উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদ যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাছে চরম লজ্জার! আজ দেশ সেই পথেই ধাবিত

0
115

কলমে শরীয়তুল্লাহ সোহন

একদিকে যখন দেশজুড়ে সাধারণ জনগণ তাঁদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে ওষ্ঠাগত। প্রতিনিয়ত বেকারত্ব, কর্মহীনতা, নিরাপত্তা ও খাদ্য সহ যাবতীয় মৌলিক চাহিদা মেটাতে সরকার সর্বোপরি ব্যর্থ। তখনই যাবতীয় মৌলিক চাহিদাকে অন্ধকারের অতল গহ্বরে ঠেলে দিয়ে এক গণতান্ত্রিকামী রাষ্ট্রে উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদ উলঙ্গ রাজার মতো নৃত্য করছে। যা যেকোনো স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাছে লজ্জার।

আপনি যখন সবদিক থেকে ব্যর্থ তখন আপনার কাছে দাবার মূল চালের মতো প্রধান হাতিয়ার ‘ধর্ম’। আর এই ধর্ম নিয়ে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সাম্প্রদায়িকতার এক জঘন্য খেলায় মেতেছে একদল ক্ষমতা পিপাসু পুঁজিবাদীকামী শক্তি। সম্প্রতি কর্ণাটকের ‘হিজাব’কে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে উগ্রবাদের খেলায় মেতেছে, তা আমাদের কাছে চরম লজ্জার।যেখানে গণতন্ত্রকামী রাষ্ট্রে ধর্ম নেহাতই উহ্য বিষয়, সেখানে আমাদের দেশজুড়ে আজ ধর্ম মুখ্য বিষয়। রাজনীতির মূল হাতিয়ার হলো গনতন্ত্র নির্দেশিত পথে জনগণের যাবতীয় চাহিদা পূরণের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধির আসনে অধিষ্ঠিত হওয়া। সেখানে আজ দেশজুড়ে জনগণের সমস্ত মৌলিক চাহিদাকে ভুলন্ঠিত করে ধর্মের নামে এক মেরুকরণের পথ ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতালোভীরা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখছে। আর আমরা সাধারণ জনগণ তাদের প্ররোচনায় পা দিয়ে তাদের তৈরি করা বিষ, যা মারণাস্ত্র থেকে ভয়াবহ ‘সাম্প্রদায়িকতা’ ছড়িয়ে দিচ্ছি।

সংবিধান যেখানে স্বতন্ত্র পোশাক পরার অধিকার দিয়েছে, খাওয়ার অধিকার দিয়েছে, বাকস্বাধীনতার অধিকার দিয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে কিভাবে তা লঙ্ঘন করা যায় তাঁর প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেশবাসী পরখ করছে বিগত কয়েক বছর ধরে। কখনও খাওয়ার নামে হত্যা, কখনও লাভ জিহাদের নামে মধ্যযুগীয় ধাঁচে পিটিয়ে বর্বরোচিত হত্যা। এই রকম হাজারো সংবিধান গর্হিত কাজ নিত্যদিনের ঘটনার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে দেশ।

দেশে চলমান ‘হিজাব’ বিতর্ক খন্ড খন্ড ভাবে নানা জায়গায় নানাভাবে দেখা গেছে। বেশ কয়েক মাস আগে আমাদের খোদ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে হিজাব পড়ার কারণে কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া নিয়ে বাধাপ্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু কর্ণাটকের ঘটনা যাবতীয় অতীতের হিজাব সংক্রান্ত ঘটনাকে পিছনে ফেলে সামনে উঠে এসেছে। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল গতমাসে। কর্ণাটক রাজ্যের উদুপি জেলার এক সরকারি কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের পোশাক সংক্রান্ত এক নির্দেশিকা জারি করে। সেখানে বলা হয় হিজাব পরে ক্লাসে আসা যাবে না। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদল ছাত্রী প্রতিবাদে নামে। আর তাদের প্রতিবাদটি যুক্তিসম্মত কারণ নিয়ম অনুযায়ী সরকারি বিদ্যালয়ের পোশাক কোড থাকলেও কলেজের কোনরকম ড্রেসিং কোড থাকে না। এখানে ছাত্রছাত্রীরা ইচ্ছে মতো ড্রেস আপ করতে পারে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত এক প্রকার অসাংবিধানিক। কিন্তু এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে একদল উগ্রপন্থার ধ্বজাধারী ছাত্র সমাজকে লেলিয়ে দিয়ে এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি গড়ে তুলেছে, তা এক গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাছে অশুভ লক্ষণের।

গতকাল হিজাব পরিহিত এক ছাত্রীকে দেখে একদল উগ্রবাদী যেভাবে এক ধর্মীয় স্লোগান তুলে চিৎকার করলো, বিনিময়ে ছাত্রীটিও তাঁর নিজস্ব ধর্মীয় স্লোগান তুলে চিৎকার করে উঠে উঠল। এই ঘটনায় দ্বিমেরুকরণের মধ্যে দিয়ে একদল ছাত্রীটির বিপক্ষে। তাদের কাছে এদের দেওয়া ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ঠিক। অন্যদিকে একদলের কাছে ছাত্রীটির দেওয়া ‘আল্লাহ আকবর’ ধ্বনিটি ঠিক। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ভেবে দেখলে গণতন্ত্রের কাছে দুটোই লজ্জার! আর দুটোই গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই দেশ ও সমাজ যেভাবে ধর্মীয় উগ্রবাদের দিকে এগোচ্ছে, সঠিক সময়ে জনগণ যদি সচেতন না হয়, তাহলে অচিরেই দেশজুড়ে এক ধর্মীয় সংঘাত দানা বাঁধবে। কারণ দেশের ভাগ্যাকাশে এক উগ্র সাম্প্রদায়িকতার কালো মেঘ জমা হয়েছে, সময়ের আগে যদি জনগণ সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে উলঙ্গ ভাবে নৃত্য করবে সাম্প্রদায়িকতাবাদ। গণতন্ত্র দেবে পিছুটান, তখন সংবিধানটা পরিণত হবে নোটবুকে।

 

[প্রতিবেদনের মতামত লেখকের নিজস্ব]

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here