প্রীতম সরকার
একটিও নাটবল্টু নেই এই ঝুলন্ত সেতুতে। কলকাতা সহ ভারতের গর্ব এই সেতু। পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম ঝুলন্ত সেতু এই হাওড়া ব্রিজ। কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত রেল ষ্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম এই সেতু। ব্রিটিশরা যখন হুগলি নদীর উপরে এই সেতু তৈরি করেছিল, তখন সেতু তৈরিতে একটিও নাটবল্টু ব্যবহার করেনি।
লোহা বেঁকিয়ে বল্টুর মতো ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই সেতু তৈরির আগেও ১৮৭৪ সালে অন্য একটি সেতু হুগলি নদীর উপরে ছিল। সেই সেতু ছিল পণ্টুন সেতু। অর্থাৎ ভাসমান সেতু। সেতুর নীচ দিয়ে নৌকা যেত। উপরে ছিল পাটাতন। বড় জলজ যান এই সেতুর কাছে এসে ভোঁ বাজাত। আর সেই ভোঁ এর আওয়াজ শুনে কর্মচারীরা সেতুর মাঝের ২০০ ফুটের পাটাতন সরিয়ে দিত।
কিন্তু আধুনিকতার দাবিতে ব্রিটিশরা বিশ শতকে সরকারি উপরমহলে ভাসমান সেতুর বদলে ক্যান্টিলিভার সেতু তৈরির দাবি তোলে। ওই ভাসমান ব্রিজের নক্সাকার ব্র্যাডর্ফোড লেসলি জোর গলায় তার বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল পৃথিবীতে সেসময় মাত্র তিনটি বিশাল খিলানওয়ালা সেতু (ক্যান্টিলিভার) ছিল, তারমধ্যে একটি ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ক্যান্টিলিভার সেতু তৈরির অনুমোদন দেয়। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারনে এই হাওড়া সেতু তৈরির কাজ পিছিয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ ওরা কাজ করে দেশ-দেশান্তরে, কিন্তু…
১৯২১ সালে রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন কমিটি তৈরি করে তৎকালীন বিশিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার বেসিল মল্টের পরামর্শে ‘সিঙ্গিল স্প্যান আর্চড ব্রিজ’ রূপায়নের পরিকল্পনা হয়। শেষে ১৯৩৭ সালে এই ঝুলন্ত সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়। যা শেষ হয়েছিল ১৯৪৩ সালের আগষ্ট মাসে। ১৯৬৫ সালের ১৪ জুন বাঙালীর গর্ব এই সেতুর নাম পরিবর্তন করে রাখা হলো ‘রবীন্দ্র সেতু’।
আরও পড়ুনঃ বিস্মৃত বাঙালি রেজিমেন্টের ইতিহাস
করোনার লকডাউনের আগে পর্যন্ত প্রতিদিন দেড় লক্ষ নিত্যযাত্রী এবং একলক্ষ যানবাহনকে হুগলি নদীর এপাড় ওপার করার গুরু দায়িত্ব নিয়ে চলেছে এই সেতু। যদিও বর্তমানে অযত্নের ছাপ যথেষ্ট। তবুও এখনও এর প্রযুক্তি এবং আভিজাত্য সমীহ আদায় করে নিতে ভোলে না বাঙালীর গর্ব এই হাওড়া ব্রিজ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584