এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউঃ ফাইট সিনে শাড়ি পরে দুষ্কৃতী দমনে রূপা ভট্টাচার্য

0
305

নবনীতা দত্তগুপ্ত

“আমরা শিল্পীও নই, মানুষও নই, শুধুই বি.জে.পি। আমরা মানে আমি, অঞ্জনা বসু এঁরা।”– বললেন অভিনেত্রী রূপা ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে দূরভাষে আলাপচারিতায় নবনীতা দত্তগুপ্ত।

করোনা পৃথিবীর বুকে আজ কয়েক মাস ধরে ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে– এর থেকে বড় সত্যি বোধহয় এই মুহূর্তে আর কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, এবারের পুজোটাকে সে করে তুলেছে ফিল্মি। এই পুজোতেই রিলিজ করছে একাধিক বাংলা ছবি। তাদের মধ্যেই একটি হল ‘এস ও এস কলকাতা’। অভিনেত্রী এনা সাহা প্রযোজিত প্রথম বাংলা ছবি হতে চলেছে এটি। যশ দাশগুপ্ত, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান, আর্য দাশগুপ্ত, শান্তিলাল মুখার্জি, রূপা ভট্টাচার্য সহ রয়েছেন আরও অনেকে। যে যার চরিত্রে উজ্জ্বল। কিন্তু এই ছবিতে জরা হটকে ইমেজে ধরা দেবেন অভিনেত্রী রূপা ভট্টাচার্য।

কীরকম? তা হলে বলি, এই ছবিতে একজন দায়িত্বশীলা আই পি এস অফিসারের ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে। দাপুটে, সত্যনিষ্ঠ, কর্তব্যে অবিচল আই পি এস অফিসার নন্দিতা রায়। এই সবের পাশাপাশি সে তো একজন সাধারণ মানুষও বটে। সেও সংসার করে, সেও বন্ধুর বাড়িতে পার্টি করে কিংবা কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যায়। সেরকমই একদিন পাটভাঙা শাড়ি পরে এক অনুষ্ঠান বাড়িতে হাজিরা দিতে গিয়েছিল নন্দিতা রায়। কিন্তু কথায় আছে না, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙে’, তার সঙ্গেও ঘটল তেমনটাই। এক অপরাধীকে বেধড়ক মারল সে। তাও আবার পুলিশ উর্দিতে নয়।

আরও পড়ুনঃ ফিল্ম রিভিউঃ চরৈবেতি

পরনে ছিল তার সিফন শাড়ি। সঙ্গে মানানসই সাজগোজ। সেই অবস্থাতেই দুষ্কৃতিকে পেটাল সে। হ্যাঁ, হলে গিয়ে এহেন রূপাকেই দেখবেন দর্শক। বাংলা ছবিতে যতদূর মনে পড়ে এরকম সিন দেখেননি বাঙালি দর্শক। তাই রূপার সেই ফাইট সিনের অভিজ্ঞতা জানার তারণায় ফোন ঘোরাই। অভিনেত্রী তখন ব্যস্ত ছিলেন শরীরচর্চায়। তাই সেই মুহূর্তে কথা হয়নি। নিয়মিত শরীরচর্চা করেন রূপা। ফিটনেস ফ্রিক এই অভিনেত্রী বছর পনেরো আগে যেমন ছিলেন আজও একইরকম। নেগেটিভ হোক বা পজিটিভ সবরকম চরিত্রে অনবদ্য রূপা। একইভাবে সাহসী, দাপুটে, প্রতিবাদী চরিত্রেও অনন্যা স্পষ্টবাদী রূপা ভট্টাচার্য। রূপার সঙ্গে কথোপকথনের নির্যাস রইল পাঠকের জন্য।

নবনীতাঃ শুরুতেই বলি, নন্দিতা রায়ের চরিত্রটার জন্য অফার কে করেন? এনা?

রূপাঃ না না। পরিচালক অংশুমান প্রত্যুষ। অংশু আমার অনেক পুরনো বন্ধু। ওর সঙ্গে এর আগেও কাজ করেছি। অংশুই আমাকে বলে রোলটা করতে। আর শুধু রোলটাই নয়, রীতিমতো শাড়ি পরে ফাইট সিন করতে হবে সেটাও জানায়। পুলিশের চরিত্র আমি আগেও করেছি। তবে ফাইট করিনি। আর শাড়ি পরে তো নয়ই। ফলে, প্রথমে শুনে চমকেই উঠি। কী করে করব ওই সিন শাড়ি পরে! অংশু বলে, মেয়েরা রান্না করে শাড়ি পরে, আন্দোলন করে শাড়ি পরে, অফিসেও যায় শাড়ি পরে, প্রতিবাদ করে শাড়ি পরে, স্বয়ং মা দুর্গা অসুর বধ করেন শাড়ি পরে। তাহলে ফাইট সিন শাড়ি পরে করা যাবে না কেন? সামনেই দুর্গা পুজো।

আরও পড়ুনঃ অক্টোবরের একুশে মুক্তি ‘এস ও এস কলকাতা’র

নারী দশভূজা। সে শাড়ি পরে ঘরকন্নাও করতে পারে আবার অসুর দমনও করতে পারে। এই সত্যিটা মানুষ ভাল রিলেট করতে পারবে যদি শাড়ি পরে ফাইট সিন করা হয়। আমিও ভেবে দেখলাম, অংশুর একটা কথাও ভুল না। আর ব্যস। এল সেই মুহূর্ত! করে ফেললাম। আমার বুকে সিংহের মতো সাহস। আমি পারব না এমনটা ভাবি না কখনও। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলাম শাড়ি পরে ঠিক কতটা পা তুলতে হবে এই ব্যাপারগুলো। আমি অনেক ডান্সের ভিডিও দেখেছি ওইসময়। স্কার্ট পরে নাচ করার সময় ঠিক কতটা এবং কীভাবে পা তোলা হচ্ছে সেগুলো দেখেছি অনেকবার। তাতে আমার সুবিধা হয়েছে। শাড়ি পরে পা তোলা আর স্কার্ট পরে পা তোলা প্রায় একই টেকনিক। এ ছাড়া আমার কোরিওগ্রাফার, ডি ও পি, পরিচালক খুব হেল্প করেছেন। দর্শক বলবেন বাকিটা। সবশেষে আমি সাবাশ নাকি ধপাস- বলবেন তাঁরাই।

আরও পড়ুনঃ শেখর ঘোষের বাংলা ডেবিউ

নবনীতাঃ এতদিনের কেরিয়ারে অনেক প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করেছো। এনা একেবারেই নবাগতা প্রযোজক হিসেবে। কেমন পেলে সুযোগ সুবিধা?

রূপাঃ এনা প্রযোজক কম। অভিনেত্রী বেশি ছিল ফ্লোরে। মানে, প্রযোজকের যে একটা কর্ত্রী কর্ত্রী বা কর্তা কর্তা ব্যাপার থাকে সেটা ছিল না এনার মধ্যে। ও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ ভাবে। শিখতে চায়। ওর সঙ্গে আমি আগেও স্ক্রিন শেয়ার করেছি। আর সুযোগ সুবিধা? ১০০-১৫০ জনের ইউনিট নিয়ে কাজ হয়েছে। কারো কোভিড হয়নি। তাহলে বুঝতেই পারছ কতটা সাবধানতা মানা হয়েছিল? বারবার আদা-গোলমরিচ চা, লেবু জল, গরম জল, স্যানিটাইজার দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ চায়ের কাপে জন্ম শতবর্ষে সত্যজিৎ স্মরণ

প্রয়োজনে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়৷ নয় রাত আমরা কাজ করেছি শহরের এক ঝাঁ চকচকে হোটেলে। ওটাই ঘরবাড়ি হয়ে গিয়েছিল আমাদের। আজও রাস্তা দিয়ে গেলে হোটেলের দিকে তাকালে ভাবি ওই তো ষোলো তলাটা আমার ঘর। এনা খুব যত্নে রেখেছিল আমাদের। অনেকে ভয় দেখিয়েছিল, এই সময়ে হোটেলে থেকে শুটিং না করতে। আমি ভয় পাইনি। এটাই আমাদের জীবন। ভয় পেলে চলবে না। আমাদের ইউনিটে টিম স্পিরিট ছিল দারুণ। খুব মজা করে কাজ করেছি আমরা। সবথেকে বড় কথা, কেউ অসুস্থ হইনি এই করোনা আবহেও। এনা নিজেও রয়েছে এই ছবিতে একটা রোলে।।

নবনীতাঃ গল্পটা কেমন লেগেছে?

রূপাঃ অসাধারণ। এখানে গল্পটাই হিরো। এমনিতেও আমি মনে করি যেকোনও ছবি বা মেগা সিরিয়ালে গল্পটা হিরো আর সংলাপটা হিরোইন। গল্প আর সংলাপ ভাল হলে ছবি বা সিরিয়াল পরের পর ছক্কা মেরে বাজিমাত করবেই।

নবনীতাঃ সিরিয়ালে এখন আর পাচ্ছি না কেন?

রূপাঃ কাজ দিচ্ছে না প্রযোজকরা, তাই দেখছ না। তাঁরা হয়ত ভাবছেন আমি আর কাজে আসব না তাঁদের, তাই কাজ দিচ্ছেন না। (সহাস্যে)

নবনীতাঃ বছর খানেক হল সরাসরি রাজনীতিতে। কাজ পাওয়া, না পাওয়ার ব্যাপারে কি সেই ছায়া দেখতে পাও?

রূপাঃ আমরা শিল্পীও নই, মানুষও নই, শুধুই বিজেপি। আমরা মানে আমি, অঞ্জনা বসু। বিজেপি করি বলে কত লোকে আমায় এড়িয়েও চলে আজকাল। কোয়ারেন্টাইনে আছি আমরা। যতদিন না সরকার বদলাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকব, কাজবাজ পাব না টেলিভিশনে।
পনেরো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার পর এক বছরের রাজনৈতিক পরিচয়ে যদি কাজ না পাই, এর চেয়ে লজ্জার আর অপমানের কিছু হতে পারে? যে ইন্ডাস্ট্রিকে নিজের বাপের বাড়ি ভেবেছি সেই ইন্ডাস্ট্রি দূরে সরিয়ে দিচ্ছে শুধু বিজেপি করি বলে।

আরও পড়ুনঃ ভার্চুয়ালে ‘সুর অউর সাজ’

নবনীতাঃ পুজোয় কী কর্মসূচী?

রূপাঃ এবারে করোনা আবহে তেমন কর্মসূচী নেই। আগেরবার পুজোয় অনেক কর্মসূচী ছিল। এবার ভিড় বাড়াতে চাই না। আর ব্যক্তিগত কর্মসূচী যদি বলো তা হলে বলি, কেনাকাটা আমি সারাবছরই টুকটাক করি। পড়েও আছে নতুন কয়েকটা।সেগুলোই পরব। আর কোনও বন্ধুর বাড়ি গিয়ে আড্ডা মারব। অঞ্জনার বাড়িতে যেতে পারি। ও খুব ভাল রান্না করে৷ ভাল মন্দ খাব আর আড্ডা মারব। ঠাকুর দেখতে বেরোচ্ছি না। ভিড় বাড়াব না প্যাণ্ডেলে।

নবনীতাঃ বাহ! এগুলোই তো দারুণ কর্মসূচী। তো একটা প্রশ্ন। তোমাকে পনেরো বছর আগে যা দেখেছি, তুমি আজও একই আছো। খুব ফিটনেস ফ্রিক তুমি। কী করো বলো তো নিজেকে এমন স্লিম ট্রিম রাখতে। আমার জানা দরকার।

রূপাঃ আমি জিম ফ্রিক। তবে, এখন যাচ্ছি না। ভয় পাচ্ছি একটু। বাড়িতেই কপালভাতি, যোগব্যায়াম, প্রাণায়ম করি। আর এই লকডাউনে রোজ হাঁটু গেড়ে বসে পুরো ছাদটা ঝাড় দিই। ওটা দারুণ কাজ দেয়। পেট বাড়ে না। এই লকডাউনে ল্যাদ খেয়েছে অনেকেই। আমিও খাইনি বলব না। তবে, সামলে নিয়েছি নিজেকে। তুমিও কপালভাতি, প্রাণায়ম করো। উপকার পাবে। পারলে আমার।মতো ছাদ…. হাহাহা! বাকিটা বুঝে নাও। বিশ্বাস করো, নিজেকে অনেক ঝরঝরে লাগবে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here