রূপান্তরকামী হওয়ার অপরাধে নিজের বাড়িতেই মদ্যপ প্রতিবেশীর দ্বারা নিগৃহীত শিক্ষক

0
69

সুমিত ঘোষ,কোলকাতা:-
গত ৭ই জানুয়ারি, ২০১৮, রবিবার, কলকাতার বনহুগলীর বাসিন্দা প্রীতম বোস তাঁর আবাসনের ছাদে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। হঠাৎ সেই আবাসনের দোতলার আরেক বাসিন্দা বান্টি কর ওরফে শান্তনু মদ্যপ অবস্থায় এসে তাঁকে মারতে শুরু করে।

শিক্ষক প্রীতম বোস

তার মা রীতা কর কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনা স্থলে পৌঁছে নিজের ছেলেকেই সমর্থন করতে থাকেন। রীতাদেবী অভিযোগ করেন যে প্রীতম ওরফে রাজু অন্য কাউকে ছাদে নিয়ে এসেছিলন যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান এমন অভিযোগের সারসত্যতার উপর প্রশ্ন তুলেছে। প্রীতম ফোনে কথা বলার ব্যাপারে জানালেও তাঁর কথা শোনা হয়না; বরং মারতে মারতে তাঁকে দোতলায় নিয়ে এসে চলে নির্মম অত্যাচার। বাকি বাসিন্দারা নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। শান্তনু ও তাঁর মায়ের রাগের আসল কারণ বেশিক্ষণ চাপা থাকে না- চেঁচামিচির মাঝেই বোঝা যায় আসল কারণ হল প্রীতম রূপান্তরকামী এবং প্রান্তিক যৌনতার মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন। রাত দেড়টা পর্যন্ত চলে এই নিধন যজ্ঞ। তারপর অঞ্চলের দুটি ছেলের প্রতিবাদে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রীতমকে স্নায়ুর ওষুধ খেতে হয় তাই সাময়িকভাবে তিনি বিশেষ ব্যথা অনুভব না করলেও পরের দিন সারা গায়ে অসহ্য যন্ত্রণা, গলায় ব্যথা এবং নখের ও আঁচরের দাগ লক্ষ্য করে তিনি সমাজকর্মী অনুরাগ মৈত্রেয়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

অনুরাগ মৈত্রেয়ী

প্রীতম অনুরাগ, রাইনা, অনসূয়া ও জয়শ্রীর মত সমাজ চিন্তকদের প্রেরিত মনোবলে সাহস পেয়ে বরানগর থানায় এফ. আই. আর করার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে গেলে থানার বড়বাবু প্রীতমের মোবাইল হারানোর জন্য আগে একবার থানায় আসার ঘটনাকে দর্শে কটূক্তি করেন “ও তো মাঝে মাঝেই থানায় আসে”। পুলিশের এফ. আই. আর নেওয়ার টালবাহানার চক্করে প্রীতমকে বরানগর জেনারেল হাসপাতালে শারীরিক হেনস্থার মেডিক্যাল সার্টিফিকেট বের করতে হয়। দীর্ঘ টালবাহানার পর ববি কমলিনী, কৃষ্টি ও মণিকাদের মত সমাজকর্মীদের বারংবার অনুরোধে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ এফ. আই. আর নেওয়া হয়। পরের দিন থানার এ. এস. আই নারায়ণ মজুমদারের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি বলেন যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আই. পি. সি ৩২৩, ৩৪১ এবং ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে যদিও কোনটিই জেন্ডার হ্যারাস্মেন্টের ধারা নয় যা এই ঘটনার সূত্রপাতের মূল কেন্দ্র। তার কিছুদিন পর খোঁজ নেওয়া হলেও অভিযুক্তকে ৩ বার নোটিশ পাঠানো হয়েছে কিনা তার কোনও খবর পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশের তরফ থেকে আনওফিশিয়ালি বলা হয় যে বান্টি থানায় হাজিরা দিয়ে গেছে। ঘটনার ১২ দিনের উপর সময় পেরিয়ে গেলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একে সচেতনতার অভাব, তার উপর বান্টির পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাব- দুইয়ে মিলে প্রীতম ন্যায় পায়নি এখনও। আর্থিকভাবে সচ্ছল না হলেও পেশায় শিক্ষক প্রীতম ডানলপের সতীন সেন নগরে বিনা পারিশ্রমিকে দুঃস্থ শিশুদের লেখাপড়া সেখান। বি. কে. সি কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক, আর. বি. ইউ থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতে স্নাতকোত্তর এবং রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিসট্রেশানে স্নাতক উত্তীর্ণ প্রীতম কেবলমাত্র প্রান্তিক যৌনতার মানুষ বলেই কি এই মানবাধিকার উল্লংঘনের ঘটনার স্বীকার হলেন?
বর্তমানে প্রীতম তাঁর নিজের বাড়িতে থাকতে ভয় পাচ্ছেন তাই তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে রয়েছেন। তিনি যাতে সম্মানের সঙ্গে তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেন তা সুরক্ষিত করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here