মহরমের আবেগী সুর সাবেকি জারি গান

0
582

পল্লব দাস,বিশেষ প্রতিবেদনঃ

বাংলার লোক গানের একটি অন্যতম শাখা জারি গান।ভারত ও বাংলাদেশে এক সময় এই গানের প্রচলন ও ব্যাপকতা ছিল লক্ষ্য করার মতো।’জারি’ একটি ফার্সি শব্দ ,যার অর্থ শোক।কারবালার মর্মান্তিক বিয়োগান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে এর উদ্ভব হয়।হিজরি সাল অনুযায়ী প্রথম মাস মুহররম,এই মাসের প্রথম দশ দিন আনুষ্ঠানিক পর্ব পালন হত।প্রথমে মার্সিয়া নামে গান গাওয়া হত পরবর্তীতে সেটার সাথে যুক্ত হয় জারি গান,এটিকেই মহরম উপলক্ষে’মাতম জারি’ বলা হয়।বিভিন্ন আঙ্গিকে নৃত্যগীত সহকারে পরিবেশিত হত এই শোকগাথা । কারবালার শোকাবহ ঘটনা জারি গানের প্রধান উপজীব্য হলেও , ধর্মীয় গান , অতিলৌকিক উৎসবের গান অথবা কবিগানকেও অনেকেই জারি গান বলতো।

ছবিঃপ্রতিবেদক

জারি গানের প্রধানত দুটি দল থাকে।প্রধান যে গায়ক থাকে তাকে বলা হয় ‘বয়াতী’ আর তার চারপাশে থাকে দুই থেকে চারজন ‘দোহার’নৃত্যকারদের বলা হয় ‘জারিকার’ এছাড়াও থাকে যন্ত্রবাদক।জারি গান দিন ও রাত উভয় সময় চলে,শুধু পুরুষ নয় মহিলাদেরও জারি গানের দল হয়।
মার্সিয়া হল ছোটো ছোটো সুরে গাওয়া গান এর সাথে বয়াতী আলাদা সুরে বিস্তৃতভাবে গান শুরু করলে সেটা জারিগান হয়ে যায়।ডুগী, দোতারা,বাঁশি ইত্যাদির ব্যবহার এই গানে দেখা যায়।বয়াতী দোহার সহ সবাই দর্শকদের দিকে মুখ করে ধুয়া গান ধরে। ধুয়া একটি বিশেষ গান যার মধ্যে স্থায়ী অংশটি বারবার গাওয়া হয়,সংশ্লিষ্ট বিষয়টি ফিরে আসে।লোকসংগীত শিল্পী আমানত ফকির বললেন,” ধুয়া জারি গান দুই দলের মধ্যে পাল্লা হতো,সেটা এখন পাওয়া যাবে না …” । অর্থাৎ এটি বিলুপ্তির পথে।তবে জারি গানের কিছু দল এখনও বর্তমান।মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া থানার চারপাশে প্রায় দশটি জারি গানের দল আছে এদের মধ্যে উল্লেখ্য,সাহেবনগর, দক্ষিণ পাঠানপাড়া , শাহজাদপুরের জারি গানের দলগুলি।

ছবিঃপ্রতিবেদক

গবেষকদের মতে সম্রাট জাহাঙ্গীরের হাত ধরে বেশ কিছু শিয়া মুসলমান ভারতে আসেন এবং সম্রাটের পৃষ্ঠপোষকতায় এরা রাজদরবারে বিশেষ পদও লাভ করেন । এরাই পরবর্তীকালে মহরম পালন করে আর আনুষ্ঠানিক ভাবে এদেশেও তার সূচনা হয়।
বাংলার স্থানীয় জনসমাজে জারি গান প্রভূত খ্যাতি লাভ করে। শোনা যায় দুর্গোৎসবেও জারি গানের প্রচলন ছিল।করতালি ,লম্ফদান ,রুমাল সঞ্চালনা সাথে বিভিন্ন অসাধারন নৃত্য কৌশল প্রযুক্ত হতে থাকে এই আসরে। বৃত্তাকারে কোমরে হাত দিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে যুবকের দল নৃত্যগীত পরিবেশন করে। লোকায়ত এই শিল্প বাংলার অন্যতম একটি লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে।বর্তমানে এই নাট্যপরিবেশনা প্রচলন আগের মতো না থাকলেও বিলুপ্ত হয়নি।

আরও পড়ুনঃ রাজ্য ভিত্তিক বিদ্যলয় ফুটবল প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি সভা

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here