প্রান্তিক রুক্ষ মাটিতে ফলছে সোনা

0
86

নিজস্ব সংবাদদাতা,দক্ষিন দিনাজপুরঃ

Finally gold Yield on land
বিষ্ণু চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

পতিত রইল মানব জমিন;আবাদ করলে ফলত সোনা।এই আপ্তবাক্যটি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি ব্লকের পৌড়াহার গ্রামের বিষ্ণু চক্রবর্তীর ক্ষেত্রে সত্য নয়।মানব জমিনে সোনা তিনি ফলাতে পারতেন কিনা তা জানা নেই তবে প্রান্তিক এই জেলার রুক্ষ মাটিতে তিনি যে আক্ষরিক অর্থেই সোনা ফলিয়েছেন তা আজ জেলা,রাজ্য এমনকি গোটা দেশেই সুবিদিত। বয়েসের কাছে মাথা না নুইয়ে ৬৫ বছরের এক যুবক কৃষিক্ষেত্রে ছুঁয়েছেন একের পর এক মাইলস্টোন!অভাবের ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়;ঠিক এমন অবস্থাতেই আর পাঁচজনের মতো আত্মহত্যার কথাও একসময় ভেবেছিলেন। তবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তার স্ত্রীর কথায় মাটি টুকুকে সম্বল করে।প্রথমদিকে দিনমজুরীও করেছেন সংসারে ভিন্ন হবার পর থেকে।ওল, আখ চাষ দিয়ে শুরু করেছিলেন।

Finally gold Yield on land 3
নিজস্ব চিত্র

প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বাবা-দাদার প্রথাগত চাষাবাদ করবেন না।এরপর যেমন মাটির আয়তন বেড়ে বেড়ে যেমন ২৫ বিঘা হয়েছে তেমন যুক্ত হয়েছে একের পর এক নতুন নতুন চাষ,নতুন পদ্ধতিতে চাষ।গোটা জেলায় বিষ্ণুবাবুর কৃষি খামার শুধু সমগ্র সাধারণ কৃষক বা জেলাবাসীর কাছেই নয় তা জেলার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীদের কাছেও হয়ে উঠেছে এক আদর্শ প্রদর্শন ক্ষেত্র। ২০০০ সাল থেকে তিনি এজোলা চাষ করেছেন।

Finally gold Yield on land 4
এজোলা চাষ। নিজস্ব চিত্র

গোটা জমিতে এখন তিনি মিশ্র কৃষি করছেন। একদিকে আম,জাম,লিচু,পেয়ারা,কাঠাল, আপেল কুলের মতো ফল চাষ, একদিকে আলু, কুমড়ো,পটলের মতো সবজি চাষ,প্রথাগত ধান চাষ,পশুপালন, নার্সারিতে বিভিন্ন গাছের অর্ডার অনুযায়ী চারা তৈরী,ফুল চাষ,নানারকম ফুলের বাগান,কি নেই সেখানে?আম ফলিয়েছেন পাঁচ প্রজাতির,লিচু,পেয়ারা তিন প্রজাতির। আলফান্সো থেকে বারমাসি সবজাতের অফুরন্ত ভাণ্ডার বিষ্ণুবাবুর এই খামার।জৈব কৃষির অঙ্গ হিসেবে করেছেন ভার্মি কম্পোস্ট।সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন শ্যালো চালিয়ে।এক জবা গাছে ফুটিয়েছেন আট রকমের জবা ফুল।রজনীগন্ধা থেকে শঙ্খ -চক্র-গদা-পদ্ম, জারবেরা থেকে গ্ল্যাডিওলাস এইরকম হরেক ফুলে সজ্জিত তাঁর ফুলের বাগান। পেয়েছেন জেলা,ব্লক এবং রাজ্যের কৃষকরত্ন সম্মান।ডাক পেয়েছেন গুজরাটের শিল্প সম্মেলনে কৃষি বিষয়ক আলোচনায় বক্তৃতা দেবার জন্য। লিখেছেন নাবার্ডের জন্য আর্টিকেল। অংশ নিয়েছেন দূরদর্শন ও বেতারের নানারকম কৃষি সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে।পেয়েছেন বহু মেডেল, সার্টিফিকেট ও পুরস্কার রাজ্যের বিভিন্ন স্তর থেকে।

Finally gold Yield on land 2
প্রাপ্ত পুরস্কার। নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুনঃ খাঁচায় বন্দী আর এক চিতা

আজও তাঁর চোখে একরাশ স্বপ্ন নতুনকে খোঁজার; নতুন কিছু করে দেখাবার। তিনি আজও বিশ্বাস করেন মাটিকে আঁকড়ে মানুষ বুনতে পারে সফলতার নতুন উড়ান। বাংলার কৃষি যুগে যুগে বিষ্ণুবাবুর মতো কৃষকদের হাতেই যেন ফিরে পায় নতুন প্রাণ আর হয় দীর্ঘজীবী।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here