শান্তনু পুরকাইত,দক্ষিন ২৪ পরগনাঃ
দক্ষিন সুন্দরবনের প্রত্তন্ত এলাকা রায়দিঘি। হেঁতাল,গোরান আর ম্যানগ্রোপ ভরা জঙ্গল একটা সময় বনদেবির পূজাতে মাতোয়ারা হয়ে থাকতেন।চাষ আবাদ আর মৎস শিকার এই এলাকার মানুষদের মূল জীবিকা।একটা সময় চাষ আবাদে সমস্যা হয়ে পরেছিল বাসিন্দাদের কাছে।একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ,অন্যদিকে অশুভ ছায়া গ্রাস করেছিল প্রত্তন্ত এলাকার চাষিদের চাষের জমি।বিপন্ন হয়ে পরেছিল মৎসজীবিদের মাছ ধরা।শেষ হয়ে পরেছিল দক্ষিন সুন্দরবনের রায়দিঘি,মথুরাপুর, ময়রারমহল,মহামায়াতলি,সদিয়াল,নলগোড়া,খাঁড়িপাড়া এলাকার লক্ষাধিক মানুষের জীবন যাত্রা।অভুক্ত সুন্দরবন বাসির সুদিন ফেরে কোজাগরি লক্ষ্মী দেবীর আরাধনায়।
সময়টা সত্তরের দশক।চাষ আবাদের পাশাপাশি আর্থিক সঙ্কটদুর করতে সে সময় থেকে ধুমধাম করে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় দেবী লক্ষ্মী পূজিত হন প্রতিটি গৃহস্থে।বেশ কয়েকটি গ্রামে নেই দূর্গাপুজা।তাই লক্ষ্মীর আরাধনায় দূর্গাপূজার আনন্দে মাতেন সদিয়াল,খাঁড়িপাড়া,উত্তর বয়ারগদির মহামায়াতলা। বিগত কয়েক বছরে থীমের হিরীক পরেছে এলাকায় এলাকায়। কোথাও মন্দিরের আদলে মাদুর পাটকাঠি দিয়ে মন্ডপ সজ্জা।কোথাও বা ট্যাকসালের আদলে মন্ডপ সজ্জার রুপ পেয়েছে।কোথাও বা মন্ডপ রুপনিয়েছে পুঁথি কাঁচ আর ফ্রাইভারের রুপে।মথুরাপুর এক নম্বর ব্লকের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদিয়াল গ্রাম। গ্রামে দূর্গা পূজা না থাকায় লক্ষ্মীআরাধনায় মেতে থাকেন অাট থেকে আশি সবাই।নতুন পোষাক আত্মীয় পরিজনের সমাগমে উৎসব মুখর হয়ে ওঠেন গ্রামের প্রবীন নবীনরা ।ট্যাকসালের আদলে মন্ডপ সজ্জার রুপ পেয়েছে এই গ্রামে।হোগলা পাতা,কাঠি দিয়ে নির্মিত হয়েছে লক্ষ্মী প্রতিমা। নারায়নের সূর্দশন চক্রের মাহাত্ত তুলে ধরা হয়েছে এবারের থিমে।অমঙ্গল হাত থেকে বাঁচতে বিশ্বাস আর ভক্তিতে পালিত হয়ে আসছে লক্ষ্মীর আরাধনা।পূজা ঘিরে হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দুস্থদের বস্ত্র বিতরন থেকে নানান কর্মসূচি চলে পূজা ঘিরে।উৎসব মুখর হয়ে ওঠে সদিয়াল।দর্শনার্থিদের সামনে আনা হয়েছে সহজপাঠের কিছু রুপ।যেখানে হাটবাজারের নির্দশন রুপ থেকে তুলে ধরা হয়েছে চাষ আবাদের দৃশ্য।
গিলের ছাঁট গ্রামপঞ্চায়েতের উত্তর বয়ারগদি গ্রাম।গ্রামে জীবিকা বলতে হস্ত শিল্প।এই শিল্পে দুর্বিসহ হয়ে পরেছিল প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে । ধনদেবির আরাধনার পর গ্রামে হয়েছে উন্নয়ন । ফিরেছে শিল্পের মাহাত্ম ।গ্রামের প্রবিন নবীন সদস্যদের নিয়ে তিন মাস ধরে চলে এবারের মন্ডপ তৈরী।কাঁচ পুঁতি দিয়ে চাঁদ তারার সৃষ্টি এবারে থিম উত্তর বয়ারগদি গ্রামে।প্রতিমা ও তৈরী হয়েছে কাঁচ পুঁতি ফ্রাইবার দিয়ে।প্রতিটি বাড়িতে গৃহদেবীর আরাধনা হলেও । গ্রামের মহিলারা মেতে থাকেন এই মন্ডপের পূজা নিয়ে । কটা দিন উৎসব মুখর হয়ে ওঠেন গ্রামের বাসিন্দারা।যাতপাত ভুলে হিন্দুদের সঙ্গে লক্ষ্মী পূজায় মেতেছেন মথুরাপুর ২ নম্বর ব্লকের গিলের ছাঁট গ্রাম পঞ্চায়েতের খাঁড়ির মহামায়া হালদার পাড়া।খ্রীষ্টান আর হিন্দুদের মেল বন্ধন ধনদেবীর আরাধনাতে মেতেছেন প্রবীন থেকে নবীনেরা। মাদুর পাটকাঠিদিয়ে তৈরী করা হয়েছে ৪০ ফুটের মন্ডপ।পাটকাঠি মাদুর কাঠি দিয়ে তৈরী হয়েছে অনন্ত নাগের উপর থীম।লন্ডনের ব্রিজ থেকে সেভড্রাইভ সেভলাইভ,ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার সচেতনতা প্রতিকি তুলে ধরেছেন দর্শকদের সামনে।২৫ শে ডিসেম্বরের ন্যায় লক্ষ্মী পূজার আনন্দে মেতেছেন খাঁড়ি পাড়ার খ্রিষ্টান পল্লির শতাধিক পরিবার।নতুন পোষাক হোক কিংবা আত্মীয় পরিজনদের সমাগম এই পূজাতেই লক্ষ করা যায় দক্ষিন সুন্দরবনের রায়দিঘিতে। তাদের আজও ভরসা আজোও বিশ্বাস ।এসোমা লক্ষ্মী বসো ঘরে আমারো ঘরে থেকো আলো করে। সেই বিশ্বাসে পূজিত হন ধনদেবী মা লক্ষ্মী।
আরও পড়ুনঃ সিংহ বাড়ীর ৩৯ বছরের লক্ষ্মী পূজা
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584