নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ শ্রুতিনাটক বা বেতার নাটক নিয়ে সম্প্রতি এক কর্মশালার আয়োজন করেছিল বাচিক শিল্প চর্চার মুক্ত দিগন্ত। মুর্শিদাবাদ জেলার বাচিক চর্চায় ২০১৩ সাল থেকে যারা অগ্রণী ভুমিকা নিয়ে চলেছে জেলা তথা রাজ্যে।পয়লা এপ্রিল বহরমপুর রবীন্দ্র সদনে জেলার প্রায় ৯০ জন উৎসাহী নারী পুরুষ এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বসু ও ঊর্মিমালা বসু। বর্ষীয়ান এই দুই শিল্পীর হাত ধরেই একসময় বাংলা জুড়ে শ্রুতি নাটকের ব্যাপ্তি ঘটেছে।সম্প্রতি বাচিক শিল্পের এই শাখার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে।যদিও সারা বাংলা জুড়ে অনুষ্ঠানের বহর বেড়েছে অনেক। কিন্তু গুণগত মান গিয়েছে কমে এরকমটাই মনে করছেন জেলার সংস্কৃতি মহলের একাংশ। তাঁদের মতে একপ্রকার বিনাচর্চায় সহজে বাজিমাত করবার রাস্তায় হাঁটছেন শিল্পীরা। পারস্পরিক পিঠ চাপড়ানির মধ্য দিয়ে ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছে শক্তিশালী এই বাচিক মাধ্যম বলে মনে করছেন তাঁরা। জেলার অন্য এক প্রান্তে জঙ্গীপুরের রঘুনাথগঞ্জে
শ্রুতিছন্দের আয়োজনে ২৪-২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে শ্রুতি উৎসব।প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের জন্য সেখানেও আয়োজন করা হয়েছিল কর্মশালার। মুর্শিদাবাদ জেলায় একসময় অভিজিৎ সরকার, সীমা সরকার, তরুণ সরকার, রাখী তপাদার, সৌমেন চট্টোপাধ্যায়, অর্চিতা ঘোষ, প্রদীপ আচার্য অনিন্দিতা ঘোষ প্রমুখ শিল্পীদের শ্রুতি নাটক শুনতে জেলাবাসির আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠছে প্রায় প্রতিদিন।সেখানে শ্রুতি নাটকের চর্চাও হয়। প্রশিক্ষক আছেন শিক্ষার্থী আছেন।অনুষ্ঠান ও আছে। কিন্তু সেখানে বাইরের কোন দর্শক প্রায় নেই। দর্শক বলতে সংস্থার অভিভাবক
অভিভাবিকা ও তাদের পরিচিত মানুষ জন। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংস্থার জোর করে টিকিট গছিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ও শোনা যায় যেমন তেমন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সূযোগ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের গোঁসা করার অভিযোগ ও করেন প্রশিক্ষকেরা। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাচিক শিল্প এমনটাই মনে করেন জেলার সংস্কৃতিমনস্ক মানুষেরা। তবে দর্শকের আগ্রহের ঘাটতি প্রসঙ্গে সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবকেই মুলত দায়ী করেন বর্তমানে বাচিক শিল্প চর্চার প্রশিক্ষক তথা নাট্যব্যক্তিত্ব অভিজিৎ সরকার। শ্রুতিছন্দের প্রশিক্ষক ইন্দ্রনীল রায়, বাচিক শিল্পী অর্চিতা ঘোষ, অভিনেতা তরুণ সরকার সহমত পোষন করেন। “চর্চার সঠিক পন্থা দেখানোর জন্য এই ধরনের কর্মশালার আয়োজন এই সময়ে অত্যন্ত প্রয়োজন” বলে মনে করেন অভিজিৎ বাবু। শ্রুতিছন্দের প্রশিক্ষক ইন্দ্রনীল রায় মনে করেন “চেনা মুখের থেকে অচেনা মুখের গ্রহণ যোগ্যতা বেশি হওয়ায় এই ধরনের কর্মশালার আয়োজন। ফলে পরবর্তিতে শিক্ষার্থীদের শেখানোটা অনেক সহজ হয়।“ তবে দীর্ঘদিনের মঞ্চাভিনেতা ও শ্রুতিনাট্য শিল্পী তরুণ সরকার মনে করেন “ শুধু স্ক্রিপ্ট পাঠ করে চলে গেলেই শ্রুতি নাটক হয় না।মঞ্চ নাটকের থেকে শ্রুতি নাটক অনেক বেশি কঠিন। তাই শিখতে হবে শ্রুতি নাটক। না শিখে শ্রুতি নাটক করা যায় না। এক্ষেত্রে অনেক বেশি দায় প্রশিক্ষকের ও।শুধু কর্মশালায় অংশ নিলেই হবে না। যা শিখলাম তার নিয়মিত চর্চা করলে তবেই উন্নতি হবে। না হলে কর্মশালায় অংশ নেওয়ার মানে হয় না“।অভিজিৎ বাবু মনে করেন আবৃত্তির ক্ষেত্রেও “ সমান ঘাটতির কারনেই সারা বাংলায় সুমন্ত্র সেনগুপ্তের বাইরে কোন পুরুষ আবৃত্তি শিল্পী উঠে আসছেন না। কিন্তু অনেকেই আবৃত্তির অনুষ্ঠান করছেন।“ বহরমপুরের কর্মশালায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও জেলার বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী অর্চিতা ঘোষ মনে করেন “শেখার কোন শেষ নেই।আর এই সমস্থ গুণীজনেরা যা শেখাবেন তা সারাজীবনের সম্পদ হয়ে থাকবে। সব শিল্পীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি অনুশীলন কিন্তু বড় পর্যায়। আপনার অনুশীলন যদি খুব শ্রদ্ধাভরে হয় আপনি মানুষকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। এর বাইরে কোন সত্যতা নেই।“ কর্মশালার পরের দিন জগন্নাথ বসু ও উর্মিমালা বসুর শ্রুতি নাটকের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন উপস্থিত বিজ্ঞজনেরা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584