মোহনা বিশ্বাস, কলকাতাঃ
পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছেন আট থেকে আশি সকলেই। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবেন না দর্শনার্থীরা। গতবছরের মতো এবছরও বাইরে থেকেই মা দুর্গাকে দর্শন করতে হবে। ভুললে চলবে না করোনা বিধিও। কারণ, বিশষজ্ঞরা বলেই দিয়েছেন যে শীঘ্রই করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে চলেছে এ দেশে। তাই আগে থেকে সতর্ক থাকাই শ্রেয়। প্রশাসন এ বিষয়ে যথেষ্ট সাবধানী। সেই কারণে পুজোর মরশুমে শহরে নানা নির্দেশিকা জারি রয়েছে।
এমনকী যানজট ও ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা মাথায় রেখে পুজোর আগে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সেরে ফেলেছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু তাতে কী? প্রশাসন সতর্ক থাকলেও ডবল ডোজ, মাস্ক, দূরত্ব বিধি ভুলে গায়ে গা ঘেঁষে হুড়োহুড়ি করে বুর্জ খলিফা দেখছেন দর্শনার্থীরা। শ্রীভূমির দুর্গাপুজোয় এবারের থিম বুর্জ খলিফা। কলকাতার এই বহুল প্রচারিত পুজোর মূল উদ্যোক্তা ক্লাব কর্তা তথা দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু।
মহালয়ার দিন থেকেই সেই শ্রীভূমি মণ্ডপ চত্বরে দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়েছে। শ্রীভূমির দুর্গা প্রতিমাকে সাজানো হয়েছে ২০ কোটি টাকায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই মায়ের এই সাজ দেখতে এবং মন্ডপসজ্জা দেখতে শ্রীভূমিতে ভিড় জমাচ্ছেন আমজনতা। এটা অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। শ্রীভূমির পুজোয় মূল আকর্ষণ থিম বুর্জ খালিফা। যা আসলে দুবাইয়েতে রয়েছে।
পুজোয় ভিড় সামলাতে শহরে প্রচুর ভলেন্টিয়ারের সঙ্গে পুলিশকর্মীদেরও মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার শ্রীভূমির পুজোয় যে জনপ্লাবন দেখা গেল তাতে করোনা-ও হয়ত মুখ লুকোলে বাঁচে। কারোর মাস্ক গলায় ঝুলছে তো কারোর মুখে মাস্ক নেই। এদিকে এই ভিড়ে কে ডবল ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তা চিহ্নিত করার ক্ষমতা কারোর নেই। ভিড় করে আসা এই দর্শনার্থীদের মন্তব্যও বেশ ‘সাহসী’ এবং ‘ইতিবাচক’। শ্রীভূমিতে বুর্জ খলিফা দেখতে আসা দর্শনার্থীদেরই কেউ কেউ ওই ভিড়ের মধ্যে থেকে বলেন, ‘করোনা আমার হবে না।’
শুধু কি তাই? একবছরের বাচ্চাকে নিয়ে দূরত্ব বিধি, মাস্কের কথা ভুলে গিয়ে ঠাকুর দেখতে শ্রীভূমি গেছেন মা। বলছেন, “পুজোর সময় বাড়িতে তো বসে থাকা যায় না। একটু তো ঠাকুর দেখতে বেড়তেই হবে। আর আমার ছেলের এবছর প্রথম ঠাকুর দেখা।”
এদিকে, ভিড় প্রসঙ্গে পুজো কমিটিকে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা বলছেন, “আমরা হাইকোর্টের নির্দেশিকা মেনেই ব্যবস্থার আয়োজন করেছি। কিন্তু সারা কলকাতার মানুষ যদি আমাদের পুজো দেখতে এসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভিড় করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা আমাদের যা যা করণীয় সবটা করেছি। দূরত্ববিধি বজায় রাখা, মণ্ডপের ভেতরে প্রবেশ না করা সবই করছি।”
আরও পড়ুনঃ পুজোর অনুদানে সবুজ সঙ্কেত, তবে খরচের রিপোর্ট হলফনামা দিয়ে জানাতে হবেঃ হাইকোর্ট
‘পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসেন অন্তর্যামি।’…..এখানকার বিষয়টাও খানিকটা এই প্রবাদবাক্যের মতোই। একদিকে পুজো কমিটির দায় সারা উত্তর আর অন্যদিকে মানুষের ইতিবাচক মনোভাব পুজো একেবারে জমজমাট করে তুলেছে। কিন্তু এসব দেখে আড়ালে যে করোনা হাসছে তা এখন কারোর চোখেই পড়ছে না। এত ভিড় দেখে অনেকে টিকাটিপ্পনি দিয়ে এও বলেছেন যে, ‘অনেকদিন ধরেই শুনছি করোনার তৃতীয় ঢেউ আসছে। সে কি এসে পৌঁছেছে? নাহলে তাকে শীঘ্রই ডাকা হোক। এটাই তো তৃতীয় ঢেউ আসার উপযুক্ত সময়।’
আরও পড়ুনঃ ৭০ শতাংশ টিকাকরণ সম্পূর্ণ, সিডনিতে শীঘ্রই উঠবে লকডাউন
বিপদ এড়াতে উৎসবে জমায়েত-শোভাযাত্রা এড়িয়ে এ বারের পুজো পরিবারেই সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। ভিড় থেকে বিশেষত শিশু, বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা ও অসুস্থদের দূরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। টিকার জোড়া ডোজ নিয়েই নিশ্চিত হচ্ছেন এক শ্রেণির মানুষ, যা একেবারেই উচিত নয়, জানান ডাক্তাররা। কারণ টিকার দুটো ডোজ নেওয়ার পরেও করোনার আক্রান্ত হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। কিন্তু এসবে কর্ণপাত করতে নারাজ উৎসব মুখর বাঙালি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584