পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ বীরভূমের প্রাচীন তীর্থক্ষেত্রগুলির মধ্যে তারাপীঠ আজ আন্তর্জাতিক সাধন ক্ষেত্রের কেন্দ্রভূমি। রহস্যের জালে আবৃত করে রেখেছে এই শক্তিপীঠকে।
শক্তি সাধনার অন্যতম প্রধান সাধনপীঠ তারাপীঠ। কবে এই পীঠস্থান আবিষ্কৃত হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। অতি প্রাচীন দেবীশিলা মা উগ্রতারা, বশিষ্ঠদেব বা সাধক বামাক্ষ্যাপাকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য কাহিনী। বীরভূমের প্রাচীনতম তীর্থক্ষেত্র তারাপীঠ আজ আন্তর্জাতিক কৌতূহলের কেন্দ্রভূমি।

তারাপীঠ ৫১ পীঠের মধ্যে পড়ে না, কারণ ‘মহাপীঠ পুরাণে’ তারাপীঠ পীঠস্থান-তলিকভুক্ত নয় বা তারাপীঠ পীঠের মধ্যে পড়ে না। জনমানসে একথা অনেকদিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে যে, সতীর ত্রিনয়ন এখানে পড়েছিল। কিন্তু পুরাণাদি গ্রন্থে এই সমর্থনে কোনরূপ তথ্য পাওয়া যায় না।
কথিত আছে ব্রহ্মার মানসপুত্র বশিষ্ঠ মুনি চিন দেশে গেছিলেন মাতারা সাধনা করতে কিন্তু সেখানে তার সাধনা সফল হয়নি, সেখানে তিনি এক দৈববাণী পেয়েছিলেন যাতে বলা হয়েছিল বক্রেশ্বরের ঈশান কোণে এবং দ্বারকা নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে যদি তিনি মা তারার সাধনা করেন তবেই সিদ্ধি লাভ করবেন। সেই দৈববাণী অনুসারে সাধক বশিষ্ঠ দ্বারকা নদী কূলে মহাশ্মশানে শ্বেত শিমুল গাছের তলে পঞ্চমুন্ডির আসনে এসে তারা মা সাধনায় বসেন এবং সিদ্ধিলাভ করেন। এরপরে তিনি প্রথম তারাপীঠ মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন।ব্রহ্মার মানসপুত্র বশিষ্ঠের সিদ্ধপীঠ তারাপীঠ আরো অনেকেরই সাধনপীঠ তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য — সাধক বামাক্ষ্যাপা।

এরপর তারাপীঠ মন্দিরকে পুনর্নির্মাণ করেন জয় দত্ত বণিক। কথিত আছে তৎকালীন রত্নাগড়ের জমিদার জয়দত্ত বণিক বাণিজ্য করতে এই দ্বারকা নদীর তীরে এসেছিলেন, আর সেখানেই সাপের কামড়ে মারা যায় তার ছেলে। লোকমুখে প্রচলিত কথা অনুসারে দেবীর মহিমায় জয়দত্ত তার ছেলের জীবন ফিরে পেয়েছিলেন। আর তারপরই তিনি তারাপীঠ মন্দিরের নির্মাণ করেন।এরপর ১২২৫ বঙ্গাব্দে তৎকালীন মল্লারপুরের জমিদার জগন্নাথ রায় তারাপীঠ মন্দির আবার পুনরায় নির্মাণ করেন। দেবী এখানে তারাময়ী কালী, মুখমন্ডল ছাড়া সারা অঙ্গ বসনে আবৃত। ছোটো দ্বিভুজা মূর্তি, গলায় সাপের মালা, পবিত্র সুতোয় অলংকৃত, বাঁ কোলে শিব স্তনপান করছে।
তারাপীঠ থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে নালহাটি। কথিত আছে শিবের রুদ্রতান্ডবের ফলে সতীর দেহের নানা অংশ ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তার থেকে ভারতবর্ষে নানা সতীপীঠের সৃষ্টি হয়, তারমধ্যে নালহাটি অন্যতম। তারাপীঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বীরচন্দ্রপুর, এই স্থানটি নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর জন্মস্থান।
কিভাবে যাবেন তারাপীঠ: কলকাতা থেকে তারাপীঠের দূরত্ব মাত্র ২৯৪ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে সরাসরি বাস পাওয়া যায়। আবার হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে ট্রেনও আছে। ট্রেনে তারাপীঠ নেমে বাস বা গাড়ি করে পৌঁছানো যায় তারাপীঠ মন্দির।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584