ফিল্ম রিভিউঃ চরৈবেতি

0
343

মোহনা বিশ্বাস, বিনোদন ডেস্কঃ

ক্যামেরা থাকলে তবেই কি সিনেমা বানানো যায়? মানে ক্যামেরাটা কি সিনেমা বানানোর জন্য আবশ্যক একটি যন্ত্র? অনেকেই ভাবেন ক্যামেরা থাকলেই বুঝি ভিডিওগ্রাফি করে ঝটপট একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলে সহজেই দর্শকের সামনে হাজির করা যায়। কিন্তু ক্যামেরা থাকলেও যে এত সহজে সিনেমা বানিয়ে ফেলা যায় না এবার সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেল শুভ।

কলকাতার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শুভময়। বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হয়। তবে তাঁর মন পড়ে থাকে সিনেমার দিকে। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন এবং ঋত্বিক ঘটক হলেন শুভ’র পছন্দের তিন পরিচালক। তাই পিএইচডি করতে করতেই শেষপর্যন্ত সিনেমার একটি কোর্সে ভর্তি হয়ে যায় শুভ। এই কোর্সের সন্ধান দেয় তাঁর বান্ধবী মধুরিমা।

আরও পড়ুনঃ সোশ্যাল মিডিয়ায় কদর্য মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ইমন

প্রথম দিন থেকেই শুভকে সিনেমা পরিচালনার বিষয়ে সবরকম সাহায্য করবেন বলে জানান ওই প্রতিষ্ঠানেরই এক শিক্ষক। কিন্তু এইভাবে কি হয়? তাই একদিকে পিএইচডি, অন্যদিকে সিনেমা একসঙ্গে সামলানো আর সম্ভব হচ্ছে না দেখে পিএইচডি কোর্সটা ছেড়েই দিল শুভ। ওদিকে সিনেমার ক্লাসে থেকে পাওয়া বন্ধু স্নেহার সঙ্গেও শুভ’র সম্পর্কটা গাঢ় হতে শুরু করে।

তাঁরা দু’জনে একসঙ্গে কাজ করবে বলেও ঠিক করে। সেইমতো শুভ সিনেমার চিত্রনাট্যও লিখে ফেলে। এরপরই গল্পের মোড় ঘুরে যায়। শুভ সিনেমা বানাতে চাইলেও যেহেতু পরিচালক হিসাবে তাঁর এটা প্রথম কাজ তাই কোনো প্রযোজনা সংস্থা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে নারাজ।

আরও পড়ুনঃ অক্টোবরের একুশে মুক্তি ‘এস ও এস কলকাতা’র

কোনোভাবেই সিনেমা বানানো সম্ভব হচ্ছে না এমন সময় অনিকেত চরিত্রটির আগমন ঘটে। ছবির শেষে একটা ক্লাইমেক্সও থাকছে, যা জীবনে সমস্ত বাধা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেয়। এখানেই সিনেমার নামকরণের সার্থকতা লুকিয়ে রয়েছে।

সিনেমার শুরুতে যমরাজের সঙ্গে শুভ’র যে দৃশ্যটি দেখানো হয়েছে সেটিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সিনেমাটিতে সিনেমাটোগ্রাফারের দায়িত্ব সামলেছেন পরিচালক অমৃতাংশু চক্রবর্তীর স্ত্রী মৌপিয়ালী চক্রবর্তী। পুরো সিনেমাটি শুট করা হয়েছে শুধুমাত্র একটি স্মার্টফোনে।

এছাড়া কিছু দৃশ্যে ড্রোনের ব্যবহারও দেখা যাচ্ছে এই সিনেমায়। সিনেমাটোগ্রাফি যথেষ্ট প্রশংসনীয়। স্মার্টফোনেও এত ভাল সিনেমাটোগ্রাফি করা যে সত্যিই সম্ভব, এই সিনেমাটি দেখার পর তা দর্শকবৃন্দ স্বীকার করতে বাধ্য। এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে উত্তর কলকাতার অলিগলি, প্রেম, দেওয়াল লিখন সবকিছুই, যা একটা সুন্দর আবেশ সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে।

আরও পড়ুনঃ এক্সক্লুসিভঃ দেবের মতো হিরো হওয়ার ক্ষমতা আমার নেই

এবার অভিনয়ের কথায় আসা যাক। ‘বেলাশেষে’র বিচারক হোক বা ‘লুটেরা’র জমিদার সব চরিত্রেই বরুণ চন্দের অনবদ্য অভিনয় দর্শকের মন কেড়ে নেয়। অমৃতাংশু চক্রবর্তী পরিচালিত এই ‘চরৈবেতি’ ছবিটিতেও সিনেমা পরিচালনা বিষয়ক শিক্ষকের ভূমিকায় বরুণ চন্দ’র সাবলীল অভিনয় ইতিমধ্যেই দর্শকের নজর কাড়ছে।

আরও পড়ুনঃ আসছে ভাল থাকার ভ্যাকসিন ‘মীরাক্কেল সিজন ১০’

এদিকে, শুভময়ের মতো মজবুত একটি চরিত্র খুব সুন্দরভাবে পরিবেশন করেছে তথাগত। শুভ’র প্রথম বান্ধবী মধুরিমা’র দুঃখ, কষ্ট, রাগ, ভালোবাসা সবটাই নিজের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। সিনেমায় স্নেহা’র চরিত্রটি একটু অন্যরকম। সুছন্দা অভিনয় জগতে পরিচিত মুখ না হলেও তাঁর অভিনয় প্রশংসার দাবিদার।

এছাড়াও এই সিনেমায় রাজীবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন লক্ষ্য পাঞ্জাবি এবং অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে সমীর বিশ্বাস, মধুছন্দা ঘোষ, সুস্মিতা চক্রবর্তী-সহ আরও অনেককে। পরিচালক নিজেও অভিনয় করেছেন এই ছবিটিতে। পরিচালক হিসেবে তো বটেই, অভিনেতা হিসাবেও যে অমৃতাংশু চক্রবর্তী দর্শককূলের মনে আলাদা জায়গা করে নেবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বলা যেতে পারে ‘চরৈবেতি’ নবাগত পরিচালকদের সামনে একটা বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। ছবিটি সবমিলিয়ে মনে ধরার মতো।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here