সুদীপ পাল, বর্ধমানঃ
পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রাম ২ এর অমরারগড়ের রায় বংশের রাজকুলদেবী শিবাক্ষ্যা।শিবা অর্থাৎ শৃগালী। যা তন্ত্র সাধনার অংশ। সুতরাং তন্ত্র বিধান মেনে পূজো হয় প্রাচীন এই দেবীর।সিংহবাহিনীর দুর্গা, মহিষ ও মহিষাসুর এবং শিবার একত্র বিগ্রহ এই শিলা। তাই আলাদা করে দুর্গা প্রতিমা তৈরি হয়না। কষ্টি পাথরের তৈরি এই মূর্তি। রায়দের কুলদেবী তাই পৃথক কোন পূজার নিয়ম নেই।তবে কলাবউ পূজা করার প্রচলন রয়েছে। স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, ভল্লুপদ ছিলেন আউশগ্রামের জঙ্গল মহলের রাজা। শিবাক্ষ্যা দেবীর প্রতিষ্ঠাতা হলেন রাজা মহেন্দ্র। রাজা ভল্লুপদের প্রপৌত্র ছিলেন তিনি। এখানে রাজাকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে আছে এক জনশ্রুতি। শোনা যায়, সৌরাষ্ট্র বা অধুনা সুরাতের এক রাজা তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী। কিন্তু তিনি আটকে পড়েন আউশগ্রামের জঙ্গলে। কারণ সেইসময় তাঁর স্ত্রীর প্রসব বেদনা ওঠে। জঙ্গলে তাঁবু ফেলে অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি। দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পর রানি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু সদ্যোজাত কোনও সাড়াশব্দ না করায় মৃত ভেবে তাকে জঙ্গলে রেখে চলে যান রাজা ও রানি। এই ঘটনার কয়েকদিন পর এক ব্রাহ্মণ জঙ্গলের পথ দিয়ে যেতে যেতে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান। তিনি খোঁজাখুঁজি করে দেখেন এক স্ত্রী ভাল্লুক একটি শিশুকে জড়িয়ে ধরে আছে। ব্রাহ্মণ এগিয়ে যেতেই ভাল্লুকটি শিশুটিকে নামিয়ে জঙ্গলের মধ্যে চলে যায়। ব্রাহ্মণ শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন গ্রামে। ভাল্লুক মাতার কোল থেকে উদ্ধার হয়েছিল বলেই তাঁর নামকরণ হয় ভল্লুপদ।
স্থানীয়রা বলেন, ভল্লুপদের প্রপৌত্র রাজা মহেন্দ্র পরাক্রমশালী ছিলেন। কথিত আছে, রাজা মহেন্দ্র স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে কাটোয়ার খাজুরডিহি এলাকা থেকে কষ্টি পাথরের দশভুজা সিংহবাহিনী মূর্তি এনে অমরাগড়ে প্রতিষ্ঠা করেন। ভাল্কির শেওলা দিঘির দক্ষিণ পূর্বে বনভূমি প্রান্তে শিবাক্ষ্যা মন্দির প্রতিষ্ঠিত ছিল পরে রাজধানী অমরারগড়ে মূর্তি স্থানান্তরিত করা হয়। এই দেবীর শারদ উৎসবের পুজো শুরু হয় মহালয়ার এক সপ্তাহ আগে। শাক্ত মতে দেবীর পুজো হয়। আছে বলি প্রথা। নবমীর দিন মন্দির থেকে দেবীকে কোলে তুলে নাচতে নাচতে গ্রাম পরিক্রমায় বের হন পুরোহিতরা। যা স্থানীয় মানুষের কাছে শিবাক্ষ্যা নাচন নামে পরিচিত। নাচতে নাচতে উত্তর পাড়ায় অবস্থিত অন্য মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই নবমীতে দেওয়া হয় মোষ বলি। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাজা মহেন্দ্রর বংশধররা রায় উপাধিতে খ্যাত। তাঁর তিন ছেলে। বড়ছেলের বংশধররা থাকে গ্রামের উত্তর পাড়ায়। মেজ ছেলের বংশধররা দক্ষিণ পাড়ায়। ছোটো ছেলের বংশধররা বাস করে গ্রামের মাঝের পাড়ায়। বর্তমানে ট্রাস্টি গঠন করে পুজো চালানো হয়। অমরারগড়ের অশোক পাল বলেন, শিবাক্ষ্যা দেবীর পুজো গ্রামের অন্যতম প্রাচীন সর্বজনীন পূজো। নিত্যদিন পুজোর ব্যবস্থা রয়েছে তবে দুর্গাপূজার সময় প্রথা মেনে অন্য পূজার মত চারদিন ধরে এই পূজা হয়।
আরও পড়ুনঃ লালগড়ে বনধের সমর্থনে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোষ্টার
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584