শ্যামল রায়,নবদ্বীপঃ
বৈষ্ণব তীর্থ নবদ্বীপে আগম্বাগিশ এর কালি প্রথম শক্তি পুজো হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়।এই কালি আজও নিষ্ঠা সহকারে পুজো হয়ে আসছে কালি পুজোতে;দৈনন্দিন পুজো হয় তবুও কালী পুজো উপলক্ষে আলাদা মাত্রা এনে দেয় পুজোতে।
কথিত যে বৈষ্ণব তীর্থ নবদ্বীপে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ছিলেন তন্ত্র শাস্ত্রে সু পন্ডিত।
তিনি ছিলেন শৈব শাক্ত বৈষ্ণব এবং গাণপত্য সম্প্রদায়ের তন্ত্রশাস্ত্র গুলির সার গ্রহণ করে রচনা করেছিলেন বিখ্যাত গ্রন্থ তন্ত্রসার।দীপান্বিতা শ্যামা পূজার প্রবর্তক হিসেবে তার যথেষ্ট খ্যাতি আজও রয়েছে।তার পূজিত শ্যামা মূর্তির নাম আগমেশ্বরী মাতা।প্রতিবছর কার্তিকী অমাবস্যার দিন মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মাণ করে নানা উপাচারের পূজার্চনা সমাধা করে ওই দিনই বিসর্জন দেওয়ার প্রথা প্রচলিত আছে।সম্ভাব্য ১৩৬০ বঙ্গাব্দে এখানে একটি মন্দির নির্মিত হয়।তাই শক্তি সাধনার ক্ষেত্রে নবদ্বীপ শহরের আগমেশ্বরী পাড়া আগম্বাগিশ এর কালি পুজো দেখতে বহু সাধকের সমাবেশ ঘটে।জানা গিয়েছে যে নবদ্বীপ শহরে চৈতন্য সমসাময়িক ছিলেন আগম্বাগিশ। নবদ্বীপে আগম্বাগিশ ই প্রথম কালী মায়ের পুজোর সূচনা করেন।প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর আগে এই শক্তি পুজো র সূচনা হয়েছিল এবং আজও হচ্ছে।নবদ্বীপ শহরের আগমেশ্বরী পাড়ায় আগম্বাগিশ এর পঞ্চমুন্ডির আসন এ তার প্রচলিত পদ্ধতিতে কালী পুজো হয়ে থাকে।
আগম্বাগিশ এর প্রবর্তিত কালীপুজো নাকি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।পুজো সম্পর্কে জানা গিয়েছে যে আগম্বাগিশ এর প্রবর্তিত কালী পুজো হয় আগের নিয়মে, কার্তিকের কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমীতে ঘর বাধা দিয়ে মূর্তি তৈরি কাজ শুরু হয় একাদশীতে পাঁচ পোয়া খড়ের বিশেষ ধরনের অবয়ব বিরাটাকার প্রতিমার বুকে স্থাপন করা হয়।অমাবস্যা লাগলে চক্ষুদান।আগেই পুজোর সঙ্গে সঙ্গেই বিসর্জন দেয়া হতো এখন অবশ্য দুপুরের মধ্যে বিসর্জন দেওয়ার রীতি বিদ্যমান।
এই পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে জানা গিয়েছে যে একদিন এক দৈব কন্ঠ বাজতে থাকে চরাচর জুড়ে।আগম্বাগিশ শুনতে পান কে যেন বলছেন ভক্তের মধ্যেই থাকেন ভগবান।এ কথা কে বললেন কাছেপিঠে তো কেউ নেই তাহলে কে কথা বললেন?আধো আধো ঘুমে একথা শুনে জড়তা কাটিয়ে ঘুম থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়লেন আগম্বাগিশ।ঘুম থেকে উঠে কৃষ্ণানন্দ গো পল্লী দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন গঙ্গা ঘাটের দিকে।এগিয়ে যেতেই নজরে পড়েছিল এক গৃহবধূর।তিনি দেখতে পান বাঁ হাতে এক তাল গোবর দিয়ে ডান হাতে করে কুঠিরের মাটির দেয়ালে ছুড়ে প্রলেপ দিচ্ছেন সেই শ্রীময়ী।এক ডাল ঘন কালো চুল ছাপিয়ে হাঁটু ছুই ছুই।পরনে খাটো কাপড়।পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলেন উজ্জ্বল দুটি চোখ বড় মায়া সারা মুখে ঘাম লেগে আছে।কপালের সিঁদুর ছড়িয়ে গিয়েছে ভুরু জুড়ে।ওই বধু ভাগ্যিস দেখে বিব্রত হয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করতেই পরনের স্বল্পবাস টুকু গেল খসে ,দুহাতে গোময় লজ্জায় জিহ্বা কাটলেন নিরুপায় রমণী।সব ভুলে গিয়ে আগম্বাগিশ দেখলেন কালিকার আসল রূপটি।দেবী ঘোর কৃষ্ণবর্ণ আলুলায়িত কেস তাও ধরে ডান হাতে যেন বরাভয় এর মুদ্রা দু চোখে অপার করুণা। কপালে জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিঁদুর যেন তৃতীয় নয়ন আর সময় নষ্ট না করে আগম্বাগিশ তৎপর হলেন দেবীমূর্তি রূপদান করতে।আগম্বাগিশ দীর্ঘ দিনের সাধনার ফসল তন্ত্রসার এবং দেবী কালিকার নতুন উপাসনা পদ্ধতি কে সাধারন গৃহস্থের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে এই পুজোর আয়োজন সেদিন করেছিলেন আজো সেই পুজো নিষ্ঠা সহকারে অনুষ্ঠিত হয় নবদ্বীপ শহরে।
সেই সময়টা ছিল ১৬ শতকের প্রথমার্ধে বৈষ্ণবদের কাছে সুসময় তবুও শক্তি আরাধনার বাড়বাড়ন্ত নিশ্চয়ই আজকের সময়কালে প্রশ্ন ওঠে।তাই কালী সাধক দের কাছে একটি কথা চৈতন্য সময়কালে আগম্বাগিশ এর পুজোয় প্রথম কালি হিসেবে পূজিত হয় নবদ্বীপ শহরে।
আরও পড়ুনঃ রাজবংশী ভাষায় অনুবাদ হবে মুখ্যমন্ত্রীর কবিতা
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584