নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ
সাংবাদিক গীতা সেশু ও উর্বশী সরকারের মিলিত গবেষণার একটি রিপোর্ট বলছে, ২০১৪-২০১৯, এই পাঁচ বছরে ভারতে ৪০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
পাশাপাশি হামলার শিকার হয়েছেন প্রায় ২০০ সাংবাদিক। ঠাকুর ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত এই গবেষনাপত্রের নাম ‘গেটিং অ্যাওয়ে উইথ মার্ডার’। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ পাঁচ বছরে কতটা বেহাল এবং একঘর হয়ে গিয়েছে এই রিপোর্ট সেই ছবিই তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, যে ৪০ জন মারা গেছে, তাদের মধ্যে জনা ২১ পেশাগত কাজের সাথে যুক্ত ছিল। সাংবাদিকদের উপর হামলার জন্য সরকারি সংস্থা, সুরক্ষা বাহিনী, রাজনৈতিক দলগুলির সদস্য, ধর্মীয় গোষ্ঠী, ছাত্রদল, অপরাধী দল এবং স্থানীয় মাফিয়াদের দোষ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ এনপিআর নিয়ে বহু মত, নতুন নিয়ম সংযোজন জাতীয় নাগরিক পঞ্জিতে
গবেষণাপত্রটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০১০ থেকে হয়ে আসা খুনের মামলাগুলির মধ্যে মাত্র তিনটিতে দন্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে, তরুণ আচার্য এবং রাজেশ মিশ্র—এই তিনজনের মামলায় শুধুমাত্র বিচারাদেশ দেওয়া হয়েছে। জমা পড়া বাকি এফআইআরগুলির মধ্যে একটিরও বিচার হয়নি।
দেশ জুড়ে যখন বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক নিবন্ধ (এনআরসি) এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। সেই সময়ে এই সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয়। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে যে এই বিক্ষোভ চলাকালীন, কমপক্ষে চারটি রাজ্যের সাংবাদিকদের আটক করা, হেনস্থা করা, তাদের ক্যামেরার সরঞ্জাম ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি নির্বাসন দেওয়া হয়েছে প্রতিবেশী রাজ্যেও।
আরও পড়ুনঃ সিএএ নিয়ে এনডিএ শরিকদের মতামত নেওয়া হয়নি, অসন্তুষ্ট নরেশ গুজরাল
গবেষণাপত্রে এমন কিছু দিকও ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে সাংবাদিকদের সাথে বর্বর আচরণ করা হয়েছে। ২০১৪ থেকে এখনও পর্যন্ত ৩৬ জন সাংবাদিককে নির্মম ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বেশ কিছুজন। কখনও কখনও তাঁদের পিছে ধাওয়া করা হয়েছে, বেধড়ক মারধর করা হয়েছে, পেলেট বন্দুক দিয়ে অন্ধকরে দেওয়া হয়েছে, আবার কখনও মাটিতে ফেলে তাঁদের উপর প্রস্রাব করা হয়েছে বা প্রস্রাব মিশ্রিত পানীয় জোর করে গেলানো হয়েছে। কিছু কিছু সাংবাদিকদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ফেলাও হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ এনআরসি নিয়ে রাতারাতি দিলীপের মত বদলে চাঞ্চল্য রাজনৈতিক মহলে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, সাংবাদিকরা কোনও বিতর্কমূলক খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কখনও পুলিশের দ্বারা, কখনও ক্ষিপ্ত জনতার দ্বারা, কখনও ধর্মভীরু মানুষের দল দ্বারা আবার কখনও ছাত্রদল দ্বারা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নারী সাংবাদিকদের উপর হামলাও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সবরিমালা দ্বন্দ্বে (২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের আগে পর্যন্ত কেরলের সবরিমালা হিন্দু মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিল না, যা সংবিধানের ২৫ নং অনুচ্ছেদের ১ নং ধারার ৩ নং বিধিকে লঙ্ঘন করে) প্রায় ১৯ জন নারী সাংবাদিককে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাংবাদিকরা ন্যায্য বিচার পাননি। মামলার ধীরগতি, গাফিলতি এবং অনিয়মিত তদন্তের কারণে বেশিরভাগ মামলায় অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584