নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
শনিবার চতুর্থ প্রহর অমাবস্যার রাতে ১২ বছরের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হওয়া শ্মশান কালীপূজা ঘিরে আনন্দে মেতে উঠলেন পারুলদার অধিবাসীবৃন্দ। অমাবস্যার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় থানার অন্তর্গত কুশবসান গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন পারুলদা একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম।এই গ্রামের বর্তমানে ৪৯০টি পরিবারের বাস। গ্রামের উত্তর পাশে প্রায় আট একর জায়গা জুড়ে রয়েছে হিন্দুদের ব্যবহার্য প্রাচীন শ্মশান ভূমি।
এই গ্রামের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রথা হলো প্রতি দ্বাদশ বৎসরে অর্থাৎ প্রতি ১২ বছর পর পর এই শ্মশানে শ্রী শ্রী শ্মশান কালী মায়ের আরাধনা করা।গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ নলিনীকান্ত খাটুয়া এই পূজার প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, এই পারুলদা গ্রামের “মান্না” পরিবার এলাকায় এক সময় খুবই বিখ্যাত ছিল। জনশ্রুতি অনুযায়ী প্রায় দু’শো বছর আগে একবার এই গ্রামে কলেরা মহামারীর আকার নেয়।এতে শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়ে গ্রাম উজাড় হওয়ার অবস্থায় আকার নেয়।সেই সময় মান্না পরিবারের একজন এয়ো স্ত্রীলোক কলেরা তে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।সেই স্ত্রী লোকটি মৃত্যুর আগে বলে যান তার মৃত্যুর পরে শ্মশানে কালী পূজা করতে। তিনি এও বলে যান যে,তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন কালী পূজা করলেই এই মহামারী দূর হবে।তাঁর ইচ্ছানুসারে মান্না পরিবারের উদ্যোগে এই মহাশ্মশানে অকাল কালী পূজার সূচনা করা হয় ।যা আজ এই গ্রামের ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং প্রতি বারো বছর অন্তর বিশেষ অমাবস্যা তিথিতে শ্রী শ্রী শ্মশান কালী পূজা যথেষ্ট ভক্তি নিষ্ঠা এবং জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হয়।এবারেও শনিবার অমাবস্যা তিথিতে একদিনের এই পূজা অনুষ্ঠিত হলো।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বৃদ্ধা মহিলা বলেন যে প্রথা অনুযায়ী এই পূজা করার জন্য চতুঃপ্রহর অমাবস্যার দিন প্রয়োজন।স্থায়ী মাতৃদেবী থাকলেও প্রথা অনুসারে মায়ের মাটির রাক্ষুসী মূর্তি তৈরি করে পুজো করা হয়।পূজার আগের দিন মধ্যরাত্রি থেকে মায়ের মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয় এবং পুজোর দিন সূর্যাস্তের পূর্বে মায়ের চক্ষুদান পর্ব শেষ করতে হয়।কথিত আছে চক্ষুদান ও বোধনের সময় পুরো গ্রামের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়।পুরনো প্রথা অনুযায়ী গ্রামের উত্তরসূরীরা আজও একই রীতি মেনে এই পূজা করে যাচ্ছেন।তবে আগে হ্যারিকেন লাইট বা হ্যাজাক লাইটের আলোয় পূজা হতো আজ সেখানে যুক্ত হয়েছে চন্দননগরের আধুনিক রঙীন আলোকসজ্জা।
আগেকার দিনে পূজার সময় মধ্যরাতের পর মহিলাদের পূজায় যাওয়া বারণ ছিল,এখন আর সেই প্রথা নেই।পূজার দিন অন্যান্য বারের মতো এবারও মন্দির প্রাঙ্গণে মেলা বসে ছিল।প্রতিবছর একরাত্রির এই পুজোতে আশেপাশের গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ২৫-৩০-হাজার লোকের সমাগম হয় বলে জানালেন পূজা কমিটির সভাপতি অজিত বাগ ও সম্পাদক সমেরেশ মান্না।
রীতি মেনে বলিদান যেমন হয় তেমনি গ্রামের ভক্তদের পাশাপাশি পাশাপাশি এলাকা থেকে আসা ভক্তরা নিষ্ঠার সাথে পূজায় অংশগ্রহণ করেন। গ্রামবাসীদের পক্ষে গুরুপদ মান্না জানান, হাজার-হাজার মানুষের সমাগম এই পূজার একটা বড় পাওনা।
আরও পড়ুনঃ ডগ লাভার্স সোসাইটি উদ্যোগে মালদহে সারমেয় প্রদর্শন অনুষ্ঠান
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584