শুভশ্রী মৈত্র, ওয়েব ডেস্কঃ
বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে প্রথম ক্যাবিনেট মিটিং- এই কার্যকর করা হবে সিএএ। সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশিত হয়েছে কাল, যার পোশাকি নাম ‘সোনার বাংলা সঙ্কল্প পত্র-২০২১’। রয়েছে ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি, সঙ্গে প্রথম ক্যাবিনেট মিটিং-এই সিএএ কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু এখানেই উঠছে প্রশ্ন।
পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু ও আসাম এই চার রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে নির্বাচন আসন্ন। কিন্তু নির্বাচনমুখী প্রতিটি রাজ্যের ক্ষেত্রে সিএএ নিয়ে বিজেপি-র অবস্থান ভিন্ন। এমনটা কেন? প্রশ্ন তো থাকছেই!
আসামে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এড়িয়ে যাচ্ছেন সিএএ সংক্রান্ত প্রশ্ন। নির্বাচনী প্রচারে তাঁর বক্তব্য, বিজেপি নির্বাচনে লড়বে জাতিগত পরিচয় ও উন্নয়নকে সামনে রেখ, নাম উচ্চারণ করেননি সিএএ-র। বিরোধী দল কংগ্রেসের স্বচ্ছ অবস্থান- কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে হবে না সিএএ।
লাহয়াল কলেজে এক সভায় রাহুল গান্ধী বলেন,কংগ্রেস যদি ক্ষমতায় আসে রাজ্যে সিএএ কার্যকর হবেনা। আর কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার হলে বাতিল করা হবে আইন। এবিষয়ে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কে প্রশ্ন করা হলে রাহুলকে তিনি কটাক্ষ করলেও কোন সঠিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে উঠতে পারেননি।
ওদিকে তামিলনাড়ুতে বিজেপির শরিক দল এআআইডিএমকে বিরোধিতা করছে সিএএ-র। তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করে বাতিল করানো হবে সিএএ। সেখানে বিজেপি, এআইডিএমকে দুই দলই ভোটের আগে সিএএ বিরোধিতা করছে সংখ্যালঘু ভোট হারানোর ভয়ে। বিজেপি আইটি উইং এর রাজ্য সভাপতি নির্মল কুমার অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী এদাপ্পাদি পালানিস্বামীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন গত বিধানসভায় সিএএ র স্বপক্ষে তাঁর ভাষণের কথা। এআআইডিএমকের ভেলোর জেলার প্রাক্তন জেলা সম্পাদকের মন্তব্য, ”আমরা ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস হারিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী আজ যা বলছেন তা বলা উচিত ছিল প্রথমেই।”
এতো গেল সিএএ সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলির গতিপ্রকৃতি। কিন্তু সিএএ শুধু রাজনৈতিক তরজার বিষয় নয়।এ প্রসঙ্গে বহু মামলা হয়েছে ইতিমধ্যে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি অবিজেপি রাজ্যের বিধানসভায় রেজলিউসন হয়েছে যে কার্যকর হবে না সিএএ। দেখা যাক আইনি অভিমত কি পাওয়া যাচ্ছে এ বিষয়ে।
আরও পড়ুনঃ সরকারি পরিবহণে টিকিট লাগবে না মহিলাদের, ঘোষণা বিজেপির ইস্তেহারে
প্রাক্তন বিচারপতি গোপালা গৌড় জানিয়েছেন সিএএ ‘অসাংবিধানিক’। শুক্রবার তিনি বলেন, “ ১৯৯৪ সালের এসআর বোম্মাই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দেয়, এমন কোন আইন পার্লামেন্ট বা কোন রাজ্য বিধানসভা প্রণয়ন করতে পারে না যা ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ সৃষ্টি করে”। প্রাক্তন বিচারপতির মন্তব্য,” আমার মতে সিএএ ঠিক তাই, যা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন। এসআর বোম্মাই কেস অনুযায়ী সিএএ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক”।
আরও পড়ুনঃ “বিজেপি চলে স্কীমে, তৃণমূল চলে স্ক্যামে”, বাঁকুড়ার সভায় মোদি
গত ১৯ মার্চ, সমতা আন্দোলন সমিতি নামে একটি এনজিওর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে, সমিতির আইনজীবী সৌম্য চক্রবর্তী বলেন, বিভিন্ন রাজ্য কেন্দ্রের নতুন কৃষি আইন ও সিএএ-র বিরুদ্ধে রেসুলিউসন পাশ করছে। কিন্তু এই বিষয়গুলি কেন্দ্র তালিকার সপ্তম অনুচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই রাজ্যের অধিকারের মধ্যে বিষয়গুলি পড়েনা। এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার, পাঞ্জাব, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালাকে পার্টি করা হয়েছে। তাঁর দাবি, রাজ্যের অধিকারই নেই কেন্দ্রের আইনের বিরুদ্ধে রেজলিউসন পাস করার। সেকারণে এই রেজলিউসন মূল্যহীন।
এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন এই আইনের বিরুদ্ধে এত মামলা হয়েছে কিন্তু সেগুলির কোন নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এই মামলার শুনানিতে প্রধানবিচারপতি এসএ বোবদে, বিচারপতি এএস বোপান্না ও বিচারপতি ভি রামাসুব্রামনিয়ম কে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ তাঁর পর্যবেক্ষণে বলে, “ বিধানসভার অধিকাংশ সদস্য তাঁদের মত জানিয়েছেন। তাঁরা কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছেন আইন কার্যকর না করতে বা বাতিল করতে। সে অধিকার কেন তাঁদের থাকবে না?” অর্থাৎ দেশের শীর্ষ আদালত রাজ্যের রেজলিউসন পাস করার অধিকারে শীলমোহর দিল কার্যত। এখন প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে তাহলে কোন উদ্দেশ্যে শুধু বাংলায় সিএএ কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বিজেপি!
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584