পিয়া গুপ্তা,উত্তর দিনাজপুরঃ
আগামীকাল ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিনে এক বড় উদাহরন রাঙাপুকুরের শোভা।অদম্য জেদ ও ইচ্ছায় শোভা আজ সকল প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে দিয়েছে।
কারন ছোট বেলা থেকে শোভার মধ্যে ছিল আদম্য জেদ আর সেই জেদ ও মা স্বরস্বতী আর্শিবাদে সে মানুষ গড়ার কারিগরের কাজ করছেন।কারন ছোট বেলা থেকেই শোভার দুই হাত কর্মক্ষমহীন সে তার নিজের দুই পা দিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে গেছে।ছোটোবেলা থেকেই বহু কষ্টে মানুষ শোভা।শোভার বাবা মলিন মজুমদার হাঁস-মুরগির খাবারের দোকানে কাজ করেন।ছোট্ট থেকে মেয়ের প্রতিবন্ধকতায় মনে মনেই খুব কষ্ট পেতেন মা শান্তি দেবী কিন্তু শান্তি দেবীর কড়া প্রতিজ্ঞা কিছুতেই হার মানতে দেবেন না শোভা কে।তাই পাড়া প্রতিবেশী যখন মুখ ফিরিয়ে হাসাহাসি করতো শোভাকে নিয়ে। তখন ছোট্ট মেয়ে শোভা কে নিয়ে বসে পড়তেন মা।হাত নেই তো কি হয়েছে পা তো আছে।
ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, চেষ্টা ও ইচ্ছাই মানুষের সব অসাধ্যকে বাস্তব রূপ দিতে পারে,সকল বাধা বিপত্তি প্রতিবন্ধকতা শত প্রতিকূলতার উর্ধ্বে মানুষের ইচ্ছা শক্তি ও সব প্রচালিত কথাগুলো বাস্তবে যে কতটা সত্যি তা প্রমান করে দেখিয়ে দিযেছিল রায়গঞ্জ রায়পুরের বাসিন্দা শোভা মজুমদার।দুই হাত অকেজ হওয়ায় সত্ত্বেও শোভা থেমে থাকেনি।প্রতিবন্ধকতা সে জয় করছে পা দিয়ে।ছোটবেলায় পায়ের দু’আঙুলের ফাঁকে মা শান্তিদেবী গুঁজে দিয়েছিলেন পেনসিল।ছোট্ট শোভা তখন থেকেই পা দিয়েই শ্লেটের ওপর লিখতে শেখেছিলেন অ, আ, ই, দীর্ঘ ঈ।আর এই ভাবেই হয়ে গেল শোভার পায়ে-খড়ি! আর এই ভাবেই শোভা এক সময় পা দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করলো।পা দিয়ে লেখা পড়া একের পর এক গন্ডি পেরিয়ে প্রতিযোগিতা মুলক পরীক্ষার সাফাল্য পেয়ে শোভা বর্তমানে রাঙ্গাপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতাই অর্জন করেনি শোভা।পা দিয়েই জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে শেখিয়েছিল মা তাকে।তাই সবজি কাটা কিংবা মশলা বাটা সব কিছুই শোভা তার দুটো পা দিয়ে শিখে নিয়েছে।নিজেকে করে ফেললো সব দিক থেকে পারদর্শী ।জন্মলগ্ন থেকে হাত দুটি অকেজো রায়গঞ্জের রায়পুরের এক হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে শোভা।তাদের পরিবারে দুই ভাই ও দুই বোন রয়েছে। কিন্তু এই প্রতিবন্ধকতাকে তার জীবনের বাধা সৃষ্টি করতে না পা দিয়ে কাগজ কলম তুলে নেই সে।শুধুমাত্র যোগ্যতার দিক অনন্য বহু দিক দিয়ে অনেক স্বাভাবিক মানুষকে হার মানাতে পারবে।২০০০ সালে রায়গঞ্জের মোহনবাটি পার্ব্বতী উচ্চবালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ২০০২ সালে দারিকা প্রসাদ উচ্চবালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক, সুরেন্দ্রনাথ মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে পরবর্তীতে ইতিহাসে এম এ পাশ করে সে। এরপরে চাকরির জন্য নানা জায়গায় অবেদন করে অসফল হয়ে অবশেষে ২০০৯ সালে প্রথমিক শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগের পরীক্ষায় অনন্য।সকল প্রতিযোগীর সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতার নিরিখে ২০১১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পায় শোভা তিনি এখন তার পাড়ার রাঙ্গাপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা।তার বিদ্যালয়ে সাতজন শিক্ষক ও একশো সাত জন ছাত্র ছাত্রী রয়েছে।
সেই অনান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের মতো প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসেন অন্যান শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাত্র ছাত্রীদের হাত দিয়ে ব্লাক বোর্ডে লিখিয়ে পড়াশুনা শেখায় কিন্তু শোভা তার উল্টো হাতের বদলে সে পা দিয়ে ব্লাক বোর্ডে লিখে ছাত্র ছাত্রীদের পড়া শেখাচ্ছেন।দিন মজুর বাবা সহ পরিবারের লোকজন তাদের মেয়ে শোভার এই সাফল্যে খুব খুশি।শোভা জানান চাকরি পাওয়ার মধ্যে দিয়ে সে নতুন জীবন শুরু করল।এদিকে রাঙ্গা পুকুর প্রথমিক বিদ্যালয়ের অন্যন্য শিক্ষকরাও শোভাকে সদর গ্রহন করেছেন এবং তারা জানান শোভার সাথে কাজ করে তারা ধন্য। ২০০৫ সালে তৎকালীন রাজ্য পাল বীরেন জেসার হাত থেকে রোল মডেল রুপে পুরুস্কার প্রাপ্ত শোভার শারিরীক আর্থিক সামাজিক প্রতিবন্ধকতা জয়ের এই নির্দশনে উদ্বুদ্ধ উত্তর দিনাজপুর জেলা বাসী।আগামীকাল ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস এই শিক্ষক দিবসে ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষা মহলে এই উদাহরণ।
আরও পড়ুনঃ জন্ম দিবসে উত্তম স্মরণ
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584