শ্যামল রায়,নবদ্বীপঃ
রাসের শহর নবদ্বীপে নেই নেই করে বেশ কিছু পারিবারিক পুজোর ঐতিহ্য আজও আকর্ষণীয় দর্শনার্থীদের কাছে।জানা গিয়েছে যে নবদ্বীপ শহরের মূল আকর্ষণ পারিবারিক পুজো গুলিতে। নবদ্বীপ থানা সূত্রে জানা গিয়েছে যে নবদ্বীপ শহরে বারোয়ারি অনুমোদিত পুজো সংখ্যা ৬৫টি। আর পারিবারিক পুজো গুলির সংখ্যা ২৫ টি। তবে নবদ্বীপ শহরের সব থেকে আকর্ষণীয় এবং ঐতিহ্যবাহী পুজো হলো নবদ্বীপ শহরের জগনাথ তলার ভট্টাচার্য্য বাড়ির লাল দুর্গা ঘিরে।লাল দুর্গা কেন?এই কথা জানতে সোমবার হাজির হতে হল লাল দূর্গা পূজা কমিটির পরিবারের সদস্যদের কাছে।প্রবীণ সদস্য কুমার নাথ ভট্টাচার্য্য জানালেন যে বাংলাদেশের মিতরা গ্রামে এই দুর্গাপুজো সূচনা হয়েছিল ৩৫০ বছর আগে।

দুর্গা লাল কেন?এই প্রসঙ্গে তিনি জানালেন যে দুর্গা শুধু লাল নয় দুর্গা পশ্চিম মুখী।কারণ সম্পর্কে তিনি জানালেন যে এই পুজোর সূচনা লগ্নে যিনি প্রচলন করেছিলেন রাঘব মৈত্র নবমীর দিন চন্ডী পাঠ করছিলেন বাবা রাঘব মৈত্র। চণ্ডীপাঠ এ উচ্চারণ ভুল হচ্ছিল বলে ছেলে রমেন্দ্র মৈত্র ত্রুটি ধরেন।চণ্ডীপাঠ এ ত্রুটি ধরার কারণে দেবী দুর্গা দক্ষিণমুখী থেকে পশ্চিম মুখী হয়ে যায় এবং দুর্গার গোটা শরীর লাল হয়ে যায়। কথিত যে চণ্ডীপাঠ ত্রুটি ধরার কারণে পুত্র রমেন্দ্র মৈত্র আস্তে আস্তে ফ্যাকাশে হয়ে যেতে থাকে। এবং চণ্ডীপাঠ ত্রুটি ধরার কারণে পরের দিন অর্থাৎ বিসর্জনের দিন ছেলের মৃত্যু হয়।
সেই থেকে আজও দুর্গার মুখ লাল।সেই রীতি অনুসারেই পুজো হয়ে আসছে।এছাড়াও আরও বড় বৈশিষ্ট্য হলো যে নবমীর দিন লাল দুর্গা বোয়াল মাছের ঝোল খেতে পছন্দ করেন।তাই নবমীর দিন তর বোয়াল মাছের ঝোল দেয়া হয়। কুমার নাথ ভট্টাচার্য্য আরো জানিয়েছে যে বোধনের আগের দিন ষষ্ঠী পুজো হয় এবং পরের দিনেও ষষ্ঠী পুজো হয় অর্থাৎ দুই দিন ধরে ষষ্ঠী পুজো হয় এবং প্রতিমার দিক থেকে গণেশ সরস্বতী একদিকে থাকে অন্যদিকে কার্তিক ও লক্ষী একদিকে থাকে জেটা সচড়াচর সব দুর্গাপ্রতিমা তে দেখা যায় না এটা আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য বলে জানিয়েছেন তিনি।তাই নবদ্বীপ বাশির অভিমত এই শহরে এরকম একটি ব্যতিক্রমী দুর্গাপুজো যেটা পারিবারিক পুজোর ক্ষেত্রে অন্যতম লাল দুর্গা পুজো।
এছাড়াও মনিপুর দুর্গা পুজো কমিটির দুর্গাপুজো ৬৯ তম বর্ষে পদার্পণ করলো।পুজো কমিটির সভাপতি অশোক অধিকারী জানালেন যে তাদের এবারের পুজোর বাজেট প্রায় সাত থেকে আট লক্ষ টাকা।এটি থিমের পুজো।সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মানবিকতার ভিড়ে নতুন করে সৃষ্টির স্বাদ মানুষকে উপভোগ করা নই এই পুজোর মূল থিম।এলাকাবাসীর আনন্দ দিতেই এই ধরনের পুজো করার প্রধান কারণ বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।সেই সাথে পুজোর কটা দিন নিজস্ব থিম সং এবং থিম মিউজিক মন্ডবে বাজে এবং প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে।নবদ্বীপ এর মধ্যে সবথেকে সুন্দর মণ্ডপসজ্জা বলে দাবি পুজো কমিটির সভাপতির।এই পুজো কমিটি ইতিমধ্যেই নবদ্বীপ পৌরসভা পরিচালিত দুর্গা পুজো কমিটির তত্ত্বাবধানে একাধিক পুরস্কার পেয়েছে।

এছাড়াও নবদ্বীপে মহিলাদের পরিচালিত দুর্গা পুজো সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। যোগমায়া মহিলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি পরিচালিত পুজোর বয়স ১১ বছর।মধুছন্দা গোস্বামী সভাপতি সম্পাদিকা শুকলা বণিক সদস্য শিউলি সাহা পাপড়ি মন্ডল রুপা কংস বণিক প্রমূখ জানালেন যে তারা সারা বছর ধরে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে এছাড়াও শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে এই পুজো করে থাকেন। সেই সাথে মহিলাদের এই পুজোর মধ্যে দিয়ে আনন্দ উপভোগ করবার জন্যই এই পুজোর নবদ্বীপ শহরের প্রাণকেন্দ্র পুরোমাত্রায় পোড়া মা তলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির আয়োজিত দুর্গাপুজো ৭৫ বছর পদার্পণ করলো। বৈষ্ণব মতে পুজো হয় ষষ্ঠীর দিনে পাঁচটি ঘট বসিয়ে পুজো করা হয় জানালেন পুরোহিত সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। পুজো কমিটির সম্পাদক নবদ্বীপ পৌরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান শচীন বসাক জানালেন যে একটি ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপূজা এটি। প্রচুর দর্শনার্থীদের ভিড় হয় এই পুজো দেখতে। প্রতিমা নরসিংহ মূর্তি। এছাড়াও নবদ্দীপ শহরের উত্তর প্রান্তে তরুণ সংঘ পরিচালিত পুজোর বয়স ৫৮বছর।সুন্দর মণ্ডপসজ্জা মধ্যে দিয়ে পুজোয় দর্শক টানে বলে জানিয়েছেন স্বপন দেবনাথ এবং সভাপতি সনাতন দাস।এছাড়াও নবদ্বীপ শহরের উল্লেখযোগ্য পুজো হলো তেঘড়ি পাড়া সার্বজনীন দুর্গা পুজোর বয়স ৮৯বছর।এছাড়াও রয়েছে আগমেশ্বরী পাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি পরিচালিত দুর্গাপুজো প্রাচীন মায়াপুর সার্বজনীন দাড়া পাড়া সার্বজনীন ভট্ট পাড়া সার্বজনীন নবদ্বীপ রেলেশন সর্বজনীন ঘাট স্পোর্টিং ক্লাবের পূজো বুড়ো শিবতলা সার্বজনীন পূজো প্রফুল্ল নগর যুব সংঘ পরিচালিত দুর্গাপুজো চারা পাড়া সার্বজনীন দুর্গা পুজো আজাদিন ক্লাবের ৪৩ তম বর্ষে পুজো ঘিরে চলছে নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন এছাড়াও সার্বজনীন বিবেকানন্দ ক্লাব মহিলা কমিটি পরিচালিত দুর্গাপুজো ১৮ তম বর্ষ পদার্পন করেছে। দণ্ডপানি তারা ঘাট দুর্গোৎসব কমিটি পরিচালিত দুর্গাপুজোয় মন্দিরের আদলে মণ্ডপ সব মানুষের যোগদানে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেল।৪ পল্লী সার্বজনীন দুর্গোৎসব গৌড়বঙ্গ বারোয়ারি মিলন সংঘ হরিতলা সর্বজনীন ৪ পল্লী সার্বজনীন অবামা দ্বিভূজা দুর্গা এক হাতে উলঙ্গ বালক অন্য হাতে ভরা ভয় মুদ্রা অনুমান করা হয় এটি পঞ্চদশ শতকের মূর্তি মূল বিগ্রহটি ধাতু নির্মিত মাত্র কয়েক ইঞ্চি প্রায় আড়াইশো বছরের দাড়াপাড়া বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো শাক্ত মতে পুজো হয় বলি এখানে নিষিদ্ধ।পান্তা ভোগ দেয়া হয় দুর্গাকে।জগন্নাথ তলা ধনী বাড়ির দুর্গাপুজো চারি চালা পাড়ার বাড়ির দুর্গাপুজো চন্দ্র বাড়ির দুর্গাপুজো দণ্ডপানি তলার মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ৩০০ বছর পূজো এবং নাট মন্দিরে পুজো হয়। এছাড়াও সতী দেব ভাষা শিক্ষা নিকেতন দ্বারা পরিচালিত ৯ দিন নবরাত্রি পুজো সপ্তমী অষ্টমী নবমী তে কুমারী পুজো হয় ২৫ জন পন্ডিত পূজো পরিচালনা করেন পুজো কে কেন্দ্র করে করে ৯ দিন ধরে বৈদিক যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় জানিয়েছেন বেনুগোপাল মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ সাবেকি পুজোর ঐতিহ্য অম্লান বর্ধমানে
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584