ড. পি বি সালিমের স্কলারশিপ প্রদানে অভিনব উদ্যোগ

0
2039

ফারুক আহমেদ:

বুদ্ধিজীবি ও আধিকারিকরা সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের হয়ে স্কলারশিপের আবেদন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মাঠে নামলেন। জেলায় জেলায় সংঘটিত করছেন সচেতনতা শিবির। স্কলারশিপের আবেদন সংখ্যা বাড়িয়ে আরও বেশি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বৃত্তি পাইয়ে পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলাই এর মূল লক্ষ। এবার সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে স্কলারশিপের আবেদনে অনীহা দেখা দিয়েছে। যে কারণে এই জনসচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত গমের তৎপরতায় দফায় দফায় আয়োজিত হচ্ছে সচেতনতা শিবির। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই কর্মতৎপরতা চলবে জেলায় জেলায়। খোদ বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান ড. পি বি সালিম সাহেবের প্রতিনিধিত্বেই এই কর্মযজ্ঞ চলছে যার ফলে এই বিশেষ তৎপরতার জন্য এবার আবেদনের সংখ্যাও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
ড. পি বি সালিম নিজে স্বয়ং মুর্শিদাবাদে গিয়ে দায়িত্ব নিয়ে সচেতনতা শিবির করেছেন। সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের কাছে বৃত্তির জন্য আবেদন করার কথা তুলে ধরছেন। তিনি এই উদ্যোগের মাধ্যমে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার শুভ প্রয়াস নিয়েছেন। তিনি রাজ্যের জেলার প্রত্যান্ত এলাকায় গিয়ে আয়োজন করছেন আলোচনাসভা। বোঝানো হচ্ছে সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের এবং পরিবারদেরকে। এই আশুকর্মের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপের আবেদন সংখ্যা বাড়িয়ে রেকর্ড সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি পাইয়ে দেওয়া। অবশ্য এ উদ্যোগকে সফলতা দিতে তাঁদের কর্ম-পরিকল্পনা সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে বিশিষ্টদের ধারণা। এই কাজে ড. পি বি সালিম পাশে পেয়েছেন সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্তনিগমের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিকর্তা আবিদ হোসেন, মাদ্রাসা পর্ষদের সচীব রেজাউল করিম তরফদার এবং একাধিক ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের। এই কর্মে বিত্ত নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃগাঙ্ক বিশ্বাস সহ অন্য আদিকারিকদের ভূমিকাও বহূল প্রশংসা পাবার যোগ্য। তাঁরা নানা দিক থেকে মতামত ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে সাহায্য করছেন।
সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম দপ্তরের হাত দিয়ে তা বন্টন করা হয়। গতবছর প্রায় ২৫ লক্ষ সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেছিল। পেয়েছিল মাত্র ১২ লক্ষ ৬০ হাজার। স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত হয় প্রায় অর্ধেকেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী। ফলে এবার আবেদনে ভাটা পড়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে এবারও যদি তাঁরা বৃত্তি থেকে বাদ পড়েন। এ কারণেই তৎপরতার সঙ্গে এগিয়ে এসেছে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের আধিকারিকরা ও বুদ্ধিজীবি মহল।
এবার রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে কোনও ছাত্র-ছাত্রী এবার শূন্য হাতে ফিরবে না। কেন্দ্র সরকার যাঁদের বৃত্তি দেবে না তাঁদের সবাইকে রাজ্য সরকার বৃত্তি দেবে। এই সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরছেন ড. পি বি সালিম। এই সু-সংবাদ শুনে সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে চওড়া হাসি ফুটেছে। শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় পিছিয়ে আছে তা মুসলিম ও অমুসলিম বুদ্ধিজীবি ও আধিকারিকরা সকলেই স্বীকার করেন। এই ধরণের বৃত্তি চালু হওয়ায় পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মউদ্দীপনে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে এবং স্কুল ছুট কমাতে সাহায্য করবে বলে বিদগ্ধদের ধারণা। যা পক্ষান্তরে তাঁদের শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করতে সাহায্য করবে এই প্রয়াসের জন্য তা বলাই যায়।
বলাবাহুল্য রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর গবেষণায় বৃত্তি দেওয়ার ব্যাপারে কিছুদিন আগেই একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারের মানবিকতার মুখ শিক্ষার্থী মহলে ধরা দিয়েছিল। যাঁরা রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল ফেলোশিপ, জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ, মৌলানা আজাদ ফেলোশিপের মতো নানা ধরণের ফেলোশিপ পাচ্ছেন, তাঁরা ছাড়াও অনেক গবেষক আছেন যাঁরা কোনও ধরণের ফেলোশিপ পান না। এঁরা মূলত নন নেট ও অসংরক্ষিত ছাত্র-ছাত্রী। এঁদের জন্য রাজ্য সরকার ফেলোশিপের ঘোষণা করেছে। এমফিলদের জন্য মাসে পাঁচ হাজার ও পিএইচডিদের জন্য মাসে আট হাজার টাকা। রাজ্য সরকারের স্কলারশিপ সংক্রান্ত এই ধরণের জনমুখী উদ্যোগ ছাত্র-ছাত্রীদের পঠনপাঠনে আগ্রহী করে তুলবে এবং গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ মাত্রা দান করবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর গৌতম পাল।
বৃত্তি পাওয়ার জন্য অন-লাইনে আবেদন করতে হয়। সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত অন-লাইনে আবেদন করা যাবে। এবছর যারা এখনও আবেদন করতে পারেনি তাঁরা এখনই আবেদন করুক বৃত্তি পেতে এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে বিত্ত নিগম বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত যে সচেতনতা শিবির চলবে সেখানেও বিশেষ উদ্যোগে অন-লাইন আবেদন করার সুযোগ থাকছে। অনেক এলাকায় অন-লাইন আবেদন করার সুযোগ নেই তাই সংখ্যালঘু বিত্ত নিগম এই উদ্যোগ নিয়েছে।
গত বছর আবেদন করেও যে সব ছাত্র-ছাত্রী বৃত্তি পায়নি তাদেরকেও এবার আবার আবেদন করার সুযোগ দিচ্ছে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম। বিশেষ ভাবে সচেতন করতে ড. পি বি সালিম সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান বললেন ” এবার আর হতাশ হওয়ার আর কোনও কারণ নেই। কারণ, কেন্দ্র যদি সকল আবেদনকারীদের স্কলারশিপ না দেয়, তাহলে রাজ্য সরকার দেবে।”
এই বার্তা সংখ্যালঘুদের মনে আশার আলো দেখাল।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here