দেশের রাজনীতির সুর একতারে বাঁধা হতে শুরু করেছে। বিজেপি-র হয়ে কথা বলার দল আর বেশি নেই। তবে বিজেপি একটা বৃহৎ ও সরকারী দল। সেই কারনে তারা নিজেদের একাই একশ মনে করে। নিজেদের জোটসঙ্গীদের পাত্তা দিত না বা দেয়নি। এখন তার ফল ভোগ করছে।গতবারের বিশাল আসন প্রাপ্তি উপহাস করছে বিজেপিকে।হাওয়া ঘুরছে মানুষ রাস্তায় নামছে। এখন প্রয়োজন সব ধর্মনিরপেক্ষ, গনতান্ত্রিক দলগুলির জোট হওয়া, একত্রিত হওয়া। পাখির চোখ করা উচিত বিজেপির পরাজয়।
সম্প্রতি আসামের ঘটনা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আসাম একটি ছোট রাজ্য। নাগরিক পঞ্জীকরনের নামে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তা উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং ভুলে ভরা। শতবর্ষ বাস করার পরও এই তালিকায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম নেই। এই না থাকার তালিকায় আছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির পরিবার, বর্তমান ও প্রাক্তন বিধায়ক, ডাক্তার, উকিল অধ্যাপকসহ অসংখ্য সাধারন মানুষ। হিন্দু-মুসলমান সবাই বাদ। বাঙালী বেশি। তবে বিহার ও রাজস্থানের মানুষও আছে। এখন বিজেপি বলছে সুপ্রিমকোর্টের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তালিকা তৈরি হয়েছে। হোক তাতে আমাদের
আপত্তি নেই। তালিকা তৈরি করেছে আসাম স্বরাষ্ট্র দপ্তরে তৈরি করা একটি কমিটি। সেখানেই যত সমস্যার উৎপত্তি। সবাইকে অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে, ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জীকরনের কথা বলা হচ্ছে- কোনটা সত্যি নয়।
এত মানুষ অনুপ্রবেশকারী হওয়া সম্ভব নয়। আবার ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জীকরণ আশ্চর্যজনক ভাবে লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। কেউ পূর্বপূরুষের নাম ঠিকানার তথ্য জানতে পারছেন না। আধারকার্ড জমা দিয়েও এবারের তালিকায় নাম উঠেনি। এই রহস্যভেদ করার জন্য ফেলুদার গয়েন্দাগিরির দরকার নেই। খোলা চোখেই বোঝা যাচ্ছে একটা বিরাট অংশের মানুষকে আসাম থেকে তাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। যারা বহু বছর বাপ -দাদার আমল থেকে আসামে বাস করছেন, যাদের মাতৃভাষা অসমিয়া। বিভেদ এবং বিভাজনের রাজনীতিই এখন বিজেপির একমাত্র সম্বল। বিকাশের ঘোড়া মুখ থুবড়ে পড়েছে। চাকরী নেই, কৃষকের আত্মহত্যা কমছে না, শিল্পে বিনিয়োগ নেই, চারিদিকে হাহাকার। এমন সময় বিভেদের রাজনীতি ছাড়া বিজেপির অন্য উপায় নেই। শুধুমাত্র বিভেদ সৃষ্টি না রাজ্যে রাজ্যে লড়িয়ে দেওয়ার মারাত্মক খেলাতে মেতেছে বিজেপি। পায়ের তলা থেকে যত মাটি সরে যাচ্ছে ততই তারা হিংস্র হয়ে উঠছে। ফ্যাসিবাদী দলের উৎস এটাই। পৃথিবী জোড়া ফ্যাসিবাদীদের ভূমিকার কোন পরিবর্তন হয়নি। নবরূপে তারা প্রতিভাত হচ্ছে।
সব প্রতিবাদী মানুষের স্বার্থ এক জায়গায় নির্দিষ্ট করতে হবে। দেশই যদি ভেঙে যায়, টুকরো টুকরো হয়ে যায় চেনা ভূগোল তাহলে মানুষের কি হবে, কাকে নিয়ে হবে আন্দোলন অথবা ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্নবোনা। আজ ভারতের লড়াই-য়ের এটাই হবে ভিত্তি।
আগে দেশ বাঁচাও, তারপর দল বাঁচাও। অনেক রাজনৈতিক দল এদেশে, হাজারও বৈচিত্র নিয়ে দেশ, আমাদের নানা দল ও নানা মানুষের হাজারটা পথ ও বিষয়বস্তু। সবকে এক জায়গায় মিল করানো দূরহ ব্যাপার। কিন্তু ইতিহাসে এমন সময় আসে যখন সব কিছুর ঊর্ধে উঠে পরিস্থিতির বিচার করতে হয়। নিজ দল এবং ব্যক্তিগত অনেক জরুরী বিষয় সরিয়ে রেখে সামনের দিকে চাইতে হয়। যেটা করতে ভুল করেননি মাওসেতুঙ অথবা হোচিমিন। সে কারনেই তাঁরা দেশ রক্ষা করতে পেরেছেন।
ভারতের সব রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা এবং সার্বিক কর্মসূচী রয়েছে। সকলকে আমি শ্রদ্ধা করছি। কিন্তু কোন কোন জায়গায় তাদের কিছুটা সরে আসা দরকার, ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। পরিস্থিতি আলাদা, শত্রু অত্যন্ত নিষ্ঠুর হাতে সজ্জিত। সামান্য ভুল অথবা দোদুল্যমনতা দেশের বড় ক্ষতি করে দেবে। ভবিষ্যত আমাদের ক্ষমা করবেনা। তাই আগামী ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশ বাঁচানোর লড়াই তে সবাই কে নামতে হবে। কারণ এ রাস্তা বিকল্পহীন।
(লেখক প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ।মতামত ব্যক্তিগত)
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584