এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউঃ সাইড আর্টিস্টদের কেউ মহালয়ায় চরিত্র দেয় না-সঙ্ঘশ্রী

0
1097

মুখোমুখি নবনীতা দত্তগুপ্ত

চ্যানেলের এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার থেকে রেডিও জকি এমনকী সহ পরিচালনা- সব কাজেই সিদ্ধহস্ত সঙ্ঘশ্রী। আজ অভিনেত্রী তিনি। কেমন এই জার্নি? আড্ডা জমল পাক্কা দেড় ঘণ্টার।

নবনীতাঃ সোশ্যাল মিডিয়ায় তোমার মা দুর্গার সামনে একটা গিন্নি লুকের ছবি বেশ নজর কাড়ছে। রহস্যটা কী?

সঙ্ঘশ্রীঃ আমি তো গিন্নিই। দর্জি পাড়ার মিত্র বাড়ির বউ আমি। গিন্নিই তো। আসলে লোকনাথ আমার বন্ধু। ওর অনেকদিনের ইচ্ছে আমায় সাজিয়ে ফোটোশুট করবে। হবে হবে করেও হচ্ছিল না। আমার বিয়েতে আমায় সাজানোর কথা ছিল ওর। কিন্তু একটা সিরিয়ালের কাজে লোকনাথ কলকাতায় ফিরতে পারেনি বলে সাজানোটা হয়নি ওর। এবার ওর সেই ইচ্ছাপূরণ হল।

Sanghashri | newsfront.co

নবনীতাঃ আমি ভেবেছিলাম হয়ত কোনও চ্যানেলে তোমায় দেখতে পাব মহালয়ার অনুষ্ঠানে।

সঙ্ঘশ্রীঃ এই শোনো নবনীতা, কোনও সাইড আর্টিস্টকে কেউ মহালয়ায় চরিত্র দেয় না। আর দুর্গা হিসেবে চ্যানেল সবসময়ই রোগা মেয়ে খোঁজে। তারা দুর্গাকে খোঁজে না। খোঁজে কোনও রোগা মেয়ে। আমাকে একটা কথা বলো তো, প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে আমরা যে মাকে দেখি তিনি কি রোগা? তাঁর কি ডাবল চিন নেই? মা দুর্গার ডাবল চিন। তুমি লক্ষ্য করেছো নিশ্চয়ই।

নবনীতাঃ একদমই তাই।

সঙ্ঘশ্রীঃ কিন্তু তুমি যেকোনও চ্যানেলের মহালয়াতে দেখবে স্লিম অ্যান্ড ট্রিম মা দুর্গা।

নবনীতাঃ তবে, অপা দি (অপরাজিতা আঢ্য) একবার দুর্গা হয়েছিলেন।

সঙ্ঘশ্রীঃ দারুণ মানিয়েছিল অপা দি’কে। আমাকে একটা কথা বলো তো? মহালয়া অনুষ্ঠানের মা দুর্গা হিসেবে কার কথা তোমার চট করে মনে পড়ে?

Sanghashri | newsfront.co

নবনীতাঃ ডিডি বাংলার মা দুর্গা। যাকে বেশিরভাগ সময়ে দেখা যেত, সংযুক্তা ব্যানার্জি। তা ছাড়া মা দুর্গারূপে হেমা মালিনিকে।

সঙ্ঘশ্রীঃ এক্স্যাক্টলি। আমারও তাই। সাম্প্রতিককালে যারা দুর্গা হয়েছে তাকে কতদিন মনে থাকে আমাদের? থাকে না। আসলে মানানসই হয় না তারা। তারা হয়ত দারুণ সুন্দরী। অসম্ভব প্রতিষ্ঠিত নিজেদের জায়গায়। কিন্তু সবাইকে তো দুর্গা হিসেবে মানায় না তাই না?

নবনীতাঃ ঠিক তাই। আচ্ছা তুমি তো মিত্র বাড়ির গিন্নি। খুব নাম আছে তোমার শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক পুজোর। বিয়ের পর প্রথম বছর পুজোর কথা মনে পড়ে?

সঙ্ঘশ্রীঃ আমার বিয়েই তো এই তিন বছর হল। মনে তো পড়েই। প্রথমত হিমশিম খেয়ে গিয়েছিলাম। কী করব আর কী করব না বুঝতে পারছিলাম না। আর খুব মন খারাপ হয়েছিল। কারণ মালদা আমার বাপের বাড়ি। সেখানে পাড়ার পুজোটায় দারুণ মজা হয়। সবাই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, হুল্লোড়, আড্ডা সবই চলে। বিয়ের পর প্রথম বছর সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে শাশুড়ি মা আমাকে খুব ব্যস্ত রেখেছিলেন। যাতে আমি কাজের ব্যস্ততায় কষ্ট ভুলে থাকতে পারি। গতবারও অনেক দায়িত্ব ছিল। এবার তো খুব একটা জাকজমক হবে না। মা তো নিজেই এবার এক মাস কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর মণ্ডপে উঠবেন। মহালয়ার এক মাস পর পুজো। ভাবা যায়!

Sanghashri | newsfront.co

আরও পড়ুনঃ এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউঃ পঁচিশ বছর আগে ‘নেপোটিজম’ শব্দটা জানলে অনেক কথা বলার ছিলঃ সোমা ব্যানার্জি

নবনীতাঃ এবার পুজোয় কী প্ল্যান?

সঙ্ঘশ্রীঃ আমি খুব একটা বেরোই না। আমার বর রোহন হুজুকে। ও বেরোয় খুব। আমিও তাই বেরোই। পরের দিনের পুজোর কাজ গুছিয়ে দিয়ে রাতে বেরোই। তবে, এবার ইচ্ছে আছে নবমী, দশমী মালদায় থাকব। রোহনের তেমনই ইচ্ছা। দেখা যাক। মায়ের কাছ থেকে এক জার মতো নারকেলের নারু আনব। মজা করব পাড়ায়। এটুকুই ইচ্ছে আছে। আমি কোনওদিনই প্ল্যান বানাই না পুজো নিয়ে। দু’বেলা দুটো নতুন শাড়ি-জামা পরতে পারলেই হল। এবার লক্ষ্মীপুজো অবধি ছুটি নিয়েছি। লক্ষ্মীপুজো অবধি থাকব মায়ের কাছে। আগেও যখন কলকাতায় চাকরি করতাম তখন পুজোয় মালদা যেতাম। যে যেখানেই চাকরিসূত্রে থাকত সবাই চলে আসত নিজের মুলুকে। এখনও তাই-ই হয়। আমিই এই দু’বছর ধরে বাদ মালদায় আমার পাড়ার আনন্দ থেকে। এবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে। মজা হবে।

Sanghashri | newsfront.co

নবনীতাঃ এবার একটু তোমার কাজের কথায় ফিরি। কেমন সাড়া পাচ্ছ ‘কী করে বলব তোমায়’ সিরিয়ালের ডলি চরিত্রতে?

সঙ্ঘশ্রীঃ দারুণ। এটা আমার পঞ্চম ধারাবাহিক। এত সাড়া এর আগে পাইনি। এর আগে রানু পেল লটারি, আমি সিরাজের বেগম, নজর, নীল সীমানা, প্রেমের কাহিনি করেছি। প্রথমা কাদম্বিনী করছিলাম। কিন্তু সময় নিয়ে সমস্যা হওয়ায় করতে পারলাম না। আজকাল মানুষ আমায় মাস্ক খুললেই চিনতে পারে। মাঝেমধ্যে বেরোলে কেউ কেউ এসে পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে চায়৷ আর কী চাই বলো তো? আসল তো দর্শক। তারা না ভালোবাসলে আমাদের অস্তিত্ব নেই। তারাই আমাদের টিকিয়ে রাখে বেসিক্যালি।

নবনীতাঃ একদম অন্য একটা প্রফেশন থেকে অভিনয়ে আসা। কেন এই পেশা বদল?

সঙ্ঘশ্রীঃ লোভ। ভাল অভিনয় করলে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় দেখতাম। তাই চলে এলাম অভিনয়ে। প্রথমে বড় পর্দাতেই কাজ করি। পরে ছোটপর্দা। রাজ চক্রবর্তীর হাত ধরেই আসা। তখন রাজ চক্রবর্তীকে অ্যাসিস্ট করতাম। ‘লে ছক্কা’ ছবিতে একটা রোল দেবলীনা দির করার কথা ছিল। সেটা দেবলীনা দি শুটিঙের কয়েকদিন আগে বলে করতে পারবে না। ওই সময়ে কারোকে পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। রাজ দা আমায় বলে করবি? পাড়ার রকবাজ মেয়ের রোল করি একটা। আর ব্যস, ওই শুরু। টুকটাক কাজ চলতেই থাকে। ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গেও অ্যাসিস্ট করেছি। এটা আরেকটা বড় পাওয়া।

আরও পড়ুনঃ মহালয়ায় এনা সাহার উদ্যোগে তৈরি ‘মহামায়া’

নবনীতাঃ বড় পর্দা দিয়ে তোমার অভিনয় শুরু। আজকাল ডাক পাও?

সঙ্ঘশ্রীঃ আমার কুড়িটা ছবি করা হয়ে গেছে। ছোট কিংবা বড় রোল মিলিয়ে। সিরিয়াল তো সবে শুরু করলাম। সিরিয়ালে আমি সাহানা দি’র ভূমিকার কথা ভুলব না। এই তো কদিন আগেও একটা কাজ করলাম প্রতীম ডি গুপ্ত’র ‘শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য’। খুব সাহসী একটা ক্যারেক্টার। খুব ডেস্পারেট। চরিত্রটা একজন ব্লু ফিল্ম অভিনেত্রীর। অন্য শেডও আছে চরিত্রটাতে। আমার এখন রিয়েল যা বয়স, তার থেকে ৩০ বছর বেশি বয়সের চরিত্র এটা। বরকে বলেছিলাম করব চরিত্রটা? বর বলল, এটা তোমার কাজ।

Sanghashri | newsfront.co

অসুবিধা কোথায়? ওর সাপোর্ট না পেলে হত না। ঋত্বিক চক্রবর্তীর পাশে দাঁড়িয়ে শট দিতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছিলাম। আমি এমনিতেও শট দেওয়ার আগে কাঁপি। আমি খুব নার্ভাস প্রকৃতির মানুষ। তবে, চিরঞ্জিত দা আমার ওই চরিত্রটা দেখার পর আমায় বলেছিলেন – “গুন্ডা তুই এত ভাল অভিনয় করিস জানতাম না তো।” আমি ধন্য এমন এক অভিনেতার কাছ থেকে এই কমপ্লিমেন্ট পেয়ে। এই মুহূর্তে বড় পর্দার কোনও কাজের খবর দিতে পারছি না। খবর পেলেই জানাব।

নবনীতাঃ তোমার অভিনেত্রী তকমা নিয়ে তার মানে কর্তা খুশি?

সঙ্ঘশ্রীঃ একশো ভাগ। আমায় রোহণ বলেছে- “আমি সংসার চালাচ্ছি। তুমি স্বপ্নপূরণ করো।” আর কী চাই?

নবনীতাঃ চাকরি ছেড়ে অভিনয়ে আসার জার্নিটা কেমন ছিল? খুব মসৃণ নাকি কণ্টকাকীর্ণ?

সঙ্ঘশ্রীঃ প্রথম ধাক্কা চেহারার জন্য পেয়েছিলাম। আমি বেশ মোটা। আর মোটা মানেই কমেডি রোল। কিংবা খুব রোগা মানেও তাই। কেন বলো তো? একজন মোটা অভিনেতাকে চরম সিরিয়াস রোল দিক না একবার, দেখুক না সে পারে কিনা? এই গতে বাঁধা ভাবনা থেকে আজও বেরোতে পারল না এই ইন্ডাস্ট্রি। যে শুভাশির মুখার্জি ‘হার্বার্ড’ করতে পারেন সেই শুভাশিস দা সিরিয়াস রোল করতে পারবে না সেটা হয়? কাঞ্চন মল্লিকও তো সিরিয়াস রোল করেছেন। আর টিভিতে মোটা মানেই কমেডি চরিত্র। আমি একটা সিরিয়াস রোল করতে চাই। তবে, মোটা হওয়ায় আমার শাশুড়ির আমায় খুব পছন্দ হয়েছিল। আমার মধ্যে নাকি তিনি দুগ্গা মায়ের ছায়া পান। আর তাই ছবি দেখেই বলেন- এই হবে আমার বাড়ির বউ।

নবনীতাঃ গ্রেট! আচ্ছা, ইন্ডাস্ট্রিতে এসে বন্ধু হিসেবে কাদের পেয়েছো?

সঙ্ঘশ্রীঃ বন্ধু অনেকেই। তবে, পাশে থেকেছে সবসময় কমলিকা ব্যানার্জি, দেবলীনা দত্ত, তুলিকা বসু, সোমা ব্যানার্জি, দামিনী বেনি বসু, সাহানা দত্ত, সায়ন্তনী গুহ ঠাকুরতা। কমলিকা দি, দেবলীনা দি আমার জন্য অনেককে বলেছে কাজের কথা। একবার নয়, একাধিকবার।

তুলিকা দি, সোমা দি প্রায়ই শরীরের যত্ন নিতে বলে। সাহানা দি কাজের সুযোগ দেয়। আর বেনি দির কাছে ক্লাস করতে পারিনি অভিনয়ের, টিভিতে ডলির একটা হিন্দি শব্দ ওর কানে লাগায় আমাকে জানিয়েছে ফোন করে। ভিডিও কলে ‘ড়’ আর ‘র’-এর পার্থক্য বুঝিয়েছে। আর সুদেষ্ণা দি তো আমার মায়ের মতো। কোনওদিন ভুলব না আরেকজনকে। আগে যখন আমার গাড়ি ছিল না তখন সায়ন্তনী (গুহ ঠাকুরতা) নিজের গাড়িটা আমায় দিয়ে নিজে ট্যাক্সিতে যাতায়াত করত।

তখন আমার সময়মতো অডিশন, শুটে যেতে হত। যাতে আমার দেরি না হয় তাই ও আমাকে নিজের গাড়িটা ব্যবহার করতে দিয়েছিল। আমি এই ইন্ডাস্ট্রির মেয়েদের কাছ থেকে বেশি সাহায্য পেয়েছি। আমার ফ্যানকূলে মহিলার সংখ্যা বেশি। ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েরা নাকি অন্য মেয়েদের টিকতে দেয় না। আমার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি।

মেয়েদের পাশে পেয়েছি সবসময়। তবে, একজনের কথা বলতেই হয় তিনি কৌস্তভ রায়। আমার এককালের বস। উনি আমার ‘লে ছক্কা’ দেখে বলেছিলেন অভিনয়টা করতে। ছুটির দরকার হলে ওনাকে বলতে বলেছিলেন। ছুটিতে মাইনে কাটা হবে। কিন্তু সেই টাকাটা তো ছবির কাজ থেকে উঠেই আসবে আমার। এই ছিল কৌস্তভ দা’র যুক্তি। এটুকুই বা কে বলে?

নবনীতাঃ কী ধরনের চরিত্রের অপেক্ষায় আছো?

সঙ্ঘশ্রীঃ ডি-গ্ল্যাম চরিত্র চাই। পরিচারিকার চরিত্র চাই। তবে, আমি কী চাই তা দিয়ে তো বিচার হবে না। সবটাই অন্যের হাতে। তবে আমি ওরকম চরিত্র চাই একখানা। ‘লাবণ্যর সংসার’-র শর্বরী দি’র চরিত্রটার প্রতি লোভ আছে আমার। আর আগেই বললাম, সিরিয়াস রোল চাই।

নবনীতাঃ প্রেমে আঘাত পেয়েছো কখনও?

সঙ্ঘশ্রীঃ কী! কোথা থেকে কোন প্রশ্নে? (সহাস্যে)। না না আঘাত পাইনি কখনও। দিয়েছি বরং।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here