পিয়ালী দাস,বীরভূমঃ

রাত পোহালেই কৌশিকী অমাবস্যা।অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা,কারণ তন্ত্র মতে ও শাস্ত্র মতে ভাদ্র মাসের এই তিথিটি একটু বিশেষ।অনেক কঠিন ও গুপ্ত সাধনা এই দিনে করলে আশাতীত ফল মেলে।
সাধক কুলকুণ্ড লিনী চক্রকে জয় করে।বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ মাহাত্ম্য আছে।তন্ত্র মতে এই রাতকে ‘তারা রাত্রি’ও বলা হয়৷এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুইয়ের দরজা মুহূর্তের জন্য খোলে ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন৷

শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে, পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে চতুরানন তাঁদের বর দেন,কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না৷ শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন।
অর্থাৎ এমন এক নারী,যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে। পৃথিবীতে এমন নারী কোথায়? আদ্যা শক্তি মহামায়াও মেনকা রানির গর্ভে জন্ম নিয়েছেন, তাই তিনিও ওঁদের নাশ করতে পারবেন না।
আরও পড়ুনঃ শ্রাবনের শেষ সোমবার, শিবের মাথায় জল ঢালতে ভক্ত সমাগম কোলাঘাটে
তা হলে উপায়?পূর্ব জন্মে পার্বতী যখন সতী রূপে দক্ষ যজ্ঞ স্থলে আত্মাহুতি দেন,তার কারণে এই জন্মে ওঁর গাত্র বর্ণ কালো মেঘের মতো।তাই ভোলানাথ তাঁকে কালিকা ডাকতেন।
একদিন দানব ভাইদের দ্বারা পীড়িত ক্লান্ত দেবতারা যখন কৈলাশে আশ্রয় নিলেন,শিব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে বললেন, “কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো।” সবার সামনে ‘কালী’ বলে ডাকায় পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ,অপমানিত ও ক্রোধিত মনে মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা করলেন।
তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালো পরিত্যাগ করলেন ও পূর্ণিমার চাঁদের মতো গাত্র বর্ণ ধারণ করলেন।
ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। ইনি দেবী কৌশিকী।আজ সেই তিথি,যে দিন এই দেবীর উৎপত্তি হয় এবং তিনি শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন।তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা।আবার আজকের এই দিনে দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয়া স্তরের অন্যতম দেবী তারা মর্ত ধামে আবির্ভূত হন।
বীরভূম জেলায় অবস্থিত তারাপীঠে এই উপলক্ষ্যে বিশাল উত্সব হয়৷ বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিং জানান, কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম হয় তারাপীঠে কৌশিকী অমাবস্যাকে উপলক্ষ্য করে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে বীরভূম জেলা পুলিশের তরফ এর সমস্ত রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে,একটি পুলিশ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে মন্দির চত্বর থেকে শুরু করে তারাপীঠে প্রবেশপথ দিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে।
গতবারের তুলনায় এবার পুলিশের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। দ্বারকা নদী তে সব রকম বিপদ সেচ দফতরকে অনুরোধ করা হয়েছে জল কম ছাড়তে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584