পিয়া গুপ্তা, উত্তর দিনাজপুরঃ
“ও তার গন্ধ না থাক যা আছে সে নয় রে ভুয়ো আভরণ।” আক্ষরিক অর্থেই রামপ্রসাদী এই শ্যামাসংগীতের মিল খুঁজে পাওয়া গেল রায়গঞ্জের কাঞ্চনপল্লীতে। প্রকৃতির লাল জবা ফুলের বদলে তৈরি কাপড়, সুতো ও প্ল্যাস্টিক দিয়ে তৈরি সুদৃশ্য লাল মালা। শ্যামা মায়ের গলায় ঝোলাতে এখন চরম ব্যস্ত মালাকার শিল্পীরা। মূলত বাড়ির মহিলারাই এই কাজ করে থাকেন।
তাদের সাথে সহায়তা করে তাদের ছেলেমেয়েরাও। পুজোর এই কটাদিন নাওয়া খাওয়া ভুলে তৈরি করে চলেছেন হাজারে হাজারে লাল মালা। যা পাড়ি দেবে জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন শহরে। এই মালাই শোভা পাবে মন্ডপে মন্ডপে কালীমাতার গলে। আর তখন মনটা খুশীতে ভরে উঠবে তাদের। হোক না দুপয়সা কম রোজগার তাদের তৈরি মালাতেই তো মা পূজিতা হবেন।
রায়গঞ্জ শহরের সুভাষগঞ্জ, কাঞ্চনপল্লী, পালপাড়া এলাকায় বেশ কিছু পরিবার বংশ পরম্পরায় তৈরি করে চলেছেন বিভিন্ন দেবদেবীর গলার মালা। মূলত কাপড়, কাগজ, প্ল্যাস্টিক ও সুতো দিয়ে তৈরি করা হয় এই মালা। বিশ্বকর্মা পুজো থেকে এই মালার মরশুম শুরু হলেও কালী পুজোর সময় বাড়তি কাজ ও কিছু বাড়তি রোজগার হয় মালা তৈরি মালাকার শিল্পীদের। এই সময় লাল মালার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। চোখলতা, পাঁচফুল, জবাফুল রজনীলতা সহ বিভিন্ন ধরনের লাল মালা তৈরি করেন এরা। ডজন হিসেবে মজুরি মেলে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। যা খাটুনির তুলনায় খুবই যৎসামান্য।
সংসারের কাজ সামলে বাকিটা সময় এই মালা তৈরির কাজ করেন বাড়ির মহিলারা। মজুরি খুবই কম মেলায় বর্তমানে এই কাজ থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে লাল মালার প্রচুর চাহিদা থাকলেও শিল্পীর অভাবে তার যোগান দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা। একথা স্বীকার করে নিয়েছেন রায়গঞ্জের পাইকারি মালা ব্যবসায়ী শঙ্কর মালাকার। যেকজন শিল্পী এখন এই মালা তৈরির কাজে যুক্ত রয়েছেন তারা নেহাতই জাতিগত পেশার টানে করে চলেছেন। রোজগার খুবই কম হলেও যখন এই মালাই মায়ের গলায় দেখেন তখন খুশীতে মনটা ভরে ওঠে, এমনই অভিব্যক্তি প্রকাশ পেল মালা তৈরিতে মায়ের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া স্কুল ছাত্রী পুনম মন্ডলের।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584