বিজেপির সংকল্প যাত্রা ঘিরে গণ্ডগোলে নিহত তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী

0
43

মনিরুল হক, কোচবিহারঃ

গান্ধী সংকল্প যাত্রাকে ঘিরে বিজেপি-তৃণমূলের সংঘর্ষে মজির উদ্দিন সরকারের নামে এক তৃণমূল কর্মী মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় পর থেকেই থমথমে পাতলাখাওয়ায় শুটিং ক্যাম্প এলাকার পরিবেশ। গতকাল রাত থেকে ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। রাত পোহাতে না পোহাতে এলাকার মানুষ কাতারে কাতারে মজিরউদ্দিনের বাড়িতে তাকে দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করে।

Development minister at the house of dead tmc worker | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

পরিবার সুত্রে জানা গেছে, তৃণমূল কর্মী মজিরউদ্দিন সরকারেই সংসারের একমাত্র উপার্জন করার লোক ছিল। সবেমাত্র সুখের মুখ দেখতে শুরু করেছিল গোটা পরিবার তার মধ্যেই পুনরায় দুঃখ নেমে আসলো তাদের দুয়ারে। গোটা রাত স্বামী মজির উদ্দিন সরকারকে খাওয়ানোর জন্য রান্না করে অপেক্ষা করে ছিলেন স্ত্রী আজিজা আফরোজা বেগম। শুক্রবার সকালে স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পান তিনি। ডুকরে কেঁদে ওঠা চোখের ভাষায় বুঝতে অসুবিধা হয়নি তার বলিদানের ইতিহাস। তার এই মৃত্যুতে অনাথ হয়ে গেল তার তিন পুত্র। তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছেলেটি ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। স্বামী হারা হওয়ার কি যন্ত্রণা তা একমাত্র স্ত্রী বোঝে। সাজানো সংসারের নিমেসের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেল।

স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ করে বলেন, গতকাল ছিল বিজেপির সংকল্প যাত্রা, সেই যাত্রা কোচবিহারের দিকে ফেরার পথে সাংসদ নিশীথ প্রামানিকের উপস্থিতিতে তাঁর সাথে ১০০বেশী বাইকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিজেপি সমর্থকরা পাতলাখাওয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় থাকা তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও কর্মীদের বেধড়ক মারধর এবং বোমাবাজি করে। সেইসময় অনেক তৃণমূল কর্মী ছোটাছুটি করে প্রানে বাঁচলেও রেহাই পাননি মজিরুদ্দিন সরকার। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে কোচবিহারের একটি বেসরকারি নাসিংহোমে ভর্তি করলে গতকাল তাঁর রাতেই মৃত্যু হয়।

শুক্রবার সকালে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ মৃত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী মজিরউদ্দিন সরকারের পরিবারের লোকেদের সাথে দেখা করতে ছুটে গেলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তার আসার খবর পেয়ে স্থানীয় এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের নিয়ে তার বাড়িতে ছুটে যান। এদিন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের ছেলে সহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
এদিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, দুঃখ প্রকাশ করার ভাষা নেই। যেভাবে বিজেপির হার্মাদরা গান্ধি সংকল্প যাত্রার নামে সন্ত্রাস যাত্রা করছে বিভিন্ন জায়গায় তা ন্যাকার জনক। মানুষকে মারধর করছে খুন করছে । যেই গান্ধীজিকে ওরা খুন করেছিল আবার সেই গান্ধীজীর ছবি নিয়েই নিজেদের মাটি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। ওদের এই নাটক মানুষ বুঝে গেছে। পাশাপাশি কোচবিহারের বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ করেন মন্ত্রী বলেন,বিজেপির সভানেত্রী মালতি রাভা ও নিশীথ প্রামানিককে ফুলনদেবী এবং হাজী মাস্তানের সাথে তুলনা করেন তিনি। এইভাবে সারাটা জেলায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই বাহিনী। তিনি আরো বলেন, “এই ঘটনায় যারা দোষী তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।”

যদিও তৃণমূল এই দাবিকে আমূল দিতে রাজি নয় বিজেপি নেতৃত্ব। এবিষয়ে কোচবিহার লোকসভার সাংসদ নিশীথ প্রামানিক বলেন,“সেখানে কোন বিজেপি তৃণমূল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেটি। একটি স্বাভাবিক মৃতুর মতো সামান্য ঘটনা নিয়ে তাঁরা রাজনীতি শুরু করেছে যা মটেই কাম্য নয়।”
মৃত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী মজির উদ্দিন সরকারের স্ত্রী আজিজা আফরোজা বেগম বলেন, “আমার স্বামী কে যারা খুন করেছে সেই সব খুনিদের উপযুক্ত কঠিনতম শাস্তি চাই।

আরও পড়ুনঃ খুনে অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করতে গিয়ে পুলিশ- জনতা খন্ডযুদ্ধ ময়নায়

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাতলাখাওয়া এলাকায় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এরই মাঝে পড়ে মৃত্যু হয় ওই এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী মজির উদ্দিন সরকারের। এই সংঘর্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের চারটি কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। ওই রাতেই ভাঙচুর হওয়া দলীয় কার্যালয় গুলি পরিদর্শনে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here