গলসীর মাটির নীচে চাপা পড়ে আছে ইতিহাস নির্বিকার কর্তৃপক্ষ

0
188

সুদীপ পাল,বর্ধমানঃ

বর্ধমানের উপকন্ঠে গলসীর জুজুটি গ্রামে গত বছর অক্টোবর মাসে একশো দিনের কাজে মাটি কাটার সময় দামোদরের তীরে দুটি প্রাচীন মন্দির আবিস্কার হয়েছিল।মাটি খুঁড়তে গিয়ে প্রথমে একটি মন্দিরের চূড়া দেখতে পান শ্রমিকরা। পরে ফের আর একটি চূড়া আবিষ্কার হয়। খবর পাঠানো হয়েছিল আর্কিওলোজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কাছেও। এসেছিলেন প্রতিনিধিদল। কিন্তু দীর্ঘদিন আর কোন খননকার্য না হওয়ায় এবং ঐতিহাসিক জায়গাটিকে কেবলমাত্র অস্থায়ী বাঁশের বেড়া দেওয়ায় ক্ষোভ জমছে এলাকাজুড়ে। ইতিহাস শিক্ষক রোহিত মাইতি বলেন, মনসামঙ্গল কাব্যের বনিক চাঁদ সওদাগর এই পথ দিয়ে বানিজ্যে যেতেন। এই মন্দির তাঁর কীর্তি হয়ে থাকতে পারে।তার প্রধান কারণ, প্রথমত এখানে একটি খেয়া ঘাট ছিল এবং হয়ত তিনি জুজুটি গ্রামের কাছে দামোদরের তীরে জাহাজ নোঙ্গর করেছিলেন। দ্বিতীয়ত তিনি ছিলেন শিবের উপাসক। যদিও অন্যমতে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে দামোদরের জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ায় বন্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য দামোদরের পার ধরে বর্ধমানের রাজ পরিবার বাঁধ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। সেই সময় হয়তো এই মন্দিরদুটি চাপা পড়ে যায়।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের যে দল জুজুটি পরিদর্শনে আসেন তাঁরা বলেন, একটি শিবের মন্দির এবং অন্যটি পার্বতীর মন্দির। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান সুবোধ ঘোষ বলেন, প্রতি বছর বহু মানুষ পিকনিক করতে আসেন। তাই এই জায়গাটিকে ভ্রমণের উপযুক্ত করে তোলার জন্য ভূড়ি পঞ্চায়েতের অধীনে জুজুটি গ্রামের শশ্মান ঘাট সংলগ্ন এলাকায় একটি বিনোদন পার্ক তৈরী করার কাজ শুরু করা হয়েছিল। চার ফুট মাটি কাটার পর তাঁরা দেখতে পায় একটি মন্দিরের চূড়া। তিনি বলেন, ইংরেজ আমলে এখানে একটি লাইট হাউস (ওয়াচ টাওয়ার ) ছিল। আশপাশের গ্রামের মানুষকে বন্যায় সতর্ক করার জন্যই এই ব্যবস্থা ছিল বলে জানা যায়। ওয়াচ টাওয়ার থাকায় এই জায়গাটির উচ্চতা ছিল অনেক বেশি।তাই একশো দিনের কাজে শ্রমিকরা মাটি কেটে সমান্তরাল করছিলেন।

অস্থায়ী বাঁশের বেড়ায় ঘেরা সেই মন্দিরচূড়া।ছবিঃপ্রতিবেদক

কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও কেন আর খননকার্য হচ্ছে না সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের বক্তব্য,  ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের তরফে খননের কাজ হবে বলে জানানো হয়েছিল। পঞ্চায়েতের তরফে যাতে আর মাটি না খোঁড়া হয় সে কথাও বলে যান আধিকারিকরা কিন্তু খননকার্য আর হয়নি। প্রাচীনতার খোঁজ মিললে বহু মানুষ তা দেখতে এখানে আসতেন। তাতে এলাকার পরিচিতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধি হত এবং পর্যটনের কেন্দ্র হিসাবে খ্যাতি লাভ করতো। তাঁদের আক্ষেপ, এখনো পর্যন্ত চার ভাগের এক ভাগই দেখা গিয়েছে, বাকি অংশ এখনো মাটির নিচেই।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here