শুভদীপ ভট্টাচার্য, বহরমপুরঃ
কাজের সুযোগের লোভ দেখিয়ে দেহব্যবসার অভিযোগ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। নার্সিং স্টাফ বা ‘মাতৃ মা’তে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার টোপ দেখিয়ে শহরের নানা প্রান্তের মেয়েদের দেওয়া হয় কুপ্রস্তাব। অসহায়তার সুযোগ নিয়ে রক্ষক হয়ে ওঠে ভক্ষক। এরকম ঘটনা আকছার ঘটে মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু সবটাই শোনা যায় কানাঘুঁষো। পর্দার আড়ালের রয়ে যায় সূত্রধররা।সামাজিক সম্মানের খাতিরে কেউই সাহস পাননা এগিয়ে এসে বঞ্চনার কথা প্রকাশে।অনিচ্ছুকদের ওপর চলে নানাপ্রকার ব্ল্যাকমেলিং। বলা হয় পাওয়া কাজ নিমেষেই হারাবে তারা,যারা অনিচ্ছা প্রকাশ করে কর্তার বিছানার চাহিদা পূরিত না হয়। কিন্তু জ্বালা সইতে না পেরে, দোষীদের শাস্তি ও বঞ্চনার প্রতিবাদে মুখ খুললেন প্রতিমা মাহারা।
বহরমপুরের বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা প্রতিমা। স্বামীর রয়েছে ছোট্ট একটি মুদিখানা দোকান। বিক্রিবাট্টা যা হয় তাতে চলেনা সংসার। তার ওপর দুই মেয়ের ‘বোঝা’। বড় মেয়ে কলেজে, ছোটো মেয়ে হাইয়ার সেকেন্ডারির ছাত্রী। পড়াশোনার ব্যায় সামলাতে হিমসিম খেতে হয় প্রতি মাসে। সামলে উঠতে নাভিশ্বাস উঠে যায় প্রতিমার। অবশেষে কাজের সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিমা। হন্যে হয়ে কাজ খুঁজতে গিয়ে অবশেষে যেন আশার আলো খুঁজে পায় এক ঠিকাদারের কথায়।
মেডিক্যাল কলেজে দালালচক্রের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রোগী ভর্তি থেকে রোগীর সুচিকিৎসা দালালের হস্তক্ষেপ ছাড়া অন্ধের হাতি দেখার মতই। কিন্তু প্রতিমার বয়ান অনুযায়ী দালালচক্রের শিকড় প্রোথিত মাটির অনেক নীচে। রোগীজনিত সমস্যার কথায় যে দালালদের সন্ধান মেলে তারা নাকি নেহাতই চুনোপুঁটি, রাঘব বোয়ালরা জলের অনেক গভীরের।
২০১৬ সালে প্রতিমা মাহারা কাজের দাবীতে দ্বারস্থ হয় তাপস ঘোষ নামে এক ঠিকাদারের। সে অভয় দেয় হয়ে যাবে কাজ। কাজ সুষ্ঠ ভাবে যাতে পায় প্রতিমা তার দায়িত্ব দেয় সুকুল নামে এক সহকর্মীকে। অসহায়তার সুযোগ নিয়ে প্রতিমাকে কুপ্রস্তাব দেয় সুকুল। প্রতিমা অনিচ্ছা প্রকাশ করলে সুকুল জানায় মিলবেনা কাজ। সংসারের বিরাট বোঝার সামাল দিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হয় প্রতিমা। কাজও মেলে তার। কিন্তু কর্মক্ষেত্রের বাইরেও সুকুলের বেডরুম অব্দি ডিউটির সীমা বেঁধে দেয় সুকুল। কয়েক মাস ব্যাপী চলতে থাকে এহেন শারীরিক ভোগ। অবশেষে হাঁপিয়ে ওঠে প্রতিমা। সাফ জানায় সুকুলকে, তার না পারার কথা। পুনরায় সুকুল একইভাবে পূর্বতন পদ্ধতিতেই ‘কাজ খেয়ে’নেবার জুজু দেখাতে থাকে। তবুও রাজী হয়নি প্রতিমা। দিনকয় যেতেই সুকুলের কথামতই কাজ হারায় প্রতিমা। রাগে অপমানে দিশাহারা হয়ে অবশেষে লজ্জার সবটুকু খুইয়ে সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার। জানায় হিউম্যান রাইটস এ। এফ আই আর ও দায়ের করে থানাতে। কিন্তু মেলেনি বিচার।
অবশেষে অনশনে বসে প্রতিমা। প্রিন্সিপ্যাল এর পুরানো বিল্ডিংয়ে বর্তমানে এমএসভিপি’র অফিস। অফিসের সামনেই বিগত তিন দিন থেকে অনশনে প্রতিমা। জবাব, সুরাহা এবং দোষী শাস্তির দাবী তার। এমএসভিপি জানিয়েছে কমিটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তার ঠিকাশ্রমিকের কাজে বহাল রাখার বিষয়ে। কিন্তু অনড় প্রতিমা, তার অবস্থানে। তার কাজের সুরাহা ও দোষীদের শাস্তির দাবীতে আমরণ অনশনে যেতে পারে সে, বলে জানিয়েছে প্রতিমা মাহারা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584