ডঃ কুণাল সরকার:
গোটা রাজ্য জুড়ে এখন পরীক্ষার মরসুম। মাধ্যমিক সবে শেষ হয়েছে, এখন সামনে উচ্চ মাধ্যমিক। এছাড়াও অন্যান্য বোর্ডের পরীক্ষা এবং কলেজের পরীক্ষাও চলছে।পরীক্ষা কেন্দ্রিক আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যত কান্ড এই পরীক্ষা কে নিয়েই। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ ফেল প্রথার অবসান, Continuous Comprehensive Evaluation প্রথার প্রচলন, Grading system এর সূচনা কোনো কিছুই যে আমাদের এই দুর্বল শিক্ষা পরিকাঠামোই পরীক্ষা নামক পরিমাপক পদ্ধতির বিকল্প হতে পারে না তা ইতিমধ্যেই কম বেশি প্রমানিত। তাই পরীক্ষা এবং তার সাথে বেশি বেশি নম্বর পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা গণতান্ত্রিক দেশে বেশি বেশি ভোট পাওয়ার প্রতিযোগিতার সাথেই সমতুল্য। পরীক্ষায় কম বেশি অসাধু উপায় অবলম্বন চিরকালই ছিল। হাতে লেখা কাগজের টুকরো, পরবর্তীতে Xerox, Micro Xerox এই গুলি পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বনের প্রধান মাধ্যম ছিল। কিন্তু আধুনিক সময়ের মোবাইল তার What’sapp এই অসাধু উপায় অবলম্বনকে এক বৈজ্ঞানিক রিগিং এর মর্যাদা দিয়েছে। যাকে পরিভাষায় বলা যায় E-টুকলি। আজ পরীক্ষায় বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা এলে অভিশাপের ঘরে E-টুকলির পয়েন্ট টা নিশ্চয়ই আসত। একদিকে যেমন অসাধু বিষয় রুখতে technology-র ব্যবহার করা হচ্ছে তেমনই তার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে আর এটাই প্রকৃতির নিয়মে স্বাভাবিক। কিন্তু একটা জায়গায় একটু আশ্চর্য লাগছে। আমাদের সময় Class এর সবথেকে পড়াশোনায় খারাপ ছেলেরা টুকলি করত। তারা খুব বেশি কিছু পাবার আশায় নয়, কোনপ্রকারে পরীক্ষায় পাশ নম্বর টুকু তোলার জন্য তারা এই ধরনের প্রচেষ্টা অবলম্বন করত। এমন কি আমার এক সহপাঠীর কথা মনে পড়ে যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে বলত “ভাই পাশ নম্বর উঠে গিয়েছে আর তোর দেখে লিখার দরকার নেই”। আমার এক সহপাঠী বন্ধু যে বর্তমানে WBCS Officer তাকে দেখেছি ঐরকম এক সহপাঠীকে নিজের খাতা থেকে জোর করে লিখাতে কেননা ঐ সহপাঠীর ধারনা তার আর টোকার দরকার নেই কেননা সে তার পাশ মার্ক টুকু পেয়ে গিয়েছে। আর আজ শুনি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার জন্য, মেধা তালিকায় প্রবেশের জন্য Integrated পদ্ধতিতে টুকতে হচ্ছে।ভয় অবশ্য অন্য বিষয়ে, আমি আগে আমার অসাধু উপায় অবলম্বন করা যে সহপাঠীদের কথা বললাম তাদের কিন্তু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বৈজ্ঞানিক, অধ্যাপক হওয়ার উচচাশা ছিল না, কিন্তু এরা যারা মেধা তালিকায় নাম তোলার জন্য টুকছে, তারা তো ঐ integrated approach এর হাত ধরে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বৈজ্ঞানিক, অধ্যাপক হবে তখন আমার, আপনার মতন আম আদমীর কি হবে, এ তো পরীক্ষা সংকট নয় রীতিমত সামাজিক সংকট।আর এই সুকুমারমতী ছেলে মেয়েদের নিয়ে যারা খেলা করছে, ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদের মনে বিবেক তৈরীর বদলে বিষ তৈরী করছে, বিষ টা কিন্তু তাদেরকে ও গ্রহণ করতে হবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584