবার সকালে কলকাতা ফিরে গিয়েছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী।তখনো ক্ষতিপুরণের টাকা পৌঁছায় নি সব নিহতের পরিবারের হাতে। তারই ফাঁকে মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালেই রিতিমত ঘটা করে নিহত দেহগুলি শনাক্ত করিয়ে ময়নাতদন্ত করিয়ে আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়াই যাদের কাজ সেই ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে রোগিসহায়ক কাজে নিযুক্ত কর্মী সহ সেদিনের শবদেহ ময়নাতদন্তের কাজে যুক্ত ডোমকে পর্যন্ত তাদের কর্তব্যকে সাবাস জানিয়ে দামী শাল দিয়ে সংবর্ধনা জানালেন জেলাশাসক স্বয়ং।বাধ্য ছেলের মত সমগ্র অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেন জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ সহ অন্যান্য সরকারি আধিকারিকেরা ।দূর্ভাগ্যবশত ঐ অভিশপ্ত বাসে ছিলেন জেলার একজন পুলিশ কর্মী ও। ইতিমধ্যে যার মৃতদেহ শনাক্ত করে গিয়েছেন তার বাড়ীর লোক। সেইসময় হাসপাতালের বাইরে মরা কান্নায় কান পাতা দায় আর ভেতরে সাহেবদের এই অনুষ্ঠান ঘিরে হাসি হাসি মুখে হ্যান্ডশেক ও হাততালির জোয়ার।
বিরোধীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে ক্ষোভ প্রকাশ করে।তাদের কথামত হাসপাতালের কর্মীরা তো তাদের নির্দিষট কাজের বাইরে তো কোন বিশেষ কাজ করেন নি তাহলে কেন এই সংবর্ধনা? আসলে এই সংবর্ধনা জানিয়ে সরকারি কর্মীদের একাংশের ফাঁকিবাজি শাল চাপা দিলেন আত্মপ্রচারক মুর্শিদাবাদ জেলার জেলাশাসক পি উল্গানাথন।জেলার বিদ্দজনেরা এই কাজকে ধিক্কার জানিয়েছেন।দুর্ঘটনাগ্রস্থ বাসটির ব্যাপারে তদন্তের ব্যবস্থা না করে যে কাজটা দুদিন পরে করলেও কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হোতো না সেই কাজটাই সাত তাড়াতাড়ি কেন করতে গেলেন জেলাশাসক সেই প্রশ্নই তুললেন তাঁদের কেউ কেউ। বিশেষত যেখানে ঐ অনুষ্ঠানের ২৪ ঘন্টা বাদে অর্থাৎ বুধবার খাল থেকে উদ্ধার করে সেখানে এসে পৌঁছবে সোমবারের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের নিহত যাত্রী তরুণ চিত্রশিল্পী ঋষিকেশ শর্মার মরদেহ। তার ও ২৪ঘন্টা পরে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার জেনিয়া রহমান হাতে পাবে তার খাল থেকে উদ্ধার হওয়া বৃদ্ধ বাবা আব্দুল মালিকের দলাপাকানো নিথর মরদেহ সেখানে এই সংবর্ধনার উদ্দেশ্য কি? নাকি সবটাই কর্পোরেট ধাঁচে পার্শেল ডেলিভাড়ি করবার মতো স্বজন হারানোর বেদনায় মুর্ছা যাওয়া মানুষজনকে খাল থেকে দেহ উদ্ধার করিয়ে ময়নাতদন্ত করিয়ে হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা গুঁজে দিয়ে বডি ডেলিভারি করানোটাই ছিল তাদের কাজ। যাতে মুখ্যমন্ত্রী খুশি হয়ে ‘সাবাস’ জানিয়ে তাদের প্রমোশনের সুবন্দোবস্ত করেন সেদিকেই লক্ষরেখেই আমলাদের এই উদ্যোগ।যেখানে ‘মৃত্যু’ শুধুই একটা শব্দ ছাড়া কিচ্ছু নয়।শোক পালন তো দুরস্ত।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584